আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিহারে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন (Special Intensive Revision - SIR) কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশনের (ECI)। গোটা দেশ জুড়ে এই কর্মসূতি পালন করা হবে। কমিশনের তরফ থেকে সব রাজ্যের নির্বাচন কমিশনকে এই সংক্রান্ত নির্দেশিকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, কেরালা, পুদুচেরি এবং তামিলনাড়ু এই পাঁচটি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।। সেই পরিপ্রেক্ষিতে এই পদক্ষেপটি তাৎপর্যপূর্ণ। বিভিন্ন রাজ্য বাংলাদেশ এবং মায়ানমার থেকে আসা অবৈধ বিদেশী অভিবাসীদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে।
আরও পড়ুন: দিল্লি থেকে কলকাতা মাত্র আড়াই ঘণ্টায়! ১২০০ কিমি মাত্র ১৫০ মিনিটে পৌঁছে দেবে এই ট্রেন
রবিবার নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, বিহারে চলতে থাকা বিশেষ সংশোধন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকার যাচাইয়ের সময় নেপাল, বাংলাদেশ এবং মায়ানমারের বিপুল সংখ্যক মানুষকে পাওয়া গিয়েছে। ৩০ সেপ্টেম্বর যে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশিত হবে সেখানে এই ধরনের লোকদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হবে না।

অনেকেই নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে আধার কার্ড পেশ করছেন। তবে, আধার কর্তৃপক্ষ বা UIDAI স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, আধার কার্ড নাগরিকত্বের শংসাপত্র নয়। এটি কেবল পরিচয় এবং ঠিকানার প্রমাণ। ১০ জুলাই বিহারের SIR-কে চ্যালেঞ্জ করে একাধিক আবেদনের শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচন কমিশকেকে আধার, EPIC কার্ড এবং রেশন কার্ডকেও নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছিল।
নীচে চারটি নথির তালিকা দেওয়া হল যা আপনার নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে সাহায্য করবে-
জন্ম শংসাপত্র: এই নথিটি প্রমাণ হিসেবে কাজ করে যে আপনি ভারতের নাগরিক। তবে এর সঙ্গে সম্পর্কিত বেশ কিছু নিয়ম রয়েছে যা পূরণ করাও প্রয়োজন।
পাসপোর্ট: ভারতীয় পাসপোর্ট নিজেই প্রমাণ করে যে আপনি একজন ভারতীয় নাগরিক। পাসপোর্টটি বিদেশ মন্ত্রক দ্বারা জারি করা হয় এবং এতে আপনার নাগরিকত্বের কথাও উল্লেখ থাকে।
আরও পড়ুন: মাথায় পাঁচ লক্ষ কোটি টাকার দেনা নিয়ে কাটছে জীবন, চিনে নিন বিশ্বের দরিদ্রতম ব্যক্তিকে
জাতীয়তা শংসাপত্র: একটি জাতীয়তা শংসাপত্র আপনার নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে কাজ করে। এটি সাধারণত রাজ্য সরকার অথবা কখনও কখনও জেলাস্তরের কর্তৃপক্ষ দ্বারা জারি করা হয়। এটি শুধুমাত্র বিশেষ পরিস্থিতিতে জারি করা হয়। কিছু ক্ষেত্রে এই শংসাপত্র স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক দ্বারাও জারি করা হয়ে থাকে।
নাগরিকত্ব সার্টিফিকেট/রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট: ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের ৫ এবং ৬ ধারার অধীনে ভারতীয় নাগরিকত্ব অর্জনকারী বিদেশি নাগরিকদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক কর্তৃক প্রদত্ত।
বিহারে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে ২৪ জুন ২০২৫ তারিখে নির্বাচন কমিশন (ECI) ঘোষণা করেছে বিশেষ নিবিড় সংশোধন (SIR) প্রক্রিয়া। এর আওতায় রাজ্যের ৭.৮৯ কোটি ভোটারের নাগরিকত্ব যাচাই চলছে বাড়ি বাড়ি গিয়ে, যা নজিরবিহীন পদক্ষেপ। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুসারে, ভোটারদের নিজে থেকে নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র সহ একটি ফর্ম পূরণ করে জমা দিতে হবে ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে। যে ভোটার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এই ফর্ম জমা দিতে ব্যর্থ হবেন, তাঁদের নাম খসড়া ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়বে।
এই প্রক্রিয়ায় শুরু হয়েছে বিতর্ক। ২০০৩ সালের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (CAA) অনুসারে এই যাচাই করা হচ্ছে। ১৯৮৭ সালের পরে জন্মানো ভোটারদের বাবা-মায়ের জন্মস্থানের প্রমাণ চাওয়া হচ্ছে, যা সাধারণ মানুষের জন্য অত্যন্ত কঠিন কাজ। বিহারের ক্ষেত্রে বিষয়টি আরও জটিল। কমিশনের নিজস্ব সমীক্ষা বলছে, রাজ্যের ৩৩% মানুষ নিরক্ষর, ৪১% ইন্টারনেট ব্যবহার করেন না, ৫৩% খবরের কাগজ পড়েন না। BLO-দের এক মাসের মধ্যে প্রায় ৮০০ জন ভোটারের তথ্য সংগ্রহ ও আপলোড করতে বলা হয়েছে। ফলে ভুল-ত্রুটির আশঙ্কা প্রবল। উপরন্তু, বিহার থেকে সর্বাধিক পরিযায়ী শ্রমিক বাইরের রাজ্যে থাকা ভোটার তালিকার এই প্রক্রিয়া থেকে বাদ পড়ার আশঙ্কায় রয়েছেন।
