আজকাল ওয়েবডেস্ক: সাধারণত বিষধর শব্দটি কানে এলেই মনে পড়ে সাপের কথা, কিংবা আর একটু ভাবলে কাঁকড়াবিছে, মাকড়সা ইত্যাদি। কিন্তু জানেন কি সমুদ্রের অতলে লুকিয়ে রয়েছে এমন এক প্রাণী যার বিষ এতটাই তীব্র যে সেই বিষ ২৬ জন মানুষকে মেরে ফেলতে পারে মাত্র এক মিনিটে? আর সেই বিষের কোনও প্রতিষেধক নেই। অর্থাৎ একবার যদি এই বিষ শরীরে ঢোকে তবে পঞ্চত্বপ্রাপ্তি একেবারে নিশ্চিত। অথচ প্রাণীটি দেখতে বড় সুন্দর। ভয়ংকর সুন্দর সেই প্রাণীটির নাম হল ব্লু রিংড অক্টোপাস।
আরও পড়ুন: পাড়ার বৌদিদের অন্তর্বাস চুরি একের পর এক! চোরকে সামনে পেয়ে এ কী করলেন মহিলারা?
কিন্তু কেন এত ভয়ঙ্কর এই অক্টোপাস? আসলে এই অক্টোপাসে থাকে বিশেষ কিছু বিরল রাসায়নিক যৌগের সংমিশ্রণ। এই মিশ্রণটিকে বলা হয় টেট্রোডোটক্সিন বা টিটিএক্স। মিশ্রণটি আসলে এমন এক ধরনের নিউরোটক্সিন বিষ। এই নিউরোটক্সিন বিষ প্রাণীর স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রমণ করে এবং যেকোনও প্রাণীকে পক্ষাঘাতগ্রস্ত করে দিতে পারে। এমনকী মানুষকেও। অনেকেই জানেন জাপানে এক ধরনের গোলাকৃতি বিষাক্ত মাছ পাওয়া যায়। এই মাছটির নাম পাফার ফিস কারণ আক্রান্ত হলেই এই মাছ দেহটিকে ফুলিয়ে বেলুনের মতো করে ফেলে। জাপানিরা একে বলেন ফুগু। সাধারণত মারাত্মক দক্ষ কোনও রাঁধুনি ছাড়া এই মাছ রান্না করতে দেওয়া হয় না। তার কারণ এই মাছটিতেও থাকে এই টেট্রোডোটক্সিন বিষ। ঠিকমতো রান্না না করা হলে এই বিষ মানুষের পেটে চলে যেতে পারে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মৃত্যু হতে পারে।
মনে পড়ে কীভাবে আগেকার দিনে বিপ্লবীরা সায়ানাইড বিষ সঙ্গে করে ঘুরতেন? যাতে ব্রিটিশদের হাতে ধরা পড়লেই তাঁরা সেই বিষ পান করে মৃত্যুবরণ করতে পারেন। বিশেষজ্ঞ টা জানাচ্ছেন এই টেট্রোডোটক্সিন বিষ ভয়ানক সায়ানাইড-এর চেয়েও ১২০০ গুণ বেশি শক্তিশালী। পাশাপাশি এই বিষের কোন প্রতিষেধকও নেই।

সমুদ্র বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন পৃথিবীতে মোট চার ধরনের নীল রিংওয়ালা অক্টোপাস পাওয়া যায়। আর তাদের প্রতিটির দেহেই মেলে এই ভয়ানক বিষ। সারা পৃথিবীতে এরাই সবচেয়ে বিষধর অক্টোপাস। বিখ্যাত ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের গবেষকরা জানাচ্ছেন, কমবেশি সব ধরনের অক্টোপাসেই কিছু না কিছু বিষ থাকে। তার কোনওটি মানুষের পক্ষে বিপজ্জনক নয় কোনওটি আবার প্রাণঘাতী। এই নীল রিং ওয়ালা অক্টোপাসগুলি অল্প জলে থাকে। তাই খাদ্য শৃঙ্খলের উপরের দিকে থাকা অন্যান্য প্রাণী তাদের খাওয়ার বা আক্রমণের চেষ্টা করে। এই আক্রমণের থেকে বাঁচতেই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে তাদের দেহে গড়ে উঠেছে বিষের ভান্ডার।
আরও পড়ুন: পাড়ার বৌদিদের অন্তর্বাস চুরি একের পর এক! চোরকে সামনে পেয়ে এ কী করলেন মহিলারা?
অস্ট্রেলিয়ান ইনস্টিটিউট অফ মেরিন সাইন্স-এর গবেষণা জানাচ্ছে। অক্টোপাসের দেহ থেকে নির্গত হলেও এই বিষ আসলে তৈরি হয় একটি ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে। অক্টোপাসটির লালা গ্রন্থিতে এক ধরনের বিশেষ ব্যাকটেরিয়া থাকে। এই ব্যাকটেরিয়াগুলির প্রভাবেই উৎপন্ন হয় বিষ। এই বিষে হিস্টামিন, অ্যাসিটাইলকোলিন এবং ডোপামিনের মত বিভিন্ন উপাদান থাকে। উপাদানগুলি সম্মিলিতভাবে মানুষের স্নায়ুতে সোডিয়ামের চলাচল বন্ধ করে দেয়। ফলত মস্তিষ্ক দেহের আর কোনও অংশকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। আচমকাই বন্ধ হয়ে যায় হৃদযন্ত্রের স্পন্দন কিংবা ফুসফুসের ওঠানামা।

চাঁদের পাহাড়ের শংকর আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ দেখে সেটিকে আখ্যা দিয়েছিল ভয়ংকর সুন্দর বলে। এই অক্টোপাসটিকে দেখেও বিজ্ঞানীদের বিস্মিত চোখ যেন তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিভিন্ন রঙে রঙিন এই অক্টোপাস পাওয়া যায় প্রশান্ত মহাসাগর এবং ভারত মহাসাগরে। ৬৬ থেকে ১৬৪ ফিট সমুদ্রের গভীরে এদের বসবাস। অর্থাৎ মিটারের হিসাবে ২০ থেকে ৫০ মিটার। আকারের দিক থেকেও এরা খুব বেশি বড় নয়। সাধারণত ৫ থেকে ৯ ইঞ্চি দৈর্ঘ্য হয় এই অক্টোপাসের।