আজকাল ওয়েবডেস্ক: মাতৃত্বের অনুভূতি জীবনের অন্যতম সেরা অভিজ্ঞতা। গর্ভে এক নতুন প্রাণ বেড়ে ওঠার এই ন’মাস প্রত্যেক হবু মায়ের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে এই সময়েই শরীরে একাধিক পরিবর্তন আসে। প্রাকৃতিকভাবেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কিছুটা কমে যায়, যার ফলে নানা ধরনের সংক্রমণের আশঙ্কাও বেড়ে যায়। এই সংক্রমণগুলি কেবল মায়ের জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ নয়, গর্ভস্থ ভ্রূণের স্বাস্থ্যেও গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই এই সময় মা এবং গর্ভস্থ ভ্রূণের সুরক্ষায় বাড়তি নজরদারি অপরিহার্য। চিকিৎসকদের মতে, কয়েকটি সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললেই এই ঝুঁকি অনেকটাই এড়ানো সম্ভব।

পরিচ্ছন্নতাই প্রথম রক্ষাকবচ
বিশেষজ্ঞদের মতে, সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রথম এবং সবচেয়ে কার্যকর উপায় হল পরিচ্ছন্নতা।
হাত ধোওয়া: বাইরে থেকে বাড়ি ফিরে, খাবার খাওয়ার আগে ও পরে, শৌচাগার ব্যবহারের পর এবং কাঁচা মাছ-মাংস ধরার পর অবশ্যই সাবান দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধুতে হবে। হাতের কাছে জল বা সাবান না থাকলে অ্যালকোহল-যুক্ত স্যানিটাইজার ব্যবহার করা জরুরি।
ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি: পরিষ্কার পোশাক পরা এবং নিজের চারপাশ পরিচ্ছন্ন রাখাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুন: স্ত্রীর পিঠ জিভ দিয়ে চেটে দেয় পুরুষ, স্ত্রী যদি পাল্টা লেহন করে, তবেই হয় মিলন! পৃথিবীর একমাত্র জীবিত ড্রাগন এরাই

খাদ্য নিয়ে বিশেষ সতর্কতা
গর্ভাবস্থায় খাদ্যের মাধ্যমে ছড়ানো সংক্রমণ বা ‘ফুড পয়েজনিং’ অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে। তাই খাবার ও পানীয়ের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।
সঠিকভাবে রান্না: মাংস, মাছ এবং ডিম সম্পূর্ণ সেদ্ধ করে খেতে হবে। আধসেদ্ধ বা কাঁচা খাবার, যেমন সাশিমি বা কাঁচা ডিমের সস দেওয়া স্যালাড এড়িয়ে চলুন।
পাস্তুরিত খাবার: দুধ এবং দুগ্ধজাত দ্রব্য কেনার আগে দেখে নিন তা পাস্তুরিত কি না। অপাস্তুরিত দুধ বা চিজ়ে ক্ষতিকারক ব্যাকটিরিয়া থাকতে পারে।
ফল ও সবজি: ফল এবং সবজি খাওয়ার আগে পরিষ্কার জলে ভালভাবে ধুয়ে নিতে হবে। সম্ভব হলে খোসা ছাড়িয়ে খাওয়া নিরাপদ।
পানীয় জল: সব সময় পরিস্রুত বা ফোটানো জল পান করুন। বাইরের অজানা উৎস থেকে জল খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। রাস্তার কাটা ফল বা শরবত এড়িয়ে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ।

পরিবেশ ও পরিজনদের থেকেও সতর্ক থাকুন
কেবলমাত্র খাবার বা জল থেকেই নয়, সংক্রমণ ছড়াতে পারে পরিবেশ বা অসুস্থ ব্যক্তির থেকেও।
অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শ: বাড়িতে বা কর্মক্ষেত্রে কারও সর্দি-কাশি, জ্বর বা অন্য কোনও সংক্রামক রোগ হলে তাঁর থেকে দূরত্ব বজায় রাখুন। ভিড় জায়গা বা হাসপাতাল যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন।
পোষ্য থেকে সাবধান: বাড়িতে পোষ্য, বিশেষত বিড়াল থাকলে তার মলমূত্র পরিষ্কার করা থেকে বিরত থাকুন। এতে ‘টক্সোপ্লাজমোসিস’ নামক সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে, যা গর্ভস্থ শিশুর জন্য মারাত্মক হতে পারে। বাগানে কাজ করার সময়ও হাতে দস্তানা পরা উচিত।

টিকাকরণ এবং চিকিৎসকের পরামর্শ
গর্ভাবস্থায় কোন টিকা নেওয়া নিরাপদ, তা নিয়ে অনেকেরই সংশয় থাকে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী, এই সময়ে ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং টিটেনাস, ডিপথেরিয়া ও পারটুসিস (টিডিএপি) টিকা নেওয়া মা ও শিশু উভয়ের জন্যই সুরক্ষিত। তবে যে কোনও টিকা নেওয়ার আগে অবশ্যই স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে নেওয়া আবশ্যক। পাশাপাশি, শরীরের কোনও রকম অস্বাভাবিকতা বা অসুস্থতার লক্ষণ দেখা দিলে অবহেলা না করে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।