কেন্দ্রীয় সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করল অষ্টম কেন্দ্রীয় বেতন কমিশন। এই কমিশনই আগামী বছরগুলিতে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী ও পেনশনভোগীদের বেতন, ভাতা ও পেনশন কাঠামো নির্ধারণ করবে। এক কোটি’রও বেশি কর্মচারী ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মী এই সিদ্ধান্তের প্রত্যক্ষ প্রভাবের আওতায় আসবেন। সরকারের বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেতন কমিশনের কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে—নির্ধারিত সময়সীমা অনুযায়ী আগামী দেড় বছরের মধ্যেই তারা চূড়ান্ত সুপারিশ জমা দেবে।
2
9
সরকার কমিশনকে স্পষ্ট দায়িত্ব দিয়েছে তাদের Terms of Reference (ToR) অনুযায়ী। কমিশনের কাজ হবে বর্তমান বেতন কাঠামো, পেনশন, ভাতা ও পরিষেবা নীতি পুনর্বিবেচনা করা। তারা মূল্যস্ফীতির সঙ্গে বেতনের সামঞ্জস্য বজায় রাখছে কিনা, অর্থনৈতিক বাস্তবতা অনুযায়ী কর্মীদের জীবিকা কতটা সুরক্ষিত, তা পরীক্ষা করবে। প্রয়োজনে বিভিন্ন ভাতা পুনর্গঠনও করা হবে। মূল উদ্দেশ্য হল সরকারি কর্মীদের কল্যাণ বৃদ্ধি করা, তবে একইসঙ্গে রাজকোষের ভারসাম্যও বজায় রাখা—অর্থাৎ এটি হবে এক ধরনের “সমন্বয়ের ব্যালান্স অ্যাক্ট”।
3
9
প্রতি দশ বছর অন্তর নতুন কেন্দ্রীয় বেতন কমিশন কার্যকর হয়। সপ্তম বেতন কমিশনের বেতন কাঠামো ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়েছিল। সেই ধারা মেনে ৮ম বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর হওয়ার সম্ভাব্য তারিখ ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি। তবে তার আগে কমিশনকে তাদের রিপোর্ট জমা দিতে হবে এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অনুমোদন পেতে হবে। কমিশনকে কাজ শেষ করার জন্য প্রায় ১৮ মাস সময় দেওয়া হয়েছে, তাই কোনো স্পষ্ট ঘোষণা সম্ভবত ২০২৫ সালের শেষের দিকেই আসবে।
4
9
এটাই এখন কর্মচারীদের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন—যার নির্দিষ্ট উত্তর এখনই কেউ দিতে পারছে না। তবে “ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর” নামে পরিচিত একটি মূল সূচকই নির্ধারণ করে দেয় মূল বেতনের বৃদ্ধি কতটা হবে। সপ্তম বেতন কমিশনে এই ফ্যাক্টর ছিল ২.৫৭ গুণ। অর্থনীতিবিদদের অনুমান, অষ্টম কমিশনে এটি ২.৮ থেকে ৩.০ গুণ পর্যন্ত হতে পারে, যা উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি নির্দেশ করে। তবে হাতে পাওয়া প্রকৃত বেতন নির্ভর করবে মহার্ঘ ভাতা (DA), বাড়ি ভাড়া ভাতা (HRA) ও অন্যান্য ভাতা পুনর্গঠনের ওপর।
5
9
এই কমিশনের আওতায় আসবেন কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী, প্রতিরক্ষা কর্মী, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের কর্মচারী ও কেন্দ্রীয় পেনশনভোগীরা। তবে সম্প্রতি ৬৯ লক্ষ পেনশনভোগী উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে তারা হয়তো সম্পূর্ণভাবে অন্তর্ভুক্ত হবেন না। যদিও ToR-এ স্পষ্টভাবে পেনশন ও অবসরকালীন সুবিধার কথা উল্লেখ আছে, তবুও চূড়ান্ত ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশের পরেই।
6
9
বেতন ও পেনশন পুনর্বিবেচনা মানেই সরকারের ব্যয়ের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি। এর প্রভাব শুধু কেন্দ্র নয়, রাজ্যগুলির অর্থনীতিতেও পড়ে, কারণ অনেক রাজ্য কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত অনুসরণ করে নিজেদের কর্মচারীদের বেতন কাঠামো বদলায়। সরকার জানিয়েছে, আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা হবে কমিশনের অন্যতম মূল নীতি। অর্থাৎ বেতন বৃদ্ধি এমন হতে হবে যা রাজস্ব আয়, মূলধনী ব্যয় ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকে।
7
9
আগামী কয়েক মাস ধরে কমিশন কর্মচারী ইউনিয়ন, প্রতিরক্ষা সংগঠন, অর্থনীতিবিদ ও বিভিন্ন মন্ত্রকের সঙ্গে আলোচনা করবে। ২০২৬ যত ঘনিয়ে আসবে, আলোচনার তীব্রতাও তত বাড়বে। চূড়ান্ত সুপারিশের আগে কোনো তথ্য বা দাবি বিশ্বাস করার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেছেন বিশেষজ্ঞরা।
8
9
দেশজুড়ে লক্ষ লক্ষ পরিবার সরকারি আয় নির্ভরশীল। তাই বেতন কমিশনের সিদ্ধান্ত তাদের বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা ও অবসরজীবনের মানে সরাসরি প্রভাব ফেলে। একইসঙ্গে, অর্থনীতির জন্য এটি একটি বড় ব্যয়ের পুনর্গঠন, যা বাজারে ক্রয়ক্ষমতা ও খরচ বাড়াতে পারে।
9
9
ভারতের এই দশকের সবচেয়ে বড় বেতন সংস্কার এখন আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা—৮ম বেতন কমিশন কতটা “বড় রিসেট” আনবে, তা জানার।