এক পণ্য, এক কর, কী ভাবছে জিএসটি কাউন্সিল

img

উৎসবের মরসুমের ঠিক আগে ১২% ও ২৮% হারের স্ল্যাব তুলে দেওয়ার প্রস্তাব নিয়ে আসছে সরকার। ৫৬তম বৈঠকে জিএসটি কাউন্সিল ৩–৪ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে বসবে। সেখানে শূন্য-হার স্ল্যাব বিস্তৃত করা, করহার একত্রিত করা এবং বর্তমানে ১৮% কর-হারভুক্ত কিছু পণ্যে জিএসটি কমানোর প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

img

যদি এই প্রস্তাব পাশ হয়, তাহলে প্রতিদিনের খাদ্যদ্রব্যগুলির অনেকটাই শূন্য-হার বিভাগের অন্তর্ভুক্ত হবে। যেমন – ইউএইচটি দুধ, প্যাকেটজাত পনির, পিজ্জা ব্রেড, খাখরা, চাপাটি ও রুটি। হিমায়িত (ফ্রোজেন) প্রোডাক্ট যেমন পরোটা ও পরোটা, যেগুলো আগে ১৮% স্ল্যাবে রাখা হয়েছিল, সেগুলিকেও শূন্য করের আওতায় আনার বিষয়টি গ্রুপ অব মিনিস্টার্সের সুপারিশের ভিত্তিতে বিবেচনা করা হচ্ছে।

img

প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলি খাদ্য ও গৃহস্থালি সামগ্রীর দাম কমাতে পারে। তবে একটি সমস্যা রয়েছে—পণ্য কীভাবে শ্রেণিবদ্ধ করা হচ্ছে, সেটিই নির্ধারণ করবে আসলে ভোক্তারা কতটা সাশ্রয় করবেন।

img

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করহার কমানো অবশ্যই ইতিবাচক পদক্ষেপ, কিন্তু মূল সমস্যা হল জিএসটির অধীনে পণ্য শ্রেণিবিন্যাস।

img

জিএসটি আইন জটিল এইচএসএন কোড ও টেকনিক্যাল বর্ণনার ওপর নির্ভরশীল, যা বাজারে পণ্য যেভাবে বিক্রি হয় তার সঙ্গে মেলে না। এই ফাঁকফোকর থেকে একাধিক ব্যাখ্যা তৈরি হয় এবং সেখান থেকেই আইনি বিতর্কের জন্ম হয়।

img

অস্পষ্টতার কারণে অনেক অদ্ভুত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। যেখানে একই পণ্যের ওপর ভিন্ন করহার প্রযোজ্য হচ্ছে।

img

এই ধরনের বিভ্রান্তি ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য বাড়তি চাপ তৈরি করে। বড় কর্পোরেটদের মতো এসএমই বা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা সহজে অতিরিক্ত খরচ বহন করতে বা ভোক্তাদের ওপর চাপাতে পারে না। এতে সরাসরি তাদের মুনাফা কমে যায়, এমনকি ব্যবসা টিকিয়ে রাখার ক্ষমতাও নষ্ট হয়।

img

একজন ছোট দোকানদার বা স্ন্যাক প্রস্তুতকারক প্রতিটি পণ্যের জন্য জিএসটি কনসালট্যান্ট নিয়োগ করতে পারেন না। অথচ ভুল শ্রেণিবিন্যাস করলে শাস্তি, সুদ ও মামলার ঝুঁকি থাকে। আবার অতিরিক্ত কর নিলে গ্রাহক হারানোর আশঙ্কা।

img

প্রধান নীতি হওয়া উচিত—এক পণ্য, এক করহার। শুধু ব্র্যান্ডিং, প্যাকেটজাত করা বা সামান্য উপাদান পরিবর্তনের কারণে কর আলাদা হওয়া উচিত নয়। এগুলো বিতর্ক তৈরি করে, কিন্তু রাজস্ব আদায়ে তেমন উপকার আনে না।

img

স্ল্যাব পাঁচ থেকে কমে তিন হলে শিরোনাম ভালো শোনাবে। কিন্তু পণ্যের সংজ্ঞা সহজ না করলে বিতর্ক চলবেই। এটা যেন লিক করা কল ঠিক না করে শুধু মেঝে পরিষ্কার করা—জল কিন্তু বেরিয়েই যাবে।

img

স্বল্পমেয়াদে জিএসটি সংস্কারে মিশ্র প্রভাব পড়তে পারে। কিছু জিনিস সস্তা হবে, কিছুতে দাম বাড়বে। যেমন ডিটারজেন্ট যদি ১৮% থেকে ১২%-এ নামে, তবে পরিবারগুলো মাসিক বাজেটে তা টের পাবে।

img

তবে আসল সুবিধা দীর্ঘমেয়াদে। “ক্লাসিফিকেশন বিতর্ক ও অনিশ্চয়তা কমলে ব্যবসায়ীরা ‘লিটিগেশন রিস্ক’ মাথায় রেখে অতিরিক্ত কর নেবে না। এতে দাম স্থিতিশীল হয়, ভোক্তাদের মধ্যে জিএসটির ওপর আস্থা বাড়ে।”

img

সরলীকরণ ব্যবসার খরচও কমায়। এতে ব্যবসা নতুন বিনিয়োগ করতে পারে বা দাম কমাতে পারে। এর ফলে চাহিদা বাড়ে, খরচ কমে, এবং অর্থনীতির সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়। ভোক্তাদের জন্য শুধু সস্তা জিনিস নয়, বরং একটি স্বচ্ছ ও বাস্তবসম্মত কর ব্যবস্থা তৈরি হয়।