আজকাল ওয়েবডেস্ক:  জম্মুর নিক্কি তাওয়ি এলাকার ২১ বছর বয়সী আদিবাসী যুবক মহম্মদ পারভেজকে পুলিশের গুলিতে মৃত্যুর ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছে জম্মু শহর। আজ, ২৫ জুলাই, পারভেজের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই সরকারি মেডিক্যাল কলেজ (GMC) হাসপাতালের সামনে তার পরিবার ও স্থানীয়দের নেতৃত্বে তীব্র বিক্ষোভ শুরু হয়। নিহত পারভেজ গুজ্জর সম্প্রদায়ভুক্ত এবং এ বছর জম্মু-কাশ্মীরে পুলিশের অভিযানে নিহত হওয়া এই সম্প্রদায়ের পঞ্চম সদস্য। পরিবারের দাবি, পারভেজ ও তার ভগ্নিপতি ওষুধ আনতে গিয়ে ২৪ জুলাই বিকেল ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে সুরে চকের কাছে কিছু সাদা পোশাকধারী ব্যক্তির মুখোমুখি হন। প্রথমে তারা ওই ব্যক্তিদের গোরক্ষক বলেই সন্দেহ করেন এবং আক্রমণের আশঙ্কায় পালাতে চেষ্টা করেন। সেই সময়েই গুলি চালানো হয়, যাতে পারভেজ গুরুতর আহত হন। পুলিশ তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা জানান, তিনি মৃত অবস্থায়ই ভর্তি হন।

অন্যদিকে, পুলিশের দাবি, তারা একটি বিশেষ অভিযানে মাদক পাচারকারীদের ধরতে গিয়েছিল এবং ‘পাথর ছোড়ার’ মুখে পড়ে আত্মরক্ষায় গুলি চালাতে বাধ্য হয়। পুলিশের এক সূত্র জানিয়েছে, ‘ক্রসফায়ারে’ একজন অজ্ঞাত ব্যক্তি আহত হন। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে কোনও জওয়ানের আহত হওয়ার তথ্য এখনো প্রকাশ করা হয়নি। নিহতের ভাই মহম্মদ ফারুক বলেন, “আমরা ছয় ভাই রোজ মজদুরি করি। যদি আমাদের নামে কোনও এফআইআর থাকে, পুলিশ এসে আমাদের ধরে নিয়ে যাক। কিন্তু গুলি করে খুন করবে কেন?” পারভেজের দিদি স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে বলেন, “দুই মাস আগে ওর বিয়ে হয়েছে। কী অপরাধ ছিল ওর? ও শুধু কাজ করত, কোনও মামলা ছিল না।”

আরও পড়ুন: নরেন্দ্র মোদীর নতুন ইতিহাস: টানা দ্বিতীয় সর্বাধিক সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে

আপাতত পরিবার মৃতদেহ গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। শতাধিক মানুষ পারভেজের বাড়িতে জড়ো হয়ে শোক প্রকাশ করেন। বিক্ষোভকারীদের দাবি, “গুজ্জর হলেই কি পুলিশ গুলি চালাতে পারে?” দোদা জেলার আপ বিধায়ক মেহরাজ মালিক এই ঘটনাকে ‘ফেক এনকাউন্টার’ বলে আখ্যা দিয়ে বলেন, “এটা কি সেই নতুন ভারত, যেখানে বিচার ছাড়াই গুলি চালানো হয়?” আদিবাসী অধিকারকর্মী তালিব হুসেইন বলেন, “পারভেজের নামে কোনও এফআইআর নেই। পুলিশ যদি ওকে সন্দেহ করত, তাহলে গ্রেফতার করত। এটা সুপরিকল্পিত হত্যা। বিজেপির এক নেতার নির্দেশে গুজ্জরদের লক্ষ্য করে এক ধারাবাহিক আক্রমণ চলছে।”

চলতি বছরেই জম্মু-কাশ্মীরে কমপক্ষে আরও চারজন গুজ্জর যুবকের রহস্যময় মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে এক যুবকের মৃত্যু পুলিশি হেফাজতে, তিনজনের মৃতদেহ নদীতে এবং একজনের মৃত্যু তথাকথিত এনকাউন্টারে হয়েছে — সব ক্ষেত্রেই পরিবার পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। জনগণের দাবি, অবিলম্বে ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্ত হোক এবং দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। সরকার এখনও এ বিষয়ে কোনও নিরপেক্ষ তদন্তের ঘোষণা করেনি।

এদিকে, জম্মু অঞ্চলে গুজ্জর সম্প্রদায়ের উপর একের পর এক হামলা, সন্দেহের ভিত্তিতে গুলি চালানো, এবং হেফাজতে মৃত্যু নিয়ে চরম অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। রাজ্য থেকে বিশেষ মর্যাদা তুলে নেওয়ার পর থেকেই জম্মু অঞ্চলে মুসলিম ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা বেড়েছে বলে বহু মানবাধিকার সংগঠন ও পর্যবেক্ষক মনে করছেন। বিশ্লেষকদের মতে, প্রশাসনের এমন মনোভাব দীর্ঘমেয়াদে জনমানসে ক্ষোভ ও বিচ্ছিন্নতাবাদী মনোভাব আরও গভীর করে তুলতে পারে।