আজকাল ওয়েবডেস্ক: লিফলেটে নাম দিয়ে শুরু, শেষ হল খাদে দেহ উদ্ধার দিয়ে। কোনও থ্রিলার ওয়েব সিরিজকেও হার মানাবে রাজা এবং সোনম রঘুবংশীর গল্প। দুই সম্ভ্রান্ত পরিবারে মিলন এক বিয়ের মাধ্যমে, সেই সম্পর্ক ভেঙে গেল মেঘালয়ের কুয়াশাচ্ছন্ন পাহাড়ে একটি হত্যাকাণ্ডে। ১১ মে বিয়ে সেরে ২০ মে মেঘালয়ে মধুচন্দ্রিমা নবদম্পতির। কিন্তু সেখান থেকে ফিরে এল একটি দেহ।
রাজা রঘুবংশী: সম্ভ্রান্ত পরিবারের ছোট ছেলে
ইন্দোরের সহকার নগরের একটি যৌথ পরিবারের তিন ভাইয়ের মধ্যে রাজা রঘুবংশী ছিলেন সবার ছোট। তাঁর দুই দাদা শচীন এবং বিপিন বিবাহিত। রাজা ২০০৭ সাল থেকে পারিবারিক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। ‘রঘুবংশী ট্রান্সপোর্ট’ নামে একটি পরিবহণ সংস্থা ছিল। যা স্কুল এবং কোচিং ইনস্টিটিউটগুলিতে বাস ভাড়ায় দিত।
দায়িত্ববান রাজা জীবনের নতুন অধ্যায়ের জন্য তৈরি ছিল। গত মাসে, ১১ মে, তিনি সোনাম রঘুবংশীকে ধুমধাম করে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিয়ে করেন। ১২ দিন পর, তাঁকে হত্যা করা হয়, নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়, তাঁর প্রাণহীন দেহ মেঘালয়ের ঘন প্রান্তরে ফেলে রাখা হয়।
সোনম রঘুবংশী: ব্যবসায়িক কারণ না অন্য কিছু
প্লাইউড কারখানার মালিক দেবী সিং রঘুবংশীর মেয়ে সোনম ইন্দোরের কুশওয়া নগরে থাকতেন। তিনি পারিবারিক ব্যবসার প্রায় প্রতিটি বিভাগ পরিচালনা করতেন।
বহু বছর আগে, রাজ কুশওয়াহা নামে এক ব্যক্তি সোনমের বাবার কারখানার বিলিং বিভাগে কাজ করতেন। তিনিও সোনমের বাড়ির কাছে থাকতেন। রাজই সেই ব্যক্তি- যাকে এখন পুলিশি তদন্তের কেন্দ্রবিন্দুতে রেখেছে। পুলিশের ধারণা, পুরনো প্রেম জেগে ওঠায় সে আবার সোনমের জীবনে ফিরে আসে। দু’জনে মিলে এই অপরাধ ঘটিয়েছে। পুলিশ রাজকে অন্যতম মাস্টারমাইন্ড বলেও অভিহিত করছে। রাজের উদ্দেশ্য কী ছিল?
রাজা এবং সোনমের পরিচয় একটি পুরনো বৈবাহিক রীতি অনুযায়ী। এর নাম ‘সমাজ পরিচয় পুস্তিকা’। ২০২৪ সালে ১ অক্টোবর রাম নবমীর রীতি অনুযায়ী বিবাহযোগ্য ছেলে এবং মেয়ের নাম একটি পুস্তিকায় ছেপে তা প্রকাশ করা হয়।
সোনমের বাবা তার নাম নথিভুক্ত করেছিলেন। রাজার পরিবারও তাই করেছিল। পূর্বের কোনও পরিচয় ছিল না। দু’জনের প্রোফাইল দুই বাড়ির লোকের পছন্দ হয়ে যায়। এর পর তাঁরা দেখা করেছিলেন এবং বিয়ে করতে রাজি হয়েছিলেন।
রাজার মা, উমা রঘুবংশী, বিয়েটিকে নিখুঁত দেখাশোনা করে অনুষ্ঠিত হওয়া বিয়ে বলেছেন। তিনি জানান, কোনও প্রেমের সম্পর্ক নেই, কোনও গোপন উদ্দেশ্য নেই। কিন্তু আড়ালে কিছু চলছিল নিশ্চয়ই।
১১ মে বিয়ে সেরে ২০ মে নাগাদ নবদম্পতি মেঘালয়ে মধুচন্দ্রিমার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন। ফিরেছে কেবল একটি মৃতদেহ। ২৩ মে রাজাকে একটি খাদে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। তাঁর মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাত মিলেছে। তাঁর ফোন বন্ধ ছিল এবং তাঁর শেষ মুহূর্তগুলিতে কোনও কল রেকর্ড ছিল না। এবং সোনম নিখোঁজ।
তদন্তকারীরা মনে করছেন হত্যাকাণ্ডটি পূর্বপরিকল্পিত। এর পিছনে কী অন্য কোনও রহস্য রয়েছে, বিয়েটি কী শুধুই লোক দেখানো, না কি এর পিছনে অন্য কোনও চক্র কাজ করছে। সোনম এবং রাজ কি দীর্ঘদিন বিশ্বাসঘাতকতার খেলাটি পরিচালনা করেছিলেন? সোমবার রাজ এবং তিনজন কন্ট্রাক্ট কিলার-সহ সোনমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাজের নাম ফরেন্সিক তদন্তের অধীনে রয়েছে। রঘুবংশী পরিবার বিধ্বস্ত। এবং ইন্দোরের শান্ত রাস্তা থেকে মেঘালয়ের প্রত্যন্ত পাহাড় পর্যন্ত, একটিই প্রশ্ন প্রতিধ্বনিত হচ্ছে- এটি কি প্রেম ছিল, না কি একটি মারাত্মক পরিকল্পনা?
