আজকাল ওয়েবডেস্ক:  "বন্ধুর সঙ্গে অন্ধকার, নির্জন জায়গায় যেও না—ওই মেয়েটি যদি ধর্ষণের শিকার হয়?" কিংবা "রাতের পার্টিতে যেও না, তোমার ধর্ষণ বা গণধর্ষণ হতে পারে"—এই ধরনের বক্তব্য সম্বলিত একাধিক পোস্টার ঘিরে উত্তাল হয়ে উঠেছে গুজরাটের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিসর। আহমেদাবাদ শহরের চাঁদলোদিয়া ও সোলা এলাকার রাস্তার ডিভাইডারে এই পোস্টারগুলি লাগানো হয়েছিল, যার তলায় আহমেদাবাদ ট্রাফিক পুলিশের নাম স্পনসর হিসেবে উল্লেখ ছিল।

পোস্টারগুলোর বিষয়বস্তু প্রকাশ্যে আসতেই প্রবল ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই বলছেন, এটি একধরনের ভিকটিম ব্লেমিং—যেখানে নারীদের নিরাপত্তা দেওয়ার বদলে তাদেরই ঘরবন্দি থাকতে বলা হচ্ছে। রাজনীতিকরা ও নাগরিক সমাজ সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং প্রশ্ন তোলেন, গুজরাটে নারীদের নিরাপত্তার অবস্থা কতটা ভয়াবহ হলে এমন বার্তা প্রচার করা হয়।

পুলিশ ও NGO-র অবস্থান:

যদিও এই বিতর্ক মাথাচাড়া দেওয়ার পর, আহমেদাবাদ ট্রাফিক পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ নেয়। তারা জানায়, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘সতর্কতা’-কে শুধুমাত্র ট্রাফিক সচেতনতা প্রচারের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, যৌন হিংসা সম্পর্কিত কোনো বক্তব্যের জন্য নয়। ফলে পুলিশের দাবি অনুযায়ী, এই সংস্থার বিরুদ্ধে কড়া সতর্কতা জারি করা হয়েছে এবং বিতর্কিত পোস্টারগুলো তাৎক্ষণিকভাবে সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

আহমেদাবাদ ট্রাফিক বিভাগের পশ্চিমাঞ্চলের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার নীতা দেশাই বলেন, “সতর্কতা নামক এনজিও আমাদের অনুমতি নিয়েছিল স্কুল ও কলেজে ট্রাফিক সচেতনতা কর্মসূচি চালানোর জন্য। কিন্তু তারা যেসব পোস্টার আমাদের দেখিয়েছিল, তার মধ্যে এমন কোনো যৌন হিংসামূলক বার্তা ছিল না। তারা আমাদের অজান্তেই এই ধরনের পোস্টার রাস্তায় লাগিয়ে দেয়।” যৌথ পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) এন এন চৌধুরী এক বিবৃতিতে জানান, “এই ধরনের বার্তার অনুমোদন আমরা দিইনি। পোস্টারগুলো নজরে আসার পরই সেগুলি সরিয়ে ফেলা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট এনজিওকে ভবিষ্যতে এমন কিছুর পুনরাবৃত্তি না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”

আরও পড়ুন: দিল্লির হাসপাতালে প্রয়াত শিবু সোরেন, ঝাড়খণ্ডের রাজনীতিতে শোকের ছায়া

রাজনীতির মোড়: বিজেপি সরকারকে আক্রমণ AAP-এর

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গুজরাটের আম আদমি পার্টি (AAP) বিজেপি সরকারকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছে। তারা বলেছে, এই পোস্টার গুজরাটে নারীদের নিরাপত্তাহীনতার বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছে। AAP-র বিবৃতিতে বলা হয়, “বিজেপি সরকার নারী ক্ষমতায়নের কথা বললেও, বাস্তবে গুজরাটে মহিলারা প্রতিদিন ভয়ংকর অপরাধের শিকার হচ্ছেন। গত তিন বছরে রাজ্যে ৬,৫০০-র বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে ৩৬টির বেশি গণধর্ষণের কেস রয়েছে। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে পাঁচটির বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে।”

পোস্টারগুলিকে সামনে এনে তারা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন রেখেছে—“আপনার কথা অনুযায়ী গুজরাট নারীদের জন্য নিরাপদ, তাহলে এমন পোস্টার কেন লাগানো হচ্ছে যেখানে মহিলাদের রাতের বেলায় ঘর থেকে না বেরোতে বলা হচ্ছে? আদৌ কি গুজরাটে মহিলারা নিরাপদ?”

সমাজের প্রতিক্রিয়া:

সোশ্যাল মিডিয়ায় বহু সাধারণ মানুষ ও কর্মী সংগঠন এই ঘটনাকে চরম দায়িত্বজ্ঞানহীনতার উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেছেন।
নারী অধিকারকর্মীরা বলেছেন, “এই ধরনের বার্তা নারীকে সুরক্ষার বদলে লজ্জা ও ভয়ের মধ্যে ঠেলে দেয়। নিরাপত্তা যদি দিতে না পারে প্রশাসন, তবে দোষ নারীর পোশাক বা চলাফেরা নয়, প্রশ্ন উঠবে সরকারের ভূমিকা নিয়েই।” যদিও ট্রাফিক পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে দায় এড়াতে চায়, তবুও এই ঘটনা গুজরাটে নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগের বার্তা দেয়। সচেতনতা প্রচারের নামে ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি না করে, বাস্তব নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই প্রশাসনের প্রথম কর্তব্য—এমনটাই মনে করছেন অধিকাংশ সচেতন নাগরিক।