আজকাল অল্প বয়সেই শরীরে বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগ জাঁকিয়ে বসছে। অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভাস, শরীরচর্চার অভাব, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা সহ বিভিন্ন কারণে ক্রমশ অসুখ-বিসুখের কবলে পড়ছেন কমবয়সিরাও। যার মধ্যে অন্যতম শরীরে ভিটামিনের ঘাটতি। এখনকার ব্যস্ততার জীবনে কারওর পক্ষেই খুব একটা সঠিক ডায়েট মেনে খাওয়া-দাওয়া সম্ভব হয়। তাই বিভিন্ন বয়সের মানুষের শরীরে দেখা যায় ভিটামিনের অভাব। আসলে পর্যাপ্ত কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট আর প্রোটিনের ঘাটতি নিয়ে সতর্ক থাকলেও, ভিটামিনের প্রতি অবহেলার শেষ নেই। কিন্তু দিব্যি সুস্থ মানুষও যে ভিটামিনের অভাবে বড় রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।
শরীরে ভিটামিনের খাটতি রয়েছে কিনা তা প্রাথমিকভাবে বোঝা মুশকিল। কিন্তু জানেন কি ভিটামিনের অভাবে পায়ের ব্যথা, অবশভাব, ঝিনঝিন অনুভূতি কিংবা হাঁটার সময় ভারসাম্য হারানোর সমস্যাতেও ভুগতে পারেন। অনেকেই মনে করেন, সাধারণ ক্লান্তি বা বয়ঃসন্ধিজনিত সমস্যা। কিন্তু চিকিৎসকদের মতে, এমন উপসর্গের পিছনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিনের অভাব দায়ী হতে পারে, যা হল ভিটামিন বি১২।
আরও পড়ুনঃ পুজোর আগে ছিপছিপে চেহারা চান? সহজ কটি নিয়ম মানলেই কয়েক দিনে কমবে বাড়তি মেদ
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিটামিন বি১২ স্নায়ু ও রক্তের জন্য অত্যন্ত জরুরি। এর অভাব হলে স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং স্নায়ুর স্বাভাবিক সংকেত মস্তিষ্কে পৌঁছায় না। ফলে পায়ে অবশ ভাব ও ব্যথা, ঝিনঝিন বা সুচ ফোটার মতো অনুভূতি, হাঁটার সময় ভারসাম্য হারানো, পেশিতে দুর্বলতা, অতিরিক্ত ক্লান্তি ও অবসাদ, রক্তাল্পতা ও স্মৃতিশক্তি কমে যেতে পারে। চিকিৎসকরা জানান, দীর্ঘদিন ভিটামিন বি১২-এর ঘাটতি থাকলে স্নায়ু ক্ষতি স্থায়ীও হতে পারে। ফলে হাঁটার ক্ষমতাও প্রভাব পড়তে পারে।
শুধু বি১২ নয়, পায়ের নানা সমস্যার কারণে ভিটামিন ডি-র ঘাটতিও দায়ী হতে পারে। ভিটামিন ডি শরীরের হাড় ও পেশি মজবুত রাখতে সাহায্য করে। এর অভাব হলে অস্টিওম্যালেসিয়া নামে একটি সমস্যা তৈরি হয়, যেখানে হাড় নরম হয়ে যায় এবং পেশিতে ব্যথা ও দুর্বলতা দেখা দেয়। অনেক সময় কোমড় ও উরুর পেশি দুর্বল হয়ে পড়ায় হাঁটতে বিশেষ অসুবিধা হয়।

এছাড়াও ভিটামিন বি১ (থিয়ামিন) ঘাটতির কারণে বেরিবেরি রোগ হয়। এতে পায়ে তীব্র ব্যথা ও স্নায়বিক সমস্যা দেখা যায়। ভিটামিন ই-র ঘাটতিতে স্নায়ুর দুর্বলতা দেখা দেয়, ফলে হাঁটাচলায় অসুবিধা হয়। আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম ও পটাসিয়ামের ঘাটতিও পায়ে দুর্বলতা ও ব্যথার কারণ হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিটামিন বি১২ ও ডি-এর ঘাটতি এড়াতে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা জরুরি। ভিটামিন বি১২-এর উৎস মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার। ভিটামিন ডি-এর অভাব হলে ডায়েটে পর্যাপ্ত পরিমাণে মাছ, ডিমের কুসুম এবং কিছু ভিটামিন-ডি সমৃদ্ধ খাবার রাখুন। যদি কারও দীর্ঘদিন ধরে পায়ের ব্যথা, অবশভাব, হাঁটতে কষ্ট, অতিরিক্ত ক্লান্তি ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
