সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন নানা ধরনের ওয়েলনেস হ্যাক ও ট্রেন্ডে ভরে গিয়েছে। অনেক চিকিৎসকও সোশ্যাল মিডিয়ায় স্বাস্থ্য সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য ভাগ করে নিচ্ছেন, যা সাধারণত কোনও অসুখে না পড়লে বা ব্যয়বহুল চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া জানা কঠিন। তবে এর পাশাপাশি এমন লোকও রয়েছেন, যাঁরা ভ্রান্ত তথ্য ও ঝুঁকিপূর্ণ স্বাস্থ্যচর্চা ছড়িয়ে দিচ্ছেন।
এই পরিস্থিতিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় নতুন যে ওয়েলনেস ট্রেন্ডটি ছড়িয়ে পড়েছে, তা হল লবঙ্গ ভেজানো জল পান করা। অনেকেই এর নানা উপকারিতার কথা বলছেন। কিন্তু আদৌ কি এর কোনও চিকিৎসাগত ভিত্তি রয়েছে? জেনে নেওয়া যাক।
পুষ্টিবিদ অদিতি প্রসাদ আপ্তে জানান, নিয়মিত লবঙ্গ ভেজানো জল পান করলে শরীরের ভিতরের অনুভূতিতেই পরিবর্তন আসতে পারে। হজমশক্তি উন্নত হওয়া, প্রদাহ কমা এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে এটি সাহায্য করতে পারে। এর পিছনে রয়েছে লবঙ্গের অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণ।
লবঙ্গে প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ও নানা জৈব সক্রিয় উপাদান থাকে। উষ্ণ জলে ভিজিয়ে রাখলে এই উপাদানগুলি ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসে, যা সামগ্রিক সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
যাঁরা নিয়মিত লবঙ্গ জল পান করেন, তাঁদের অনেকেই লক্ষ্য করেন হজমের সমস্যা কমে, পেট ফাঁপা ও অ্যাসিডিটির ভাব হালকা হয় এবং অন্ত্রের অস্বস্তি কমে। কারণ, লবঙ্গ জল হজমকারী এনজাইমের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে, ফলে খাবার সহজে ভাঙতে পারে শরীর। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে লবঙ্গের উষ্ণ স্বভাব বিপাকক্রিয়াকেও সক্রিয় করতে পারে, যা খিদে নিয়ন্ত্রণ ও শক্তির ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক।
ওজন নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও লবঙ্গ জল কিছুটা উপকার করতে পারে। এটি বিপাকক্রিয়া বাড়াতে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে, ফলে অপ্রয়োজনীয় খিদে বা মিষ্টি খাওয়ার প্রবণতা কমতে পারে।
শ্বাসযন্ত্রের সমস্যাতেও লবঙ্গ জল আরাম দিতে পারে। এটি প্রাকৃতিক এক্সপেক্টোরেন্ট হিসাবে কাজ করে, কফ পরিষ্কার করতে এবং কাশি প্রশমিত করতে সাহায্য করে। লবঙ্গে থাকা ইউজেনল নামের উপাদানটির হালকা সেডেটিভ গুণ রয়েছে, যা ভাল ঘুমে সহায়তা করতে পারে।
তবে লবঙ্গ জল খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা জরুরি। অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে কারও কারও অ্যালার্জি বা পেটের জ্বালাভাব হতে পারে। এছাড়া লবঙ্গ রক্তে শর্করার মাত্রায় প্রভাব ফেলতে পারে এবং রক্তপাতের প্রবণতা বাড়াতে পারে। তাই যাঁদের ডায়াবেটিস রয়েছে বা যাঁরা রক্ত পাতলা করার ওষুধ খান, তাঁদের অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।
