আজকাল ওয়েবডেস্ক: অস্থির নেপাল। নেপালের চূড়ান্ত রাজনৈতিক অস্থিরতায় চিন্তা বাড়ছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির ভিতরেও। কিন্তু এই রাজনৈতিক অস্থিরতা, এই সরকার পড়ে যাওয়া, মাঝপথে সরকার বদল কি নেপালে নতুন? 


তথ্য, গত কয়েকবছরে বারে বারে এই অস্থিরতা, এই সরকার বদলে যাওয়ার চূড়ান্ত পরিণাম দেখেছে হিমালয়ের দেশ। ৮ বছরে ১৪টি সরকার গঠনের সাক্ষী সে দেশের বাসিন্দারা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই দফায় সব ক্ষোভের প্রকাশ ঘটেছে একযোগে। বাইরের দেশের উস্কানি, মদত নিয়েও আলোচনা বিস্তর সে দেশে এবং সেই দেশের পরিস্থিতি নিয়ে ভিন দেশেও।

আরও পড়ুন: কুরশিতে বসছেন না কারকি! অন্তবর্তী সরকার চালাতে কুলমনের কাছে জেন জি-রা? নেপালে ছবি বদলাচ্ছে বেলায় বেলায়...

মঙ্গলবার ফের পড়ে যায় নেপাল সরকার, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির পদত্যাগের পর। জেন জি-রা অর্থাৎ বিক্ষোভকারী যুবরা এখন একে একে প্রকাশ্যে আনছেন অন্তবর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে তাঁরা কাকে চাইছেন, তাঁদের নাম। বালেন শাহ, সুশীলা কারকি পেরিয়ে এবার তালিকায় ভাসছে কুলমন ঘিসিং-এর নাম।

নেপালে কখন কবে কীভাবে বদলে গিয়েছিল সরকার? রইল তালিকা-

১৯৫১

১৯৫১ সালের আগে, নেপালে বিভিন্ন রাজবংশের রাজারা শাসন করতেন। ততদিন পর্যন্ত দেশের কুরশিতে যাঁরা বসতেন, তাঁরা বসতেন বংশগতভাবে।  ১৯৫১ সালে গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনের মাধ্যমে রানাদের উৎখাত করা হয় এবং সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। 

১৯৬১-১৯৯০
রাজা মহেন্দ্র ১৯৬১ সালে রাজনৈতিক দলগুলিকে নিষিদ্ধ করেন এবং 'পঞ্চায়েত' নামে পরিচিত একটি কেন্দ্রীভূত সরকার ব্যবস্থায় প্রত্যাবর্তন আরোপ করেন। ১৯৯০ সালে যখন কিছু দল বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য প্রচার শুরু করে এবং বিক্ষোভ দেখায় দেশজুড়ে, ততদিনে পুরনো ব্যবস্থার প্রতি সাধারণের ক্ষোভ-হতাশা চরমে পৌঁছেছে। জনগণের আন্দোলন নামে পরিচিত বিক্ষোভের মুখে পড়ে রাজা বীরেন্দ্রকে রাজনৈতিক দলের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে বাধ্য করে। নেপালে অবসান ঘটে 'পঞ্চায়েত' ব্যবস্থার।

১৯৯৬
নেপালের বামপন্থী মাওবাদীরা রাজকীয় সংসদীয় ব্যবস্থার পরিবর্তে গণপ্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সহিংস প্রচেষ্টা শুরু করে। প্রায় একদশক জুড়ে গৃহযুদ্ধ চলে নেপালে। ১৭,০০০ এরও বেশি মানুষ মারা যান ওই গৃহযুদ্ধে।

২০০৬-২০১৫
২০০৬ সালে নাগরিকরা রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দেখান, যার ফলে ২০০৮ সালে রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হয়, এবং নেপাল একটি ফেডারেল গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়। শেষ রাজা জ্ঞানেন্দ্র রাজধানী কাঠমাণ্ডুতেই একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে পরিচিত হন। ২০১৫ সালে নেপালে নয়া সংবিধান রচিত হয়।

২০১৫-২০২৫
কেপি শর্মা ওলি ২০১৫ সালের অক্টোবরে প্রথমবারের মতো নেপালের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সেই সময় তাঁর সরকারের স্থায়ীত্ব হয় মাত্র এক বছর। তিনি ২০১৮ সালে পুনরায় দেশের প্রধানমন্ত্রী হন, সেই সময়ে তাঁর সরকার চলেছিল প্রায় তিন বছর, ২০২১ সাল পর্যন্ত। ২০২৪ সালে তিনি ফের নেপালের প্রধানমন্ত্রী হন এবং ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে প্রবল বিক্ষোভের মুখে পড়ে তিনি পদত্যাগ করেন। 

এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য-

২০০৭-এর ১ এপ্রিল থেকে ২০০৮-এর ১৮ আগস্ট নেপালে অন্তবর্তীকালীন সরকার ছিল। 

২০০৮-এ নেপালের প্রধানমন্ত্রী হন পুষ্প কুমার দহল। ২৮০ দিন সরকার চালিয়েছিলেন তিনি।

২০০৮-এ সরকারে বসেন মাধব কুমার নেপাল। ১ বছর ২৫৭ দিন চলেছিল সেই সরকার।

২০১১-তে কুরশিতে বসেন ঝালা নাথ, তাঁর সরকার চলেছিল ২০৪ দিন।

২০১২ সালে কুরশিতে বসেন বাবুরাম ভাট্টারাই, ১ বছর ১৯৭ দিন পদে ছিলেন তিনি।

২০১৩-এর মার্চে কুরশিতে বসেন খিল রাজ রেজমি, ৩৩৪ দিন তাঁর শাসনকাল।

২০১৪-এর ফেব্রুয়ারিতে নেপালের কুরশিতে বসেন সুশীল কৈরালা।

২০১৫-এর অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী হন কেপি শর্মা ওলি।

২০১৬-তে ফের পদে ফেরেন পুষ্প কমল দহল।