আজকাল ওয়েবডেস্ক: বয়স ৪৫। চাকরিজীবনের এখনও বাকি ছিল ১৫ বছর। মাঝে টানা ৮ বছর কর্মরত ছিলেন ইডি দপ্তরে। মোট ১৬ বছরের কর্মজীবনে গ্রেপ্তার করেছেন দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনকে। আইআরএস আধিকারিকের বড় সিদ্ধান্তে রীতিমতো শোরগোল।
কপিল রাজ। আইআরএসের ২০০৯ ব্যাচের আধিকারিক ছিলেন। চাকরি জীবন শেষ হওয়ার প্রায় দেড় দশক আগেই, চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন তিনি। সর্বভারতীয় সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর তেমনটাই। উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুরের কপিল, ইলেকট্রনিকসে বিটেক করেছিলেন। পরে যুক্ত হন আইআরএস আধিকারিক হিসেবে। আট বছর ছিলেন ইডি-তে। ইডি-র পর তিনি কর্মরত ছিলেন দিল্লির জিএসটি ইন্টেলিজেন্স-এ। পদত্যাগের আগ পর্যন্ত তিনি দিল্লিতে জিএসটি গোয়েন্দা শাখায় অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন।
আরও পড়ুন: পর্যটক বোঝাই বোট তখন মাঝ দরিয়ায়, মুহূর্তের ঝড়ে সব শেষ, চোখের নিমিষে মৃত্যু মিছিল-হাহাকার
 
 কেজরিওয়াল-সোরেন গ্রেপ্তারিতে ছিলেন তিনিই। জানা গিয়েছে কর্মজীবনে একাধিক হাইপ্রোফাইল মামলার তদারকি করেছেন তিনি। নিজের বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে দুঁদে রাজনীতিবদদের নাস্তানাবুদ করেছেন প্রশ্নের জালে। আচমকা কর্মজীবনের একেবারে মাঝপথে সেখান থেকে সরে গেলেন তিনি।
বৃহস্পতিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারি করা এক আদেশে বলা হয়েছে, "ভারতের রাষ্ট্রপতি ১৭ জুলাই থেকে ভারতীয় রাজস্ব পরিষেবা (শুল্ক ও পরোক্ষ কর) থেকে তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করতে পেরে আনন্দিত।" স্বাভাবিকভাবেই জোর প্রশ্ন, কেন এই চরম সিদ্ধান্ত বেছে নিয়েছেন তিনি? জানা গিয়েছে কারণ একান্ত ব্যক্তিগত। সেই কারণেই চাকরির ১৬ বছর আগেই, পদত্যাগ করেছেন কপিল।

গত বছরের জানুয়ারিতে রাঁচিতে জমি কেলেঙ্কারির অভিযোগে ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী সোরেনের গ্রেপ্তারের তত্ত্বাবধানে ছিলেন এই কর্মকর্তা। জেএমএম নেতা রাজভবনে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেন এবং ইডি তাঁকে হেফাজতে নেওয়ার আগেই মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেন। রাজ্যপাল-সোরেন সাক্ষাতের সময়েও কপিল রাজ উপস্থিত ছিলেন বলে জানা যায়। উল্লেখ্য, ৩১ জানুয়ারি ঝাড়খণ্ডে জমি দুর্নীতি সংক্রান্ত বেআইনি আর্থিক লেনদেনের মামলায় ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম) নেতা হেমন্তকে গ্রেপ্তার করেছিল ইডি। ১৩ মে ‘বেআইনি আর্থিক লেনদেন প্রতিরোধ আইন’ (পিএমএলএ) সংক্রান্ত রাঁচির বিশেষ আদালত হেমন্তের জামিনের আবেদন খারিজ করে দেয়। তারপরেই ঝাড়খণ্ড হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেন তিনি। ৬০০ কোটি টাকার জমি দুর্নীতির অভিযোগ ছিল হেমন্তের বিরুদ্ধে। জমি দুর্নীতি মামলায় জামিন পান হেমন্ত। হেমন্ত যেহেতু গ্রেপ্তারির আগেই ইস্তফা দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে, তাঁর অনুপস্থিতিতে জেএমএম ঝাড়খণ্ডের কুর্শিতে বসায় চম্পাই সোরেনকে। তবে হেমন্ত ফিরতেই, সরতে হয় তাঁকে। পুনরায় ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্তত্রী পদে বসেন হেমন্ত সোরেন।
 
 অন্যদিকে, ২১ মার্চ, হেমন্তের ফ্রেপ্তারির মাসখানেক পরেই গ্রেপ্তার হন দিল্লির তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। যদিও কেজরি গ্রেপ্তারির আগে ইস্তফা দেননি, বরং জেল থেকেই চালিয়েছিলেন দিল্লি। জেল থেকে বেরিয়ে তিনি ইস্তফা দেন। 
২১শে মার্চ কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এবং গ্রেফতারি স্মারকলিপি তৈরি এবং আপ সুপ্রিমোকে
 
 হেফাজতে নেওয়ার সময় হাজির ছিলেন সেই কপিল রাজই। দিল্লির আবগারি দুর্নীতি মামলায় কেজরির আগেই গ্রেপ্তার হয়েছিল আরও দুই আপ নেতা।  এই মামালায় গ্রেপ্তারির আগে ৯ বার তলব করা হয়েছিল খোদ আপ সুপ্রিমোকে। যদিও ক্রমাগত হাজিরা এড়িয়েছেন তিনি। ২১ মার্চ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বাড়িতে হানা দেয় ইডি। দিল্লি হাই কোর্ট আবগারি মামলায় কেজরিওয়ালকে রক্ষাকবচ দিতে অস্বীকার করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইডির একটি দল পৌঁছে যায় তাঁর বাড়িতে। ১২ জন ইডি অফিসারদের দলটি কেজরিওয়ালের বাড়িতে প্রবেশ করে। শুরু হয়ে্ তল্লাশি অভিযান। রাত ৯টার কিছু পর তাঁর গ্রেপ্তারির কথা জানা যায়।
