আজকাল ওয়েবডেস্ক: ৩৭০ ধারা বাতিলের পর, নরেন্দ্র মোদী সরকার জম্মু ও কাশ্মীরের উন্নয়নের দিকে মনোনিবেশ করেছে। যদিও পাকিস্তান বারবার এই উপত্যকাকে তাদের বলে দাবি করে আসছে। পাকিস্তান বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মঞ্চে জম্মু ও কাশ্মীরকে তাদের নিজস্ব এলাকা বলে দাবি করে আসছে। ভারত সরকার এখন জম্মু ও কাশ্মীরের উন্নয়নের জন্য বিশ্বব্যাঙ্ক থেকে ৩১১৯ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার প্রক্রিয়ার গতি আরও বৃদ্ধি করেছে। এই ঋণ মকুব হয়ে গেলে ঘুম উড়ে যেতে পারে পাকিস্তানের।
কিশতোয়ার জেলার চেনাব নদীর উপর নির্মিত কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ 'কোয়ার বাঁধ' প্রকল্প দ্রুত শেষ করার লক্ষ্যে ঋণ নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। এটি একটি গ্রিনফিল্ড স্টোরেজ জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। যা জলপ্রবাহের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। এই বাঁধটি ৫৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে। এটি প্রায় ১০৯ মিটার উঁচু একটি কংক্রিট গ্র্যাভিটি বাঁধ। এটি সম্পূর্ণ করতে ৪,৫২৬ কোটি টাকা খরচ হবে।
চেনাব নদীর প্রবাহ পরিবর্তনের কাজ ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে সফলভাবে সম্পন্ন হয়। যে কোনও জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ বলে বিবেচিত হয়। এর পাশাপাশি ৬০৯ মিটার দীর্ঘ মূল সুড়ঙ্গের খননও শুরু হয়েছে। এখন বাঁধের মূল নির্মাণকাজ দ্রুত গতিতে চলছে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২৪শে এপ্রিল ২০২২ তারিখে এই প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। সরকার ২০২৭ সালের মধ্যে এই প্রকল্পটি সম্পন্ন করার লক্ষ্য নিয়েছে যাতে জম্মু ও কাশ্মীর অঞ্চলে বিদ্যুতের সরবরাহের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায় এবং শিল্পের উন্নয়ন জোরদার হয়।
এই প্রকল্পটি এমন এক সময়ে তৈরি হচ্ছে যখন সিন্ধু জল চুক্তি নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বজায় রয়েছে। চেনাব নদী সিন্ধু নদীর একটি প্রধান উপনদী এবং পাকিস্তান এর জলপ্রবাহের উপর নির্ভরশীল। ভারতের এই নির্মাণের ফলে জলপ্রবাহ হ্রাস পাওয়ায় পাকিস্তান উদ্বিগ্ন। যদিও ভারত এখনও পর্যন্ত চুক্তি লঙ্ঘন করেনি। জলচুক্তির পর্যালোচনার দাবি এবং পাকিস্তানের ক্রমাগত আপত্তি এই বিষয়টিকে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।
পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের ওপর প্রাণঘাতী সন্ত্রাসী হামলার পর ভারতের প্রথমবারের মতো ১৯৬০ সালের সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই ঐতিহাসিক চুক্তি স্থগিতের বিষয় পাকিস্তানের জলসম্পদ মন্ত্রক ভারতের কাছে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার কাতর আবেদন জানিয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী, পূর্বের নদীগুলি অর্থাৎ রবি, বিয়াস এবং সুতলেজের জল পাবে ভারত এবং পশ্চিমের সিন্ধু, ঝিলম এবং চেনাবের জল পাবে পাকিস্তান। এই চুক্তির ফলে সামগ্রিক ভাবে সিন্ধু এবং তার উপনদীগুলির মোট জলের উপর পাকিস্তানের অধিকার ৮০ শতাংশ! ভারতের মাত্র ২০ শতাংশ! পাঞ্জাব এবং সিন্ধ প্রদেশের অর্থনীতি এই জলের উপরেই নির্ভরশীল।
আরও পড়ুন: রতন টাটার সংস্থা কর্মীদের বেতন বৃদ্ধি করবে কবে? বড় ঘোষণা করলেন টিসিএস-এর আধিকারিক
বিশ্বব্যাংকের মতে, এই চুক্তি সিন্ধু নদী ব্যবস্থার সুষ্ঠু ও সহযোগিতামূলক ব্যবস্থাপনার জন্য একটি কাঠামো তৈরি করেছে, যা ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশেই কৃষি, পানীয় জল এবং শিল্পের জন্য অপরিহার্য। চুক্তির শর্ত বলছে ভারত বা পাকিস্তান নিজেদের প্রয়োজনে ওই জল ব্যবহার করলেও কোনও অবস্থাতেই জলপ্রবাহ আটকে রাখতে পারবে না।
পহেলগাঁও হামলার পর ভারত সিন্ধু চুক্তি ভেঙে বেরিয়ে গেলে পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশে সেচ ব্যবস্থা মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞেরা। নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে কৃষিতে। এর ফলে অর্থনৈতিক ভাবে ধুঁকতে থাকা পাকিস্তানের ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন হতে পারে। কারণ, সিন্ধু ও তার উপনদীগুলির জলের উপরেই পাকিস্তানের ৮০ শতাংশ কৃষি নির্ভরশীল।
