আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিহারে আসন্ন নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকা পর্যালোচনার সঙ্গে সঙ্গেই, নাগরিকত্বের বিষয়টি নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য বৈধ নথি নিয়ে বিভ্রান্তি বেড়েছে, কারণ অনেকেই ধরে নিয়েছেন যে, আধার, ভোটার আইডি, অথবা পাসপোর্টই যথেষ্ট - যদিও বাস্তবতা আরও জটিল।

ভারতে কোন নথি নাগরিকত্ব প্রমাণ করে?
ভারতে, এমন কোনও একক নথি নেই যা স্পষ্টভাবে নাগরিকত্ব প্রমাণ করে। তবে, নির্দিষ্ট কিছু নথি নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে গ্রহণ করা যেতে পারে।

১. ভারতীয় পাসপোর্ট
বিদেশ মন্ত্রক কর্তৃক একচেটিয়াভাবে ভারতীয় নাগরিকদের জন্য জারি করা পাসপোর্টে নাগরিকত্বের উল্লেখ থাকে এবং এর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি রয়েছে। এটি বিভিন্ন সরকারি প্রক্রিয়ায় ব্যাপকভাবে গৃহীত হয়। পাসপোর্ট হল ভারতের একমাত্র বিস্তৃত নথি যা নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে কাজ করে।

২. জাতীয়তা শংসাপত্র
এই শংসাপত্রটি বিশেষ ক্ষেত্রে জেলা কর্মকর্তা বা রাজ্য সরকার দ্বারা জারি করা হয়, স্পষ্টভাবে বলা হয় যে- ব্যক্তি একজন ভারতীয় নাগরিক। এটি আদালত বা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা জারি করা হতে পারে, এবং কখনও কখনও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক দ্বারা জারি করা হতে পারে। ভারতে, জাতীয়তা সনদপত্র কেবলমাত্র সীমিত এবং নির্দিষ্ট ক্ষেত্রেই জারি করা হয়। এগুলি এতই কম দেওয়া হয় যে এর ইস্যু সম্পর্কে কোনও সরকারি তথ্য নেই।

আরও পড়ুন-  প্রেমিকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছবি, তাও স্বামীর ফোনে, প্রমাণ লুকোতে ছিনতাইয়ের বিরাট নাটক! তারপর কী হল?

যখন কোনও ব্যক্তিকে সরকারি চাকরিতে, বিশেষ কোটার অধীনে কোনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য, অথবা কোনও আইনি প্রক্রিয়া চলাকালীন নাগরিকত্ব প্রমাণের প্রয়োজন হয় এবং পাসপোর্ট বা নাগরিকত্ব সনদের মতো অন্যান্য বৈধ প্রমাণের অভাব থাকে, তখন জাতীয়তা সনদের প্রয়োজন হতে পারে। বিদেশি পিতা-মাতার ঘরে ভারতে জন্মগ্রহণকারী ব্যক্তিদের নাগরিকত্ব প্রতিষ্ঠার জন্যও এটি প্রয়োজন।

আবেদনপত্রের সঙ্গে প্রয়োজনীয় নথিগুলির মধ্যে রয়েছে:
- জন্ম সনদ
- পিতামাতার নাগরিকত্বের প্রমাণ (পাসপোর্ট বা ভোটার আইডি)
- স্কুল সার্টিফিকেট
- আবাসিক প্রমাণ (রেশন কার্ড, আধার, বা ভোটার আইডি)

৩. নাগরিকত্ব সার্টিফিকেট/রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট
১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের ৫ এবং ৬ ধারার অধীনে ভারতীয় নাগরিকত্ব অর্জনকারী বিদেশি নাগরিকদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক কর্তৃক প্রদত্ত।

৪. জন্ম সার্টিফিকেট
যদিও এই নথিতে জন্ম তারিখ এবং স্থান উল্লেখ করা হয়েছে, তাই কেবল আংশিকভাবে নাগরিকত্ব প্রমাণ করে। যদি পিতা-মাতা ভারতীয় নাগরিক হন এবং নাগরিকত্ব আইনের শর্ত পূরণ করেন তবে নাগরিকত্ব নিশ্চিত করা হয়।

কোন কোন নথি নাগরিকত্ব প্রমাণ হয় না?

