প্রযুক্ত এবং কৃষিকাজ বহু যোজন এগিয়ে গেলেও, ২০২৫ সালেও ক্ষুধা বিশ্বের অন্যতম চ্যালেঞ্জ। সাম্প্রতিক বিশ্ব ক্ষুধা সূচক (গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স ২০২৫)-এ দেখা গিয়েছে বিশ্বের ১০ জনের একজন ঠিক মতো খাবার পান না। অর্থাৎ প্রায় ৬৭৩ মিলিয়ন মানুষ দীর্ঘস্থায়ী ক্ষুধা নিয়ে দিনযাপন করছেন।
2
9
দারিদ্র্য, যুদ্ধ, অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং দুর্বল শাসনব্যবস্থা এই সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। আফ্রিকা ও এশিয়ার অনেক অংশে, এই চ্যালেঞ্জগুলি একত্রিত হয়ে তীব্র খাদ্য ঘাটতি তৈরি করেছে। সংঘাত, খরা এবং বাস্তুচ্যুতির শিকার দেশগুলি প্রায়শই সবচেয়ে বেশি লড়াই করে, কারণ মানুষ কেবল খাদ্যের সুযোগই হারায় না, বরং তা উৎপাদন বা কেনার উপায়ও হারায়।
3
9
২০২৫ সালের বিশ্ব ক্ষুধা সূচক অনুয়ায়ী, বেশ কয়েকটি দেশ এখনও ‘উদ্বেগজনক’ বা ‘গুরুতর’ ক্ষুধা শ্রেণীতে পড়ে। যার স্কোর ৩১ থেকে ৪২.৬ পর্যন্ত। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলির মধ্যে রয়েছে সোমালিয়া, দক্ষিণ সুদান, মাদাগাস্কার, কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র এবং হাইতি। যারা দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা সঙ্কটের কারণে ভয়াবহ খাদ্যসঙ্কটে ভুগছে।
4
9
ক্ষুধার ক্ষেত্রে সোমালিয়া বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলির মধ্যে একটি। কয়েক দশকের সংঘাত, বারবার খরা এবং ব্যাপক বাস্তুচ্যুতির ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষ খাদ্য ও বিশুদ্ধ জলের সন্ধানে হিমশিম খাচ্ছেন। দুর্বল অবকাঠামো এবং বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ কৃষিকাজ এবং খাদ্য সরবরাহকে অত্যন্ত কঠিন করে তুলেছে।
5
9
বন্যা, হিংসা এবং অস্থিরতার কারণে দক্ষিণ সুদান ব্যাপক খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সঙ্গে লড়াই করছে। ভেঙে পড়া সরবরাহ শৃঙ্খল এবং ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাটের কারণে গ্রামীণ এলাকার মানুষের পক্ষে বাজার বা খাদ্য সহায়তা পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স স্কোর ৩৭.৫।
6
9
ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গো (ডিআরসি)-র স্কোরও ৩৭.৫। দেশটি প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ এবং উর্বর জমি থাকা সত্ত্বেও, ডিআরসির দীর্ঘ হিংসার ইতিহাস, দুর্বল অবকাঠামো এবং অনুন্নত গ্রামীণ এলাকা গভীর খাদ্য সঙ্কট তৈরি করেছে। সংঘাতের কারণে কৃষকরা প্রায়শই তাদের জমি ছেড়ে চলে যান এবং বাণিজ্য রুটগুলি অনিরাপদ।
7
9
৩৫.৭ স্কোর নিয়ে হাইতিও চরম ক্ষুধার শিকার। দারিদ্র্যের সঙ্গে দেশটির দীর্ঘ সংগ্রামের সঙ্গে হারিকেন এবং ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মিলিত হয়ে বারবার ফসল, ঘরবাড়ি এবং অবকাঠামো ধ্বংস করেছে। এর ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষ খাদ্যসঙ্কটে ভুগছেন।
8
9
এছাড়াও মাদাগাস্কার, চাদ, নাইজার, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, নাইজেরিয়া এবং পাপুয়া নিউ গিনিতেও ক্ষুধার মাত্রা ভয়াবহভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা গৃহযুদ্ধ, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি এবং অস্থিতিশীল অর্থনীতি মানুষকে দারিদ্র্য ও খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার চক্রে আটকে রেখেছে।
9
9
বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ খাদ্য উৎপাদনকারী দেশ ভারতেও অনেকে ক্ষুধার্ত থাকেন। ২০২৫ সালের বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে ২৫.৮ স্কোর নিয়ে ১০২ তম স্থানে থাকা ভারত ‘গুরুতর’ বিভাগে পড়ে। কৃষিক্ষেত্রে শক্তিশালী হওয়া সত্ত্বেও, দারিদ্র্য, শিশু অপুষ্টি, অসম খাদ্য বিতরণ এবং দুর্বল স্যানিটেশনের মতো চ্যালেঞ্জগুলি রয়ে গিয়েছে।