আজকাল ওয়েবডেস্ক: বুরকিনা ফাসোর অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ক্যাপ্টেন ইব্রাহিম ত্রাওরে সম্প্রতি সৌদি আরবের একটি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন, যেখানে দেশটিতে ২০০টি মসজিদ নির্মাণের কথা বলা হয়েছিল। তিনি সৌদি আরবকে স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, ধর্মীয় পরিকাঠামোর চেয়ে দেশের জন্য জরুরি শিক্ষার প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী শিল্পখাতে বিনিয়োগ করা বেশি প্রয়োজন। রাষ্ট্রপতি ত্রাওরে উল্লেখ করেছেন, বুরকিনা ফাসোতে ইতিমধ্যেই যথেষ্ট সংখ্যক মসজিদ রয়েছে এবং অনেকগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে না। তাই দেশের মানুষের জীবনে সরাসরি প্রভাব ফেলা প্রকল্পগুলোই এখন অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত।
ক্যাপ্টেন ত্রাওরের এই সিদ্ধান্ত তার দীর্ঘমেয়াদী জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তিনি দেশকে স্থায়ীভাবে আত্মনির্ভরশীল ও উন্নয়নমুখী করার জন্য শিক্ষার উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবা এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। ক্ষমতায় আসার পর থেকে তিনি সরকারি প্রকল্প ব্যবস্থাপনা ও নির্মাণ মান উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কার্যকর করেছেন এবং নিশ্চিত করেছেন যে সকল সরকারি নির্মাণ প্রকল্প কঠোর প্রযুক্তিগত, পরিবেশগত এবং নিরাপত্তা মান অনুযায়ী সম্পন্ন হয়।
ত্রাওরের সরকার বিশেষভাবে দেশের অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর জন্যও বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। ২০২৪ সালের ১২ জুলাই তিনি ঘোষণা করেন ১,০০০টি সামাজিক আবাসন ইউনিট নির্মাণের পরিকল্পনা, যা ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের সব নাগরিককে পর্যাপ্ত বাসস্থানের নিশ্চয়তা দেবে। এ ছাড়াও, তিনি আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের আর্থিক সাহায্য প্রত্যাখ্যান করে দেশীয় সম্পদের সদ্ব্যবহার ও কৃষি, স্থানীয় শিল্প এবং টেকসই উন্নয়নের ওপর জোর দিয়েছেন।
৩৭ বছর বয়সী ক্যাপ্টেন ত্রাওরে কেবল বুরকিনা ফাসোতে নয়, আফ্রিকার অন্যান্য দেশেও ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। দেশটির জনগণ তাঁকে পশ্চিমি সাম্রাজ্যবাদ এবং নব্য-উপনিবেশবাদের প্রভাব থেকে মুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করছেন এমন প্রগতিশীল ও দৃঢ়নির্ধারিত নেতা হিসেবে দেখছেন। তার সমর্থকেরা তাঁকে আফ্রিকার বিপ্লবী নেতা টমাস সাঙ্কারার যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবেও মনে করছেন।
তরুণ এই নেতা আফ্রিকার বাইরে থেকেও নজর কেড়েছেন। সম্প্রতি রাশিয়ায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সোভিয়েত বিজয়ের ৮০তম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় অংশগ্রহণ করেন এবং ২০২৩ সালে রাশিয়া-আফ্রিকা শীর্ষ সম্মেলনে আফ্রিকার নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আমরা আর কোনো সাম্রাজ্যবাদের শোষণকারী শক্তির কথায় নাচা পুতুলের মতো আচরণ করব না।” এই বক্তব্য ব্যাপকভাবে প্রচারিত হওয়ার পর আফ্রিকার অন্যান্য দেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের মধ্যেও তাঁর সুনাম বেড়ে যায়।
অন্যদিকে, রাষ্ট্রপতি ত্রাওরের কার্যক্রমকে পশ্চিমা শক্তিগুলি কিছু ক্ষেত্রে বিতর্কিত ও কর্তৃত্ববাদী বলে উল্লেখ করেছে। সমালোচকদের অভিযোগ, ইব্রাহিমের সরকার সমাজমাধ্যম ব্যবহার করে নিজের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর চেষ্টা করছে এবং ভিন্নমত পোষণকারীদের দমন করছে। তবে বুরকিনা ফাসোর সাধারণ মানুষ এবং সমর্থকেরা বিশ্বাস করেন, তার মূল লক্ষ্য দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নেওয়া এবং জনগণের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করা।
ত্রাওরের নেতৃত্বে বুরকিনা ফাসোর খনিজ সম্পদ ব্যবস্থাপনাতেও গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এসেছে। তিনি রাশিয়ার সহযোগিতায় একটি জাতীয় স্বর্ণভান্ডার স্থাপন করেছেন এবং দেশের স্বার্থে বিদেশি মালিকানাধীন খনি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন। এছাড়াও দেশের জনগণকে কর্মসংস্থান ও দক্ষতা অর্জনের সুযোগ দেওয়ার ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে দেশীয় সম্পদের মাধ্যমে অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা বৃদ্ধি এবং দেশের দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা চলছে।
সব মিলিয়ে, ক্যাপ্টেন ইব্রাহিম ত্রাওরে বুরকিনা ফাসোর জনগণের কাছে কেবল ক্ষমতার নেতাই নন, বরং এক প্রগতিশীল ও দৃষ্টান্তমূলক নেতা হিসেবে পরিচিত হয়েছেন। দেশের অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও সামাজিক স্থাপত্যের উন্নয়নের ওপর তার অঙ্গীকার এবং আন্তর্জাতিক তহবিলের উপর নির্ভরতা কমানোর উদ্যোগ দেশকে নতুন দিগন্তের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