আধার কার্ড: এটি কেবল পরিচয় এবং বাসস্থানের প্রমাণ হিসেবে কাজ করে।

ভোটার আইডি: এটি ভোট দেওয়ার অধিকার প্রদান করে কিন্তু নাগরিকত্ব নিশ্চিত করে না।

ড্রাইভিং লাইসেন্স: এটি কেবল গাড়ি চালানোর অধিকারকে প্রমাণ করে।

ভারতীয় নাগরিকত্ব কীসের উপর ভিত্তি করে হয়?
ভারতীয় নাগরিকত্ব ১৯৫৫ সালের ভারতীয় নাগরিকত্ব আইন এবং এর সংশোধনী দ্বারা নির্ধারিত হয়, যা জন্ম, উত্তরাধিকার, নিবন্ধন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক কর্তৃক নাগরিকত্ব এবং আঞ্চলিক অন্তর্ভুক্তির উপর ভিত্তি করে তৈরি।

ভারতে নাগরিকত্ব কেন বিতর্কিত বিষয় হয়ে উঠেছে?
বিহারের চলমান ভোটার তালিকা আপডেটের সময় নির্বাচন কমিশন বিহারের বেশ কয়েকটি অংশে নোটিশ জারি করার পর সাম্প্রতিক বিতর্ক আরও তীব্র হয়ে ওঠে, যেখানে বাসিন্দাদের ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রমাণের নথি জমা দিতে বলা হয়। এমনকি বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টেও পৌঁছেছে।

ভারতের মতো দেশে, যেখানে লক্ষ লক্ষ মানুষ দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করে এবং আনুষ্ঠানিক শিক্ষার অভাব রয়েছে, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায়, নাগরিকত্ব প্রমাণ করা একটি গুরুতর চ্যালেঞ্জের। অনেক লোকের, বিশেষ করে যারা ১৯৭০ এবং ৮০ এর দশকে জন্মগ্রহণ করেছেন, তাদের জন্ম শংসাপত্র বা পাসপোর্ট নেই, যা সরকারের নেতৃত্বে পরিচালিত যেকোনও নাগরিকত্ব যাচাই অভিযানকে ঘিরে আশঙ্কা তৈরি করে।

অসম, ত্রিপুরা এবং পশ্চিমবঙ্গের মতো উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলিতে, বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে আসা অভিবাসীদের ক্ষেত্রে, অবৈধ অভিবাসন নিয়ে উত্তেজনা দীর্ঘদিন ধরেই বিদ্যমান। জনসংখ্যার ভারসাম্য এবং স্থানীয় অধিকার নিয়ে এই উদ্বেগগুলি কয়েক দশক ধরে বিরোধকে আরও তীব্র করে তুলেছে। এনআরসি (জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন) বাস্তবায়ন এবং সিএএ (সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন) প্রবর্তনের ফলে বিভাজন আরও গভীর হয়েছে।

ভারতে নাগরিকত্ব বিতর্কের উত্থানের কারণ কী?
১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের পর থেকে, ভারতে ১৯৮৬, ২০০৩, ২০০৫, ২০১৫ এবং ২০১৯ সালে বেশ কয়েকটি সংশোধনী দেখা গিয়েছে, যার প্রতিটিতে নাগরিকত্ব সম্পর্কিত কিছু নির্দিষ্ট শব্দ এবং সংজ্ঞা পরিবর্তন করা হয়েছে।

১৯৮৭ সাল পর্যন্ত, ভারতে জন্ম নেওয়া প্রতিটি শিশু স্বাভাবিকভাবে একজন ভারতীয় নাগরিক হিসেবে বিবেচিত হত।

১৯৮৭ সালের পর, নবজাতকের পিতা-মাতার মধ্যে অন্তত একজন ভারতীয় নাগরিক হওয়া বাধ্যতামূলক হয়ে পড়ে।

২০০৪ সালের সংশোধনীর পর, নবজাতকের পিতা-মাতা উভয়কেই হয় ভারতীয় নাগরিক হতে হবে অথবা বৈধ অভিবাসী হতে হবে।

এই পরিবর্তনগুলি পুরানো এবং নতুন উভয় নাগরিকের মর্যাদা নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে।

অসমের এনআরসি মামলা আসলে কী?
২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত অসমে পরিচালিত এনআরসি প্রক্রিয়ায় ১৯ লক্ষেরও বেশি লোকের নাম নাগরিকত্ব তালিকা থেকে বাদ পড়েছিল। এর ফলে দেশব্যাপী উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল যে, এনআরসি অন্যান্য রাজ্যেও কার্যকর হতে পারে। নথিপত্র হারিয়ে যাওয়া বা পুরনো রেকর্ডে ত্রুটি থাকার কারণে অনেক পরিবার উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিল।

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) ২০১৯ কী?
সিএএ আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি এবং খ্রিস্টান শরণার্থীদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দিয়েছে। বাদ দেওয়া হয়েছে মুসলমানদের। এই বাদ পড়ার ফলে দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ, অস্থিরতা এবং নিরাপত্তাহীনতার সৃষ্টি হয়েছে।