আজকাল ওয়েবডেস্ক: চাঁচাছোলা ভাষায় ভারতীয় বিচারব্যস্থার কড়া সমালোচনা করলেন ভারতের প্রধান বিচারপতি বিআর গাভাই। তাঁর মতে, ভারতীয় বিচারব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। বিচার পেতে দশক পেরিয়ে যায়, নির্দোষ মানুষ বছরের পর বছর হাজতবাস করেন। শনিবার হাদ্রারাবাদের নালসার বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে নিজের ভাষণে এই বাস্তবচিত্র তুলে ধরেন দেশের প্রধান বিচারপতি।
এদিন ভারতের প্রধান বিচারপতি ভূষণ রামকৃষ্ণ গাভাই বলেছেন, "আমাদের বিচারব্যবস্থা সংস্কার করার প্রয়োজন রয়েছে। তবে আমি আশা রাখি, দেশের মানুষ এবং আমাদের তরুণ মেধা এই সংকট মোকাবিলায় সামনের সারিতে থাকবে।"
"বিচার পেতে কখনও কখনও কয়েক দশক লেগে যায়। বহু ঘটনায় দেখা গিয়েছে, অভিযুক্ত বছরের পর বছর হাজতে কাটিয়েছেন, পরে নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন। এমন পরিস্থিতি একবিংশ শতকে মেনে নেওয়া যায় না।" এমনই বলেছেন বিচারপতি গাভাই।
আরও পড়ুন: ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণ: আপনার কাছে কি এই চার গুরুত্বপূর্ণ নথি আছে? তাহলেই...
তরুণ প্রজন্মের সামনে এদিন প্রধান বিচারপতি ভূষণ কামকৃষ্ণ গাভাইয়ের বার্তা, "বিদেশে পড়তে যাও, কিন্তু চেষ্টা করো স্কলারশিপে যাওয়ার। বাবা-মায় যেন আর্থিক কষ্টে না পড়েন।" একই সঙ্গে তরুণ আইনজীবীদের উদ্দেশে তাঁর অনুরোধ, "মেন্টর খোঁজো ক্ষমতা দেখে নয়, সততা দেখে। সততাই তোমার আসল দিশা।"
যুগ বদলাচ্ছে। রমরমিয়ে বাড়ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-র কারসাজি। ডেটা গোপনীয়তার মতো উদীয়মান ক্ষেত্রগুলির সঙ্গে আইনের দ্রুত বিবর্তনের প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন প্রধান বিচারপতি।
তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশ্যে বিচারপতি গাভাইয়ের পরামর্শ, "আইন পেশা মহৎ, গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু কখনও সহজ নয় এবং কোনও সরল পথ বা নিশ্চিত রিটার্ন নেই। পেশার দাবি হল, আপনাকে ক্রমাগত নিজেকে প্রমাণ করতে হবে, আদালতের কাছে, আপনার ক্লায়েন্টদের কাছে, আপনার সহকর্মীদের কাছে এবং প্রায়শই নিজের কাছে।" তাঁর মতে, "তুমিই তোমার পথ নিয়ে প্রশ্ন তুলবে। তোমাকে প্রশ্ন করা হবে। তোমাকে উপেক্ষা করা হবে। তুমি অদৃশ্য বোধ করবে, তবুও তুমি হাজির থাকবে, কারণ আইন এটাই দাবি করে, তোমার উপস্থিতি, তোমার অধ্যবসায়, সেই মুহূর্তগুলিতে তোমার বিশ্বাস, তুমি স্পষ্টতা, উদ্দেশ্য এবং জয়ের ঝলকও পাবে।"
আরও পড়ুন: এককালীন ১০ ও ১৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ: কোথায় রিটার্ন বেশি মিলবে, এসবিআই, পিএনবি নাকি বরোদা ব্যাঙ্কে?
বিচারপতি গাভাইয়ের মতে, দু'টি জিনিস তরুণ শিক্ষার্থীদের এই সংগ্রামে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে জারি রাখতে হবে। তিনি বলেন, "প্রথমটি হল আইনের মৌলিক বিষয়গুলো নিয়ে জ্ঞান অর্জন এবং ধারাবাহিকভাবে শেখা… মনে রাখবেন, আইন জানার কোন সংক্ষিপ্ত শর্টকাট নেই। মৌলিক বিষয়গুলো জানার কোন বিকল্প নেই।"
দ্বিতীয়টি হল, অন্যদের অভিজ্ঞতা থেকে শেখা। প্রধান বিচারপতি বলেন, "আমি সততার সঙ্গে এটা বলতে চাই। আমি আজ এখানে এসেছি, কেবল কঠোর পরিশ্রম করার কারণে নয়। হ্যাঁ, প্রচেষ্টা গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কিন্তু এই সত্যটিও গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে, কেউ আমার জন্য একটি দরজা খুলে দিয়েছে, এমন কেউ যিনি আমার মধ্যে কিছু দেখতে পাওয়ার আগেই আমার মধ্যে কিছু দেখতে পেয়েছিলেন। বিশ্বাস, সমর্থন, জ্ঞান ভাগ করে নেওয়ার সেই কাজটি আমার জীবন বদলে দিয়েছে।"
প্রধান বিচারপতি স্নাতকদের একদিন নিজেরাই পরামর্শদাতা হতে বলেন। তাঁর কথায়, "এইভাবে আমরা কেবল ক্যারিয়ারই নয়, বরং পেশার মধ্যে যত্নের একটি সম্প্রদায় তৈরি করি, যা উন্নীত করে, এমন একটি সম্প্রদায় যা ভয় দেখায় না।"
সমাবর্তন মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী রেবন্ত রেড্ডি, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি পিএস নারসিমহা এবং তেলঙ্গানা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি সুজয় পল।
