আজকাল ওয়েবডেস্ক: দখলদার ইজরায়েলি বাহিনী (আইওএফ)-এর অভিযানে নতুন করে দাউদাউ করে জ্বলছে পশ্চিম তীর। কয়েক দশক ধরে দৈনিক অভিযানে অভ্যস্ত প্যালেস্তাইনিরা মনে করেছিলেন, অন্তত রামাল্লা শহরের কেন্দ্র কিছুটা হলেও তুলনামূলকভাবে নিরাপদ। কিন্তু মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) দুপুরের ব্যস্ত সময়ে রামাল্লার কেন্দ্রস্থলে ইজরায়েলি বাহিনীর নজিরবিহীন হামলা সেই ধারণাকে ভেঙে দিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, দুপুরের ঠিক সেই সময়ে যখন মানুষ কেনাকাটা ও অফিস শেষে রাস্তায় ভিড় জমাচ্ছিলেন, তখন ইজরায়েলি সেনারা শহরে প্রবেশ করে নির্বিচারে গুলি চালায়। সাংবাদিকদের গাড়িকেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়। ব্যবহার করা হয় জীবন্ত গুলি, রাবার-কোটেড ইস্পাত বুলেট এবং টিয়ারগ্যাস। ফলে রাস্তাঘাট মুহূর্তে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।

এই সময়ই শহরের কেন্দ্রস্থলে চলছিল শহিদদের মরদেহ উদ্ধারের জাতীয় দিবস উপলক্ষে এক শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি। প্যালেস্তাইনিরা বহুদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন যে, ইজরায়েলের  হাতে আটক রাখা প্রায় ৭০০ থেকে ১৫০০ নিহত প্যালেস্তাইনিদের  মরদেহ অবিলম্বে ফেরত দেওয়া হোক। কিন্তু সেই কর্মসূচিকেও দমন করে ইসরায়েলি বাহিনী। প্যালেস্তাইনি স্বাস্থ্য মন্ত্রকের  তথ্য অনুযায়ী, টানা কয়েক ঘণ্টার এই হামলায় অন্তত ৫৮ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে এক ১৩ বছর বয়সী কিশোর গুরুতরভাবে পেটে গুলিবিদ্ধ হয়। এ ছাড়া শহরের একটি মানি এক্সচেঞ্জ অফিস থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে সেনারা এবং প্রায় ১৫ লক্ষ শেকেল (৪.৪৭ লক্ষ মার্কিন ডলার) নগদ অর্থ বাজেয়াপ্ত করে। অভিযোগ, ওই অর্থ নাকি হামাসের কাছে পাঠানো হচ্ছিল।

আরও পড়ুন: মুখে নেওয়ার আগে সাবধান, জিভে ঠেকলেই মনে হবে ৯ ভোল্টের কারেন্ট, চেখে দেখেছেন নতুন এই চিপস?

পরদিন বুধবার (২৭ আগস্ট) উত্তর পশ্চিম তীরের নাবলুস শহরে নতুন করে অভিযান চালায় ইজরায়েলি সেনারা। শহরের পুরনো অংশ ঘিরে টানা ১৪ ঘণ্টা অবরোধ চলতে থাকে। স্থানীয়রা জানান, অন্তত কয়েক ডজন মানুষ আহত হয়েছেন এবং একাধিক বাড়ি দখল করে সেনারা সামরিক ঘাঁটি বানিয়েছে। প্যালেস্তাইনি প্রেসিডেন্সির মুখপাত্র নাবিল আবু রুদাইনা এই অভিযানের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, ইজরায়েলি সরকারের মদতে সেনারা এবং অবৈধ বসতকারীরা যে সন্ত্রাস চালাচ্ছে, তা গোটা অঞ্চলকে নতুন করে অগ্নিগর্ভ করে তুলছে। তিনি সতর্ক করে দেন, নেতানিয়াহুর সরকার এভাবে চলতে থাকলে পশ্চিম এশিয়া অচিরেই ভয়াবহ অস্থিরতায় নিমজ্জিত হবে। একই সঙ্গে তিনি মার্কিন প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান, যেন তারা ইজরায়েলকে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলতে বাধ্য করে এবং অবিলম্বে আগ্রাসন বন্ধে চাপ দেয়।

গাজা যুদ্ধের প্রেক্ষাপট

পশ্চিম তীরের এই নতুন দমননীতি আসছে গাজায় চলমান ভয়াবহ যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে। অক্টোবর ২০২৩-এ শুরু হওয়া গাজা যুদ্ধের জেরে ইজরায়েল ও প্যালেস্তাইনের মধ্যে উত্তেজনা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। গাজায় ইজরায়েলি বিমান হামলায় এ পর্যন্ত হাজার হাজার সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের বড় অংশই নারী ও শিশু। হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির থেকে শুরু করে জাতিসংঘের আশ্রয়কেন্দ্রও রেহাই পায়নি। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, গাজায় ভয়াবহ যুদ্ধ চাপের পাশাপাশি পশ্চিম তীরে অভিযান বাড়িয়ে প্যালেস্তাইনিদের আরও কোণঠাসা করার চেষ্টা করছে ইজরায়েল। রামাল্লা ও নাবলুসের মতো এলাকাগুলোতে টানা অভিযানের মূল লক্ষ্য হলো পিএলও ও হামাসের রাজনৈতিক প্রভাবকে দুর্বল করা এবং সাধারণ মানুষকে আতঙ্কের মধ্যে রাখা। কিন্তু এতে পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার বদলে আরও বিস্ফোরক হয়ে উঠছে। একদিকে গাজার রক্তাক্ত বাস্তবতা, অন্যদিকে পশ্চিম তীরের দমননীতি— প্যালেস্তাইনিদের জন্য প্রতিদিনই এখন নতুন বেদনা ও অনিশ্চয়তার আরেক নাম।