আজকাল ওয়েবডেস্ক: পরিবার পরিকল্পনার ক্ষেত্রে সচেতনতার অভাব ও স্বাস্থ্য পরিষেবার দুর্বলতাকে সামনে এনে বিতর্ক তৈরি করল দক্ষিণ দিনাজপুরের একটি ঘটনা। বোলদু গ্রামের একটি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে হঠাৎ চড়াও হয়ে পড়েন এক মধ্যবয়সী মদ্যপ ব্যক্তি। অভিযোগ, সরকার থেকে বিতরণ করা কন্ডোম ব্যবহার করেও দু’বার তার স্ত্রী গর্ভবতী হয়ে পড়েছেন।
ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, লুঙ্গি ও স্যান্ডো গেঞ্জি পরা এক ব্যক্তি টলমল অবস্থায় চিৎকার করছেন। তাঁর স্পষ্ট অভিযোগ, “দু’বার কন্ডোম ব্যবহার করলাম, দু’বারই বউ প্রেগন্যান্ট! সরকার কি আমাদের বোকা বানাচ্ছে?” ক্যামেরার অন্য প্রান্তে থাকা এক মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীকে দেখা যায় শান্তভাবে পরিস্থিতি সামলাতে। তাঁকে বলতে শোনা যায়, “আমি কন্ডোম তৈরি করি না। আপনি সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।”
আরও পড়ুন: সুখী প্রেম, অথচ শয্যায় অতৃপ্তি: যৌনচাহিদায় 'হাবাগোবা' বয়ফ্রেন্ডেকে নিয়ে দোটানায় তরুণী
যুবকের অভিযোগ, বারবার “ফলস খাচ্ছেন” তিনি। ফলে প্রচুর টাকা খরচ করে গর্ভপাত করাতে হয়েছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্মীরা তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করলেও তাতে কান দেননি তিনি। বাধ্য হয়ে স্বাস্থ্যকর্মী স্থানীয় পুলিশ ডাকতে বাধ্য হন। এই ভিডিও ছড়িয়ে পড়তেই শুরু হয় বিতর্ক। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই হাস্যকর হিসেবে দেখলেও, অন্য অংশ বলছেন— এই ঘটনায় সরকারি জন্মনিয়ন্ত্রণ পরিষেবার গুণমান এবং ব্যবহার-বিষয়ক সচেতনতা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে।
জন্মনিয়ন্ত্রণ ও সরকারি উদ্যোগ
ভারতের পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি শুরু হয় ১৯৫২ সালে। এটি ছিল বিশ্বের প্রথম রাষ্ট্র-চালিত জন্মনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি। বর্তমানে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার যৌথভাবে কন্ডোম, জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি, কপার-টি, ইনজেকটেবল পদ্ধতি, মহিলা ও পুরুষের স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ (NSV ও Tubectomy) ইত্যাদি পদ্ধতির সুবিধা নাগরিকদের বিনামূল্যে দিয়ে থাকে।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার "মিশন পরিবার বিকাশ" কর্মসূচির মাধ্যমে উচ্চ জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারবিশিষ্ট জেলাগুলিতে টার্গেটেড ইন্টারভেনশন চালাচ্ছে। এছাড়া কন্ডোমের যথাযথ ব্যবহার সম্পর্কে প্রচার চালাতে ‘Condom Use Education Program’ চালু হয়েছে। তবে, গ্রামের পরিধিতে এখনও সচেতনতার অভাব এবং ব্যবহারবিধি না বোঝার ফলে অনেক সময় ফলপ্রসূ হয় না এই কর্মসূচিগুলি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কন্ডোম ফেটে যাওয়া বা ব্যর্থতার প্রধান কারণ হলো ভুলভাবে সংরক্ষণ, এক্সপায়ারি পণ্য ব্যবহার, ত্রুটিপূর্ণ ব্যবহার অথবা ধারাবাহিক ব্যবহারের সময় ভুল করা। তাই শুধু সরবরাহ নয়, প্রয়োগ ও শিক্ষার ক্ষেত্রেও জোর দেওয়া জরুরি। এই ঘটনাটি যেমন একদিকে হাস্যরসের খোরাক, তেমনই স্বাস্থ্য পরিষেবার বাস্তব সংকটকেও সামনে এনেছে। সরকার ও সমাজ— দুই পক্ষের দায়িত্ব নিয়ে এই বিষয়ে একটি দীর্ঘমেয়াদি সচেতনতা তৈরির দাবি তুলছেন বিশেষজ্ঞরা।
