আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিজ্ঞানীরা অবশেষে খুঁজে বের করেছেন উদ্ভিদ কীভাবে তৈরি করে মিত্রাফাইলিন। এটি প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন জৈব যৌগ, যার শক্তিশালী অ্যান্টি-টিউমার ও অ্যান্টি-ক্যান্সার গুণ রয়েছে। বহুদিন ধরে এই যৌগটি চিকিৎসাবিজ্ঞানে বিশেষ আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু ছিল, কারণ এটি শরীরে ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধ করতে সক্ষম বলে প্রমাণিত হয়েছে। এবার কানাডা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ গবেষণায় প্রকাশ পেয়েছে, উদ্ভিদ কী উপাদান ব্যবহার করে এবং কীভাবে এই জটিল রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মিত্রাফাইলিন তৈরি করে।
গবেষকরা বলছেন, এই প্রক্রিয়াটি শনাক্ত হওয়ার ফলে এখন ল্যাবরেটরিতে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে মিত্রাফাইলিন তৈরি করা সম্ভব হবে। এতে প্রাকৃতিক উৎস থেকে এই অতি বিরল যৌগ আহরণের প্রয়োজন হবে না এবং এটি ওষুধ তৈরিতে আরও সহজলভ্য হয়ে উঠবে।
মিত্রাফাইলিন একটি বিরল শ্রেণির যৌগ, যার বৈশিষ্ট্য হল জটিল, পাকানো আংটির মতো রাসায়নিক গঠন। এই ধরনের অণু জীববিজ্ঞানে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে, কারণ তারা কেবল ক্যান্সার-বিরোধী নয়, বরং প্রদাহনাশক হিসেবেও কার্যকর। তবে প্রকৃতিতে এই যৌগ অতি ক্ষুদ্র পরিমাণে পাওয়া যায়—মূলত ট্রপিকাল অঞ্চলের কফি পরিবারভুক্ত গাছ যেমন ক্রাটম প্রজাতির গাছে।
আরও পড়ুন: বিশ্বের আধুনিক যুদ্ধবিমানের নতুন বিপ্লব, রয়েছে কোন শক্তি
গবেষণায় দেখা গেছে, উদ্ভিদ দুটি বিশেষ এনজাইম ব্যবহার করে মিত্রাফাইলিন তৈরি করে। এই এনজাইম দু’টি একসঙ্গে কাজ করে অণুটিকে তার অনন্য পাকানো তিন-মাত্রিক আকার প্রদান করে। এর মধ্যে একটি এনজাইম অণুর ৩ডি গঠন বা স্থানিক বিন্যাস নির্ধারণ করে, অন্যটি গঠনটিকে “মোচড়” দিয়ে সম্পূর্ণ করে তোলে—যার ফলে মিত্রাফাইলিনের স্বতন্ত্র কাঠামো তৈরি হয়।
গবেষকরা বলেন—“এটি অনেকটা কোনও উৎপাদন লাইনে হারিয়ে যাওয়া যন্ত্রাংশ খুঁজে পাওয়ার মতো ঘটনা। আমরা এতদিন জানতাম উদ্ভিদ এই জটিল অণুগুলো তৈরি করে, কিন্তু কিভাবে তৈরি করে, তা এক রহস্য ছিল। এখন আমরা সেই ধাপগুলো বুঝতে পারছি।”

এই আবিষ্কারের ফলে গবেষকরা এখন ল্যাবে উদ্ভিদের সেই প্রক্রিয়াটি হুবহু অনুকরণ করতে পারবেন। অর্থাৎ, প্রাকৃতিকভাবে বছর ধরে জমে ওঠা একটি বিরল যৌগকে এখন কয়েক ঘণ্টায় তৈরি করা সম্ভব হবে। এতে গবেষণার খরচ যেমন কমবে, তেমনি টেকসই উপায়ে বিরল জৈব যৌগ উৎপাদনের সুযোগও তৈরি হবে।
গবেষক দলের মতে, এটি কেবল মিত্রাফাইলিন নয়, বরং উদ্ভিদ-উৎপন্ন অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ যৌগ তৈরির দিকেও নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। এই পদ্ধতি ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা ভবিষ্যতে আরও কার্যকর ক্যান্সার ও প্রদাহনাশক ওষুধ তৈরি করতে পারবেন।
এটি কেবল একটি বৈজ্ঞানিক সাফল্য নয়, বরং সবুজ ওষুধ বিপ্লবের পথে এক বড় পদক্ষেপ। প্রকৃতি যেভাবে এই অণুগুলো তৈরি করে, আমরা এখন সেই প্রক্রিয়াটিকে বুঝে নিয়েছি—এবং সেটিই আমাদের নতুন প্রজন্মের ওষুধ তৈরির দিশা দেখাবে।
