আজকাল ওয়েবডেস্ক: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের অর্থনীতিকে ‘মৃত’ বলে মন্তব্য করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই, লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী সেই মন্তব্যে সহমত পোষণ করে বলেন, “মোদি ও নির্মলা ছাড়া গোটা বিশ্ব জানে যে ভারতের অর্থনীতি মৃত। ট্রাম্প সত্যি কথা বলেছেন।” সংসদের বাইরে সাংবাদিকদের সামনে রাহুল বলেন, “ট্রাম্প ঠিকই বলেছেন। ভারতের অর্থনীতি মৃত—এটা সবাই জানে। শুধু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আর অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ছাড়া। আমি খুশি যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট সত্যিটা বলেছেন। বিজেপি দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করেছে, আর সেটা করেছে আদানির স্বার্থে।”

ট্রাম্প বুধবার ঘোষণা করেন, ১ আগস্ট থেকে ভারতের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক ও অতিরিক্ত জরিমানা চাপানো হবে। তার পরেই ট্রাম্প কটাক্ষ করে বলেন, “ভারত রাশিয়ার সঙ্গে যা খুশি করুক, তারা একসঙ্গে তাদের মৃত অর্থনীতিকে ধ্বংস করুক, আমার কিছু যায় আসে না।”এর জবাবে বৃহস্পতিবার রাহুল গান্ধী বলেন, “এই সরকার শুধু অর্থনীতি নয়, দেশের প্রতিরক্ষা নীতিও ধ্বংস করেছে। বিদেশনীতি সম্পূর্ণ ভ্রান্ত পথে চলছে। তারা দেশ চালাতে জানে না, গোটা দেশ আজ বিভ্রান্ত।” এছাড়া, পহেলগাঁও হামলা ও ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর আলোচনায় মঙ্গলবার সংসদে ভাষণ দেওয়ার সময় রাহুল বলেন, “ট্রাম্প অন্তত ৩০-৩২ বার বলেছেন তিনি ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ থামিয়েছেন। ট্রাম্প আরও দাবি করেছেন যে পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হয়েছে। এখন তিনি বলছেন ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপাবেন। প্রধানমন্ত্রী কি সাহস করে সংসদে দাঁড়িয়ে ট্রাম্পকে মিথ্যাবাদী বলতে পারবেন? আসল সত্যটা কী, বুঝে নিতে হবে।”

আরও পড়ুন: দীর্ঘ ১৭ বছর তদন্ত করেও কিছু করতে পারল না এনআইএ! ২০০৮ সালে কী হয়েছিল মালেগাঁওয়ে?

রাহুল আরও অভিযোগ করেন, “ভারতের বিদেশমন্ত্রী বিদেশনীতি নিয়ে বড় বড় কথা বলেন, অথচ বাস্তবে আমেরিকা আমাদের সমালোচনা করছে, চীন আমাদের উপর চাপ সৃষ্টি করছে, আর কোনো দেশ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একটাও কথা বলছে না। এটা কোন ধরনের কূটনীতি?” বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক্স (প্রাক্তন টুইটার)-এ রাহুল লেখেন, “ভারতের অর্থনীতি মৃত। মোদিই একে হত্যা করেছেন। আদানি-মোদি অংশীদারিত্ব, নোটবন্দি, ত্রুটিপূর্ণ GST, MSME খাত ধ্বংস, কৃষকদের উপর জুলুম – মোদি ভারতের যুবসমাজের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করেছেন, কারণ দেশে আর চাকরি নেই।” বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রক জানিয়েছে, মার্কিন শুল্কের বিষয়ে তারা বিশদভাবে বিশ্লেষণ করছে এবং জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় সমস্ত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। 

বর্তমানে ভারতের অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে দেশ-বিদেশে ব্যাপক আলোচনা চলছে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে জিডিপি বৃদ্ধি হার তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকলেও কর্মসংস্থান, মূল্যবৃদ্ধি এবং আয়-বৈষম্য সংক্রান্ত সমস্যাগুলি গভীরতর হয়েছে। নগর ও গ্রামীণ উভয় অর্থনীতিতেই চাহিদা কমেছে, যা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলেছে। কৃষি খাত এখনও বড় সংখ্যক মানুষকে জীবিকা দেয়, কিন্তু কৃষকদের আয় বাড়েনি এবং ঋণভার বাড়ছে।

ভারতের বৃহৎ কর্পোরেট সংস্থাগুলি বিপুল লাভ করলেও গরিব ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির অর্থনৈতিক সুরক্ষা হ্রাস পেয়েছে। কাজের বাজারে অনিশ্চয়তা, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ এবং মজুরির স্থবিরতা মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমিয়েছে। সামাজিক খাতে ব্যয় হ্রাস, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিষেবার বেসরকারিকরণও অর্থনৈতিক বৈষম্য বাড়িয়ে তুলেছে। আন্তর্জাতিক স্তরে মার্কিন মুদ্রানীতির কড়াকড়ি, বৈশ্বিক মন্দা এবং পেট্রোলিয়াম পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিও ভারতীয় অর্থনীতিকে চাপের মধ্যে ফেলেছে। ফলে ভারতের অর্থনীতি এক সংকটকাল অতিক্রম করছে যা দীর্ঘমেয়াদে সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।