আজকাল ওয়েবডেস্ক:  গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গো আবারও ইবোলা প্রাদুর্ভাব ঘোষণা করেছে। এবারের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে কাসাই প্রদেশে এবং এটি সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ধরণ জায়ার ইবোলা ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট।


২০ আগস্ট, এক ৩৪ বছর বয়সী গর্ভবতী নারী হাসপাতালে ভর্তি হন এবং পাঁচ দিন পর মারা যান। তাকে চিকিৎসা দেওয়া দুই স্বাস্থ্যকর্মীও সংক্রমিত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮১ জন, যার মধ্যে ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে; মৃতদের মধ্যে চারজন স্বাস্থ্যকর্মীও রয়েছেন।


ডিআরসি ইতিমধ্যেই ১৫ বার ইবোলার মুখোমুখি হয়েছে। ২০১৯ সালের মহামারী ছিল সবচেয়ে বড় এবং ২০২২ সালে সর্বশেষ প্রাদুর্ভাব ঘটে। এবার জেনেটিক বিশ্লেষণে জানা গেছে, এই সংক্রমণ পূর্ববর্তী কোনও প্রাদুর্ভাবের ধারাবাহিকতা নয়, বরং প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে নতুনভাবে সংক্রমণের মাধ্যমে শুরু হয়েছে।

আরও পড়ুন:  এসবিআই-এর ধামাকা অফার: স্বল্পমেয়াদে বেশি মুনাফার নিশ্চয়তা


ইবোলা প্রথম সনাক্ত হয় ১৯৭৬ সালে  কঙ্গোর ইবোলা নদীর পাশে একটি গ্রামে এবং বর্তমান দক্ষিণ সুদানে। বাদুড় হল ভাইরাসটির প্রধান বাহক। মানুষ সংক্রমিত হতে পারে বাদুড়, শিম্পাঞ্জি, হরিণ বা সজারুর মতো প্রাণীর সংস্পর্শে এসে।


ভাইরাসটি মূলত সংক্রমিত রক্ত বা দেহতরলের সরাসরি সংস্পর্শে ছড়ায়। সংক্রমণের পর উপসর্গ দেখা দিতে ২ থেকে ২১ দিন সময় লাগে। প্রথমে জ্বর, দুর্বলতা, মাংসপেশির ব্যথা, মাথাব্যথা ও গলা ব্যথা দেখা দেয়। পরে বমি, ডায়রিয়া, পেটব্যথা, ত্বকে র্যারশ, রক্তপাত ও শকের মতো গুরুতর সমস্যা দেখা দেয়। চিকিৎসা না পেলে মৃত্যুহার দাঁড়ায় ৫০% থেকে ৯০% পর্যন্ত।


২০১৪ সালের পশ্চিম আফ্রিকার মহামারীতে ৮০০-র বেশি স্বাস্থ্যকর্মী সংক্রমিত হয়েছিলেন, যার মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ মারা যান। সংক্রমণের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি পরিবারে, হাসপাতালে এবং বিশেষত শেষকৃত্যের সময়, যখন মৃতদেহ ধোয়া বা ছোঁয়ার প্রথা পালিত হয়।


ইবোলায় বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের শরীরে ভাইরাস দীর্ঘদিন লুকিয়ে থাকতে পারে। মস্তিষ্ক, চোখ বা শুক্রাণুর মতো জায়গায়। বিরল ক্ষেত্রে ভাইরাস “পুনরায় সক্রিয়” হয়ে নতুন সংক্রমণ ঘটাতে পারে। ডিআরসি বর্তমানে ইবোলার পাশাপাশি মাঙ্কিপক্স, কলেরা এবং হাম মোকাবিলায় ব্যস্ত। 


এই প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে ব্যবহার করা হচ্ছে এরভেবো ভ্যাকসিন যা সংক্রমণের পরপরই দিলে ১০০% কার্যকর। ১২ দিন পর দিলে কার্যকারিতা ৯৫% এবং এই পরিস্থিতিতে ৮৪% ফলপ্রসূ প্রমাণিত হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতিমধ্যেই ৪০০ ডোজ পাঠিয়েছে, আরও পাঠানো হবে। “রিং ভ্যাকসিনেশন” কৌশলে আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসা মানুষদের এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকা দেওয়া হচ্ছে। ইবোলা প্রতিরোধে প্রয়োজন দ্রুত রোগী আলাদা করা। সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের খোঁজ ও কোয়ারেন্টাইন করা। পর্যাপ্ত হাসপাতাল বা ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপন করা। নিরাপদ শেষকৃত্যের ব্যবস্থা করা। স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য পর্যাপ্ত সুরক্ষা সামগ্রী দরকার।


এছাড়া প্রাথমিক সাপোর্টিভ কেয়ার  যেমন শরীরে তরল ও ইলেকট্রোলাইট পূরণ, মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি ওষুধ ব্যবহারে রোগীর প্রাণ বাঁচানোর সুযোগ বাড়ে। তবে এখনও সমস্যা রয়ে গেছে।   ডিআরসি-তে নতুন ইবোলা প্রাদুর্ভাব জনস্বাস্থ্যের জন্য এক বিশাল চ্যালেঞ্জ। সময়মতো টিকাদান, দ্রুত শনাক্তকরণ এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতাই কেবল এই প্রাণঘাতী ভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করতে পারে।