আজকাল ওয়েবডেস্ক: স্যাটেলাইট আজকের আধুনিক জীবনের মেরুদণ্ড। নেভিগেশন, যোগাযোগ, প্রতিরক্ষা থেকে শুরু করে জলবায়ু পর্যবেক্ষণ। সবকিছুতেই স্যাটেলাইটের ভূমিকা অপরিহার্য। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মহাকাশ দখলের বিশ্বের প্রতিযোগিতা আরও তীব্র হয়েছে। খুব কম সংখ্যক দেশই এই দৌড়ে এগিয়ে আছে, যারা প্রচুর কার্যকরী স্যাটেলাইট কক্ষপথে পরিচালনা করছে। কোন কোন দেশ সবচেয়ে বড় স্যাটেলাইট বহরের মালিক, তা পর্যবেক্ষণ করলে একদিকে যেমন প্রযুক্তিগত সক্ষমতার ছবি স্পষ্ট হয়, অন্যদিকে ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব ও কৌশলগত অগ্রাধিকারও পরিষ্কার হয়ে ওঠে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সাতটি দেশ বর্তমানে আকাশ দখলে শীর্ষে রয়েছে, আর এই তালিকায় ভারতের অবস্থান তাৎপর্যপূর্ণ।


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশাল ব্যবধানে শীর্ষে রয়েছে। বর্তমানে তাদের কক্ষপথে সক্রিয় স্যাটেলাইটের সংখ্যা প্রায় ৮,৫৩০। এর মধ্যে শুধু স্টারলিংক প্রকল্পের স্যাটেলাইটই ৭,৪০০-এর বেশি। সরকারি ও বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রের স্যাটেলাইট মিলিয়ে আমেরিকার আধিপত্য শুধু সংখ্যার দিকেই নয়, প্রয়োগের বৈচিত্র্যের দিক থেকেও অনন্য। সামরিক, বৈজ্ঞানিক ও বাণিজ্যিক—সব ক্ষেত্রেই তারা আধিপত্য বিস্তার করছে।


রাশিয়া
দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে রাশিয়া, যার সক্রিয় স্যাটেলাইট সংখ্যা প্রায় ১,৫৫৯। এদের মধ্যে বেশিরভাগই যোগাযোগ, পৃথিবী পর্যবেক্ষণ ও সামরিক ব্যবহারের জন্য। আগামী দশকে রাশিয়ার পরিকল্পনা হল প্রতিরক্ষা ও নেভিগেশন খাতে আরও স্যাটেলাইট যুক্ত করা।

আরও পড়ুন:  সহজে লোনের ফাঁদে পা দেবেন না, মেনে চলুন এই নিয়মগুলি


চীন
চীনের বর্তমানে কক্ষপথে ৯০৬টি স্যাটেলাইট রয়েছে। এই বছর ব্যবহৃত হচ্ছে BeiDou নেভিগেশন সিস্টেম, রিমোট সেন্সিং, যোগাযোগ এবং প্রতিরক্ষা উদ্দেশ্যে। চীন প্রতি বছর অসংখ্য উৎক্ষেপণের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়াকে চ্যালেঞ্জ করছে।


যুক্তরাজ্য
চতুর্থ স্থানে রয়েছে যুক্তরাজ্য, যাদের কক্ষপথে সক্রিয় স্যাটেলাইটের সংখ্যা প্রায় ৭৬৩। গোয়েন্দাগিরি, নজরদারি, যোগাযোগ, বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে এ স্যাটেলাইটগুলো ব্যবহৃত হয়। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি শক্তিশালী বেসরকারি খাতও যুক্তরাজ্যের মহাকাশ কার্যক্রমকে সমৃদ্ধ করেছে। 


জাপান
জাপানের বর্তমানে সক্রিয় স্যাটেলাইট সংখ্যা ২০৩। তাদের বহরে রয়েছে Quasi-Zenith Satellite System (QZSS)-এর মাধ্যমে নেভিগেশন, পৃথিবী পর্যবেক্ষণ, বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং সরকারি কার্যক্রমে ব্যবহৃত স্যাটেলাইট। নির্ভরযোগ্যতা ও উদ্ভাবনের সমন্বয় জাপানের মহাকাশ নীতির প্রধান বৈশিষ্ট্য।


ভারত
ভারত বর্তমানে কক্ষপথে সক্রিয় ১৩৬টি স্যাটেলাইট পরিচালনা করছে এবং এই হিসেবে শীর্ষ দেশগুলোর তালিকায় সপ্তম স্থানে রয়েছে। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ISRO), বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে এই বহর গড়ে উঠেছে। ভারতের উপস্থিতি এখন বিশ্বের মহাকাশ প্রতিযোগিতায় অনেকটা এগিয়ে, যা ভবিষ্যতে আরও বিস্তৃত হওয়ার ইঙ্গিত দেয়।


ফ্রান্স
ফ্রান্সের সক্রিয় স্যাটেলাইট সংখ্যা ১০০-এর বেশি। এর মধ্যে রয়েছে সামরিক গোয়েন্দাগিরি, পৃথিবী ইমেজিং ও মহাকাশ প্রতিরক্ষা পরীক্ষামূলক স্যাটেলাইট। পাশাপাশি, ইউরোপীয় উদ্যোগের সঙ্গেও ফ্রান্স ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত, যা মহাদেশটির সম্মিলিত মহাকাশ সক্ষমতাকে শক্তিশালী করছে।


আধুনিক বিশ্বে স্যাটেলাইট শক্তির দৌড় কেবল প্রযুক্তিগত নয়, বরং কৌশলগত ও রাজনৈতিক প্রভাবেরও প্রতিফলন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেমন ব্যাপক ব্যবধানে নেতৃত্ব দিচ্ছে, তেমনি রাশিয়া ও চীনও প্রতিনিয়ত অবস্থান শক্ত করছে। যুক্তরাজ্য ও জাপান তাদের নিজস্ব উদ্ভাবনী কৌশল নিয়ে এগিয়ে চলেছে। আর ভারত, তুলনামূলকভাবে কম সংখ্যক স্যাটেলাইট থাকা সত্ত্বেও, দ্রুত গতিতে উন্নতি করছে এবং  মহাকাশে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসেবে উঠে আসছে।