আজকাল ওয়েবডেস্ক: সাম্প্রতিক সময়ে মিঠে জলের জীবাণু দ্বারা সৃষ্ট বিরল কিন্তু সাধারণত প্রাণঘাতী এক মস্তিষ্কজনিত সংক্রমণে দুই শিশুর মৃত্যু ঘটেছে। এই ঘটনায় গ্রীষ্মকালে লেক ও নদীতে সাঁতার কাটার ঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই রোগ অত্যন্ত বিরল এবং প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা শুরু হলে মৃত্যুর ঝুঁকি অনেকাংশে এড়ানো সম্ভব।
২২ আগস্ট দক্ষিণ চিনের ফুজিয়ান প্রদেশের এক মহিলা সামাজিক মাধ্যমে জানান, তার পাঁচ বছর বয়সী মেয়ের মৃত্যু হয়েছে প্রাইমারি অ্যামিবিক মেনিঙ্গোএনসেফালাইটিসে আক্রান্ত হয়ে। মেয়ে আইসিইউতে টানা ৫০ দিনেরও বেশি সময় চিকিৎসাধীন থাকার পর মারা যায়। তিনি জানান, জুন মাসে মেয়ে সাঁতার কাটতে গিয়েছিল এবং দু’বার গরম জলের ঝরনাতেও গিয়েছিল। ২২ জুন থেকে তার মাথাব্যথা, হালকা জ্বর ও বমি শুরু হয়। ২৭ জুন তাকে এই রোগে আক্রান্ত বলে শনাক্ত করা হয়।
আরও পড়ুন: এক পণ্য, এক কর, কী ভাবছে জিএসটি কাউন্সিল
এর আগে ১১ আগস্ট আনহুই প্রদেশের আরেক মহিলা জানান, তার ছয় বছরের ছেলে একই সংক্রমণে মারা গেছে। মনে করা হচ্ছে, জুনের মাঝামাঝি সময়ে কিন্ডারগার্টেনে জলের সঙ্গে খেলার সময় অথবা এপ্রিল মাসে নদীর পাড়ে মাছ ধরার সময় সে সংক্রমিত হয়েছিল।
চিনের রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের জাতীয় পরজীবীবিদ্যা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষক ড. লু ইয়ান জানান, এই রোগ সৃষ্টি হয় তথাকথিত “ব্রেইন-ইটিং” অ্যামিবা দ্বারা। এগুলো এককোষী জীব, যেগুলো গরম জলে যেমন লেক, নদী ও উষ্ণ প্রস্রবণ—তেমনি মাটি ও কাদাতেও বেঁচে থাকে।
মানুষ যখন মিঠে জল, অপরিশোধিত সুইমিংপুল বা উষ্ণ প্রস্রবণে সাঁতার কাটে, ডুব দেয় বা খেলে তখন এগুলো নাক বা মুখ দিয়ে শরীরে প্রবেশ করতে পারে। এরপর এগুলো মস্তিষ্কে পৌঁছে টিস্যু নষ্ট করে মৃত্যু ডেকে আনতে পারে। প্রাথমিক উপসর্গের মধ্যে রয়েছে ত্বকের ক্ষত, জ্বর, মাথাব্যথা ও বমি।

ড. লু বলেন, “রোগটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং নির্দিষ্ট ক্লিনিক্যাল লক্ষণ না থাকায় অনেক সময় ভুল রোগ নির্ণয় হয়ে যায়।” তবে তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, “এই সংক্রমণ খুবই বিরল। তাই আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই।”
চীনে এতদিনে ৪০টির বেশি ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে, যার মধ্যে বেশিরভাগই Balamuthia mandrillaris নামক একধরনের সাধারণ ব্রেইন-ইটিং অ্যামিবা দ্বারা সৃষ্ট। প্রাকৃতিক পুকুর, লেক ও নদীতে সাঁতার না কাটতে, মুখ না ধুতে বা খেলাধুলা না করাই ভাল। জলাশয়ের তলায় কাদা না খুঁড়তে বা নড়াচড়া না করা উচিত। মিঠে জল বা গরম প্রস্রবণে সাঁতার কাটলেও মাথা পুরোপুরি না ডুবানো উচিত। যদি সাঁতার কাটার বা প্রাকৃতিক জলে খেলার পর মাথাব্যথা, জ্বর বা অন্য উপসর্গ দেখা দেয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যান। এতে দ্রুত রোগ শনাক্তকরণ সম্ভব হবে।” প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্তকরণ ও চিকিৎসাই জীবন বাঁচানোর মূল চাবিকাঠি।”

ঝেজিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল হাসপাতালের সংক্রামক রোগ বিভাগের প্রধান ড. হুয়াং লিসু বলেন, “রোগটির দ্রুত বিস্তার, খুব কম আক্রান্তের হার, প্রাথমিক স্তরের হাসপাতালগুলোর সীমিত নির্ণয় ও চিকিৎসা সক্ষমতা, এবং শিশু রোগীদের জন্য লক্ষ্যভিত্তিক ওষুধের অভাব—সব মিলিয়ে চিকিৎসা আরও কঠিন হয়ে ওঠে।”
