আজকাল ওয়েবডেস্ক: ৪০ আলোকবর্ষ দূরের একটি ছোট ও শীতল নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করছে গ্রহ ট্র্যাপিস্ট-১। নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, এই পৃথিবী-সদৃশ গ্রহটির চারপাশে হয়তো একটি বায়ুমণ্ডল বিদ্যমান। জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ দিয়ে গ্রহটি যখন তার নক্ষত্রের সামনে দিয়ে অতিক্রম করে, তখন চারবার পর্যবেক্ষণ করা হয়। সেই তথ্য থেকেই বিজ্ঞানীরা গ্রহটির বায়ুমণ্ডলের সম্ভাব্য চিহ্ন খুঁজে পান।
প্রাথমিকভাবে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত করেছেন যে গ্রহটির চারপাশে হাইড্রোজেন-প্রধান ঘন বায়ুমণ্ডল নেই। তবে এখনও সুনির্দিষ্টভাবে বলা সম্ভব নয় সেখানে ঠিক কী ধরনের গ্যাস আছে, বা আদৌ টেকসই বায়ুমণ্ডল রয়েছে কিনা। এই গবেষণা পরিচালনা করেছেন স্পেস টেলিস্কোপ সায়েন্স ইনস্টিটিউটের নেস্তর এসপিনোজা ও জেডব্লিউএসটির টেলিস্কোপ সায়েন্টিস্ট টিম।
ট্র্যাপিস্ট-১ একটি রেড ডোয়ার্ফ স্টার। আকারে ছোট, তুলনামূলক ঠান্ডা হলেও এটি প্রায়ই জ্বলে ওঠে বা দাগ তৈরি করে। এই পরিবর্তনশীল আচরণ বায়ুমণ্ডল খুঁজে বের করার কাজে জটিলতা তৈরি করে। কারণ নক্ষত্রের আলোয় এই ওঠানামা অনেক সময় গ্রহের সংকেতকে ঢেকে দেয় বা বিভ্রান্ত করে। ট্র্যাপিস্ট-১ই নক্ষত্রের বাসযোগ্য অঞ্চলে অবস্থিত, যেখানে জল থাকার মতো চাপ ও তাপমাত্রা বিদ্যমান হতে পারে। তবে নক্ষত্রের ঘন ঘন বিস্ফোরণ যে কোনও বায়ুমণ্ডলকে সময়ের সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
আরও পড়ুন: কঙ্গোতে নতুন ইবোলার প্রাদুর্ভাব, সতর্ক বিশ্বের সমস্ত দেশ
গ্রহটি যখন নক্ষত্রের সামনে দিয়ে যায়, তখন কিছু আলো তার বায়ুমণ্ডল ভেদ করে আসে। এই আলোর মধ্যেই লুকিয়ে থাকে গ্যাসের আণবিক “ফিঙ্গারপ্রিন্ট”। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় ট্রান্সমিশন স্পেকট্রোস্কপি। ওয়েবের NIRSpec যন্ত্র দিয়ে ২০২৩ সালে চারবার এমন ট্রানজিট রেকর্ড করা হয়, যেখানে জলের বাষ্প, মিথেন বা কার্বন-ডাই-অক্সাইডের চিহ্ন খোঁজা হয়।
যদি হাইড্রোজেনসমৃদ্ধ প্রাথমিক বায়ুমণ্ডল থাকত, তবে তা স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান হত। কিন্তু বর্তমান ডেটা তা বাতিল করেছে। এর ফলে এখন বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, হয়তো গ্রহটিতে নাইট্রোজেন-সমৃদ্ধ ভারী গ্যাসের দ্বিতীয়িক বায়ুমণ্ডল রয়েছে যা পৃথিবীর মতোই দীর্ঘস্থায়ী চাপ বজায় রাখতে সক্ষম। তবে একে নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না, কারণ এখনও এটি বায়ুহীন পাথুরে গ্রহ হওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
নক্ষত্রের অস্থিরতা যেন ভুল সংকেত না দেয়, তাই বিজ্ঞানীরা ব্যবহার করেছেন Gaussian Processes, এক ধরনের পরিসংখ্যানিক মডেল। এটি নক্ষত্রের আলোর স্বাভাবিক ওঠানামা চিনে নিয়ে তা বাদ দেয়, আর বারবার দেখা দেওয়া প্যাটার্নকে গ্রহের সম্ভাব্য সংকেত হিসেবে ধরে রাখে।
বায়ুমণ্ডল থাকা মানেই জীবন নয়, তবে এটি গ্রহের তাপমাত্রা ও পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করে। এমআইটির গবেষক আনা গ্লিডেন বলেন, “আমরা ধরে নিচ্ছি গ্রহটি সম্পূর্ণ বায়ুহীন নয়। তাহলে কী ধরনের বায়ুমণ্ডল থাকতে পারে? সেগুলো কি পৃষ্ঠে জল থাকার সুযোগ তৈরি করে?”
অন্যদিকে সেন্ট অ্যান্ড্রুজ বিশ্ববিদ্যালয়ের রায়ান ম্যাকডোনাল্ড যোগ করেন, “সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ সম্ভাবনা হল, ট্র্যাপিস্ট-১ই হয়তো নাইট্রোজেন-সমৃদ্ধ ভারী বায়ুমণ্ডল ধারণ করছে। তবে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এটি হয়তো কেবল বায়ুশূন্য শিলা-গ্রহও হতে পারে।”
জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের প্রথম দফার পর্যবেক্ষণ ট্র্যাপিস্ট-১ই সম্পর্কে বহু প্রশ্নের উত্তর দিলেও, আরও গবেষণা প্রয়োজন। ভবিষ্যতে আরও ট্রানজিট পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণই বলে দেবে— এই দূরবর্তী গ্রহটি সত্যিই বাসযোগ্য কিনা।
