ভারতে সোনার দাম বাড়ছে এবং বেশিরভাগ পরিবারই দীর্ঘমেয়াদি সুরক্ষার জন্য বেশি পরিমাণে সোনা জমা করছেন। স্বাভাবিকভাবে অনেকেই ভাবেন ব্যাঙ্ক লকারই সবচেয়ে নিরাপদ স্থান। কিন্তু বাস্তবে লকার সুরক্ষার নিয়ম ভারতীয় ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় অনেকটাই আলাদা এবং সে কারণে মূল্যবান ধাতু বা গয়না রাখার আগে জানা জরুরি, আসলে কোনটা সুরক্ষিত আর কোনটা নয়।
2
7
ব্যাঙ্কগুলো লকারের নিরাপত্তা বজায় রাখে—ক্যামেরা, দুই চাবির ব্যবস্থা, সীমিত প্রবেশাধিকার, নির্দিষ্ট সময়ে মিলিয়ে নেওয়া এবং নিরাপত্তা রক্ষীসহ সুরক্ষার নানা স্তর থাকে। ২০০৫ সালের এক ঐতিহাসিক সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী, ব্যাঙ্কগুলো লকার রক্ষণাবেক্ষণে যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করতে বাধ্য। গাফিলতি প্রমাণিত হলে যেমন কর্মীর অসদাচরণে চুরি, দুর্বল নিরাপত্তাজনিত ডাকাতি, বা অবহেলা—ব্যাঙ্ককে ক্ষতিপূরণ দিতেও হয়।
3
7
তবে এই বাড়তি নিয়ম থাকা সত্ত্বেও ব্যাঙ্ক লকারের ভিতরে থাকা সোনা বা গয়না ব্যাঙ্ক নিজে থেকে বীমা করে না। লকারে আপনি কী রেখেছেন তা ব্যাঙ্ক জানে না এবং তারা তার কোনও বীমা নিশ্চিতও করে না। তাই যদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অগ্নিকাণ্ড বা এমন কোনো চুরি ঘটে যা ব্যাঙ্কের অবহেলাজনিত নয়—তাহলে ব্যাঙ্ক ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য নয়। অনেক গ্রাহকই এই তথ্য শুনে হতবাক হন, কারণ তাঁরা ভেবেছিলেন লকার নেওয়া মানেই সম্পূর্ণ সুরক্ষা।
4
7
প্রতিটি লকারের সঙ্গে একটি চুক্তি থাকে যেখানে ব্যাঙ্কের দায়-দায়িত্ব স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকে। নির্দিষ্ট সময়ে লকার ব্যবহার করা, ভাড়া পরিশোধ করা এবং অ্যাকাউন্ট সক্রিয় রাখা—এই নিয়মগুলো মেনে চললে আপনার পূর্ণ আইনগত অধিকার বজায় থাকে। একইসঙ্গে, নতুন নিয়ম অনুযায়ী ব্যাঙ্ক যথেচ্ছভাবে লকার ভাঙতে পারে না; বারবার লিখিত নোটিশ পাঠানো এবং নির্দিষ্ট অপেক্ষার সময় পেরোনোর পরেই তারা এই ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে।
5
7
অনেকেই লকারের বদলে বাড়িতেই সোনা রাখতে পছন্দ করেন সহজ ব্যবহারের জন্য। কিন্তু বাড়িতে সোনা রাখার ঝুঁকি আরও বড়—চুরি, আগুন, ভুল জায়গায় রাখা বা ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সঠিক সেফ না থাকলে বা বীমা না থাকলে বাড়িতে সোনা রাখা অনেক সময় লকারের চেয়ে কম নিরাপদ। ফলে অনেক পরিবার এখন মিশ্র কৌশল অনুসরণ করেন—ব্যবহারযোগ্য হালকা গয়না বাড়িতে এবং ভারী, দীর্ঘমেয়াদি গয়না লকারে রাখেন।
6
7
যেহেতু ব্যাঙ্ক লকারের ভেতরের জিনিসে কোনও বীমা থাকে না, তাই আলাদা জুয়েলারি ইন্স্যুরেন্স নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসব বীমা পলিসি চুরি, আগুন, এমনকি কখনও কখনও ব্যাঙ্কের বাইরেও ক্ষতি হলে কভার করে। পাশাপাশি অবশ্যই গয়নার ছবি রাখতে হবে, ইনভয়েস সংরক্ষণ করতে হবে এবং একটি তালিকা তৈরি করতে হবে। দাবি জানানোর সময় এগুলো গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে কাজ করে। ব্যাঙ্কের নিয়ম মেনে চলতে বছরে অন্তত একবার লকার অবশ্যই ভিজিট করা উচিত।
7
7
সব মিলিয়ে, ব্যাঙ্ক লকার নিরাপদ হলেও তা সম্পূর্ণ সুরক্ষার নিশ্চয়তা দেয় না। ব্যাঙ্ক লকার কেবল জায়গার নিরাপত্তা দেয়, ভেতরের সম্পদের নয়। সোনার সম্পূর্ণ সুরক্ষার জন্য সেরা উপায় হল—উচ্চমূল্যের গয়না লকারে রাখা, আলাদা বীমা নেওয়া এবং প্রয়োজনীয় নথিপত্র সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা। সঠিক পরিকল্পনা ও সুরক্ষার সমন্বয়েই আপনার সোনা সত্যিকারের নিরাপদ থাকবে।