আজকাল ওয়েবডেস্ক: ব্রিটেন সফর সেরে বর্তমানে মলদ্বীপ সফরে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই বছর দ্বীপরাষ্ট্রটিতে তাঁর আগমন বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। শুধুমাত্র মলদ্বীপের ৬০তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপনে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কারণেই নয়, বরং এটি দুই দেশের মধ্যে কূটনীতির সম্পর্কে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের চিহ্নও বটে।
২০২৩ সালে মলদ্বীপের রাষ্ট্রপতি মহম্মদ মুইজ্জু ক্ষমতায় আসার পরেই 'ইন্ডিয়া আউট' প্রচার তীব্রতর হয়েছিল। যা প্রাথমিকভাবে শুরু করেছিলেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি আবদুল্লাহ ইয়ামিনের। মলদ্বীপে ভারতীয় প্রভাব হ্রাস করার জন্য এই আন্দোলনটি মুইজ্জুর নির্বাচনী কৌশলের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিল।
Landed in Malé. Deeply touched by the gesture of President Muizzu to come to the airport to welcome me. I am confident that India-Maldives friendship will scale new heights of progress in the times to come.@MMuizzupic.twitter.com/GGzSTDENsE
নির্বাচনী প্রচার শেষ এবং ক্ষমতায় আসার পর মুইজ্জুর সুর বদলে যেতে শুরু করে। সেই পরিবর্তনের প্রথম লক্ষণ দেখা যায় দুবাইতে জাতিসংঘের COP28 জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনের সময়। সেখানে তিনি প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। সেই বৈঠকটি এই বর্তমান সফরের ভিত্তি স্থাপন করেছিল এবং সম্ভবত ভারত-মলদ্বীপ সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছিল।
কিন্তু কূটনৈতিক আলোচনার আগে, এক্স-এ একটি ঝড় উঠেছিল যার ফলে মলদ্বীপের পর্যটন ৪২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছিল।
#বয়কটমলদ্বীপ
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে লাক্ষাদ্বীপ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রধানমন্ত্রী মোদির একটি মনোরম পোস্ট দিয়ে এর শুরু। ভারতীয় উপমহাদেশের অন্তর্গত, লাক্ষাদ্বীপ মলদ্বীপের মতোই লাক্ষাদ্বীপ সাগরের দ্বীপপুঞ্জের অংশ।
?utm_source=ig_embed&utm_campaign=loading" target="_blank" rel="noopener">A post shared by Narendra Modi (@narendramodi)
সেই পোস্টে, প্রধানমন্ত্রী ভারতীয়দের 'দেখো আপনা দেশ' এবং ভারতের নিজস্ব জায়গা অন্বেষণ করতে উৎসাহিত করেছিলেন। কিন্তু এই সহজ বার্তাটি অন্য দিকে মোড় নেয়। মলদ্বীপের নেতাদের কিছু অপ্রাসঙ্গিক মন্তব্য বিতর্ক তৈরি করে। এর পরেই ভারতীয়রা #বয়কটমলদ্বীপ এবং #ভিজিটলাক্ষাদ্বীপ সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেন্ডিং করে তোলেন।
সমাজমাধ্যমের বাইরেও এই ট্রেন্ড ছড়িয়ে পড়ে। ইজমাইট্রিপ, মেকমাইট্রিপ, ইক্সিগো-র মতো ভ্রমণকারী সংস্থাগুলি মলদ্বীপের বুকিং নেওয়া বন্ধ করে দেয়ে। লাক্ষাদ্বীপের পর্যটনস্থলের খোঁজ ৩৪০০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়ে যায় অ্যাপগুলিতে।
এছাড়াও, ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্স (আইসিসি) ভারতীয় সংস্থাগুলির কাছে আবেদন করে যাতে তারা মলদ্বীপের প্রচার বন্ধ করে এবং লাক্ষাদ্বীপ, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, শ্রীলঙ্কা, মরিশাস এবং অন্যান্য আঞ্চলিক গন্তব্যস্থলের প্রচারে জোর দেওয়া হয়।
২০২৪ সালে, মলদ্বীপে ভারতীয় পর্যটকদের আগমন ২০২৩-এর তুলনায় প্রায় ৪২% কমেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে মালদ্বীপের পর্যটনের শীর্ষ উৎস হিসেবে ভারত পঞ্চম স্থানে নেমে এসেছে।
২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত, পর্যটন বিপণন, বিমানের বিকল্প বৃদ্ধি এবং সেলিব্রিটিদের প্রচারের কারণে ভারতীয় পর্যটকদের আগমন বৃদ্ধি পেয়েছিল। ২০২২ সালে প্রায় আড়াই লক্ষ পর্যটক মলদ্বীপে ঘুরতে গিয়েছিলেন। যা সর্বকালের সর্বোচ্চ ভারতীয় পর্যটকের রেকর্ড।
২০২৪ সালের গোড়ার দিকে, মলদ্বীপের মোট পর্যটকে মধ্যে ভারতীয় পর্যটকের সংখ্যা মাত্র ৫ শতাংশে নেমে আসে। কূটনৈতিক উত্তেজনা, অনলাইন বিতর্ক এবং লাক্ষাদ্বীপকে ঘিরে বিকল্প প্রচার এই পতনের নেপথ্যে অবদান রেখেছিল।
তবে, প্রধানমন্ত্রীর সরকারি সফর এবং সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য উভয় দেশের নতুন প্রচেষ্টার ফলে আশার আলো তৈরি হয়েছে। মলদ্বীপের পর্যটন মন্ত্রক উচ্চাভিলাষী বিপণনের মাধ্যমে ভারতীয় ভ্রমণকারীদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে চলেছে। নতুন বিমান রুট নিয়ে আবারও আলোচনা হচ্ছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে এয়ার ইন্ডিয়া মুম্বই এবং দিল্লি থেকে মলদ্বীপে প্রতিদিনের ফ্লাইট চালু করেছে।
কিছু ভারতীয় ভ্রমণ সংস্থা আবারও আক্রমণাত্মক প্রচার শুরু করেছে। তিন রাত থাকার জন্য ৩৮ হাজার টাকা থেকে শুরু করে বিশেষ প্যাকেজও দেওয়া হচ্ছে।
তবে, পর্যটকদের সংখ্যা পুরনো ছন্দে ফিরতে সময় লাগবে। যদিও মালদ্বীপ ২০২৫ সালের জন্য তিন লক্ষেরও বেশি ভারতীয় পর্যটক আকর্ষণের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল। বর্তমান প্রবণতা ইঙ্গিত দিচ্ছে যে সেই লক্ষ্যের অর্ধেকও ফিরে পেতে কয়েক বছর সময় লাগতে পারে।