স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের নামে অনেকেই খাদ্যতালিকা থেকে পুরোপুরি চিনি বাদ দেওয়ার কথা বলছেন। সেই জায়গায় চিনির বদলে ব্যবহার করা হচ্ছে ‘প্রাকৃতিক’ বিকল্প। যেমন গুড়, খেজুর বা মধু। কিন্তু প্রশ্ন হল, এগুলি কি সত্যিই চিনির তুলনায় কম ক্ষতিকর?

দেখতে খেজুর স্বাস্থ্যকর মনে হতে পারে। আবার গুড়ের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ঐতিহ্যের ভাবনা। কিন্তু বাস্তবে এই উপাদানগুলিও চিনির থেকে খুব একটা আলাদা নয়।

নিউরোসায়েন্সে ৩৩ বছরেরও বেশি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন নিউরোসার্জন ডা. প্রশান্ত কাটাকোলের মতে, অধিকাংশ মানুষের আসলে ‘চিনির সমস্যা’ নয়, সমস্যা হল নিজের মনকে বোঝানোর প্রবণতা। তাঁর কথায়, কোনও উপাদান প্রাকৃতিক উৎস থেকে এসেছে বলেই তা ক্ষতিকর নয়। এমন ভাবা একেবারেই ভুল।

চিনির বিকল্প নিয়ে অস্বস্তিকর সত্য

ইনস্টাগ্রামে একটি পোস্টে ডা. কাটাকোল লেখেন, আপনি কোন ধরনের চিনি খাচ্ছেন, সেটা শরীরের বিপাক প্রক্রিয়ার কাছে তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। বিপাক প্রক্রিয়া সংস্কৃতি, বিজ্ঞাপন বা আবেগ বোঝে না। সে শুধু বোঝে প্রতিদিন শরীরের উপর কতটা চাপ পড়ছে।

তিনি লেখেন, ‘বছরের পর বছর আমরা চিনির বদলে গুড় খেয়েছি। গুড়ের জায়গায় মধু এনেছি। তারপর মধুর বদলে খেজুর। আর নিজেকে বুঝিয়েছি, প্রতিবারই নাকি আরও ‘স্বাস্থ্যকর’ কিছু বেছে নিচ্ছি। শরীরকে এই বদল দিয়ে বোকা বানানো যায় না, কিন্তু আমরা নিজেরাই বোকা হই।”

ডা. কাটাকোলের ব্যাখ্যায়, চিনি, গুড়, মধু বা খেজুর, সবই শেষ পর্যন্ত ঘনীভূত শর্করার উৎস। শরীর এগুলিকে দ্রুত ভেঙে গ্লুকোজে পরিণত করে, প্রায় একই রকম প্রক্রিয়ায়।

তিনি আরও জানান, এই সব বিকল্পের গ্লাইসেমিক লোড বেশি, ক্যালোরিও বেশি এবং রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ানোর প্রভাবও প্রায় একই। তাঁর কথায়, “খেজুর দেখতে স্বাস্থ্যকর হতে পারে, গুড় শুনতে ঐতিহ্যবাহী লাগে, কিন্তু শরীরের কাছে দুটোই চিনির সমান। শুধু চিনি বাদ দিলেই ইচ্ছামতো এগুলো খাওয়ার ছাড়পত্র পাওয়া যায় না।”

তাহলে আসলে কী করলে উপকার হবে
ডা. কাটাকোল কয়েকটি বাস্তবসম্মত পরামর্শ দেন—
ঘনীভূত শর্করার উৎস সীমিত করুন।
খেজুর খেলে দিনে একটি খান।
গুড় বা মধু হলে এক চা-চামচের কম ব্যবহার করুন।
মিষ্টি খেতে হলে সম্পূর্ণ খাবারের স্বাভাবিক রূপে খান।
‘পরিষ্কার’ বা প্রাকৃতিক মনে হলেও পরিমাণের দিকে নজর রাখুন।
লেবেল নয়, গ্লুকোজের প্রভাব বুঝুন।