আজকাল ওয়েবডেস্ক: গুজরাটে অনিয়মিত বৃষ্টির জেরে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সাহায্যের জন্য রাজ্য সরকার ঘোষিত ১০ হাজার কোটি টাকার ত্রাণ প্যাকেজ নিয়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। শুধু বিরোধী দল নয়, শাসক বিজেপির ঘর থেকেও উঠছে সমালোচনার সুর। সমালোচকরা বলছেন, মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেল সরকারের ঘোষিত এই প্যাকেজ “অপর্যাপ্ত ও অন্যায্য”, যা বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে মোটেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
ভূপেন্দ্র প্যাটেল সরকারের দাবি, “গত দুই দশকে এমন নজিরবিহীন বর্ষা গুজরাটে দেখা যায়নি।” এই বৃষ্টিতে রাজ্যের প্রায় ৪২ লাখ হেক্টর কৃষিজমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ১৬ হাজারেরও বেশি গ্রাম জলমগ্ন অবস্থায় পড়েছে। বিশেষ করে সাওরাষ্ট্র ও মধ্য গুজরাটের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে মাঠজমি জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। চিনাবাদাম, সয়াবিন ও ধান—এই ফসলগুলিতে বিপুল ক্ষতি হয়েছে; বহু কৃষকের ক্ষেতের ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে। সরকার বলছে, এই পরিস্থিতিতে ঘোষিত ১০ হাজার কোটি টাকার ত্রাণপ্যাকেজ ৪২ লক্ষ কৃষকের জন্য “জীবনরেখা” হিসেবে কাজ করবে।
কিন্তু এই দাবি মানতে নারাজ কৃষক সংগঠন ও অনেক বিজেপি নেতাই। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস)-ঘনিষ্ঠ কৃষক সংগঠন ভারতীয় কিষান সংঘ (বিকেএস) খোলাখুলি প্রশ্ন তুলেছে সরকারের ত্রাণনীতির ওপর। সংগঠনের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক আর. কে. প্যাটেল সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “ত্রাণ হিসাব করার যে পদ্ধতি নেওয়া হয়েছে, তাতে কোনও স্বচ্ছতা নেই। সরকার যে অঙ্ক ঘোষণা করেছে, তা কৃষকদের প্রকৃত ক্ষতির তুলনায় নগণ্য।” তাঁর দাবি, গড়ে কৃষকদের প্রতি হেক্টরে বিনিয়োগ ১৮ হাজার থেকে ২৮ হাজার টাকার মধ্যে, অথচ ঘোষিত সহায়তা সেই তুলনায় অনেক কম।
আর. কে. প্যাটেল আরও অভিযোগ করেছেন, সরকার ক্ষতির অনুপাতে ত্রাণ দেওয়ার পরিবর্তে “এক ধরণের একরোখা” কাঠামো নিয়েছে, যেখানে ২৫ শতাংশ ফসল হারানো কৃষক এবং শতভাগ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক একই হারে অনুদান পাচ্ছেন। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “যদি সরকারের এই অবিচার চলতে থাকে, তবে কিষান সংঘ কৃষকদের সঙ্গে রাস্তায় নামতে বাধ্য হবে।” প্যাটেলের প্রশ্ন, “সরকার যাকে ঐতিহাসিক প্যাকেজ বলছে, তা আসলে কৃষকের হাতে কতটা পৌঁছেছে?”
বিতর্ক আরও তীব্র হয় যখন বিজেপিরই নেতা চেতন মালানি, আমরেলি জেলার সাভারকুন্ডলা তালুকের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক ও এপিএমসি-র ডিরেক্টর, সমস্ত পদ থেকে পদত্যাগ করেন। নিজের পদত্যাগপত্রে তিনি সরকারের ওপর কঠোর আক্রমণ চালিয়ে লেখেন, “এটি কৃষকদের প্রতি এক নিষ্ঠুর রসিকতা।” মালানির অভিযোগ, রাজ্য সরকার বিপর্যস্ত কৃষকদের দুরবস্থার প্রতি “অলস উদাসীনতা” দেখিয়েছে এবং “ঘোষিত সাহায্য কৃষকদের প্রকৃত ক্ষতির ছোঁয়াও পায়নি।”
অন্যদিকে, গুজরাট কংগ্রেস সভাপতি অমিত ছাভদা অভিযোগ করেছেন যে, “বিজেপি সরকার কৃষকদের যন্ত্রণা নিয়ে উপহাস করছে, অথচ বড়াই করছে উদারতার।” তিনি জানান, রাজ্যের কৃষকরা গড়ে প্রায় ৫৬ হাজার টাকার ঋণে জর্জরিত। তাঁর সতর্কবাণী, “যদি কৃষিঋণ মাফ না করা হয়, তবে কংগ্রেসও রাস্তায় নেমে আন্দোলনে যোগ দেবে।”
সব মিলিয়ে, গুজরাটের কৃষক ত্রাণপ্যাকেজ নিয়ে এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র উত্তাপ। সরকার বলছে এটি অভূতপূর্ব সাহায্য, কিন্তু বাস্তবে কৃষক সমাজ ও বিরোধীরা একবাক্যে বলছেন—“এই প্যাকেজ কৃষকের ক্ষতের ওপর সামান্য প্রলেপ, আর কিছু নয়।”
