আজকাল ওয়েবডেস্ক: ইদানিং স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের অন্দরমহলে ‘গাট হেলথ’ বা অন্ত্রের স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে। আর এই আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে মূলত দু’টি শব্দ- প্রোবায়োটিক এবং প্রিবায়োটিক। অনেকেই এই দু’টিকে এক বলে ভুল করেন। বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য পত্রিকার পাতা, সর্বত্রই এদের জয়জয়কার। কিন্তু আদতে এই দু’টি জিনিস সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাহলে এদের মধ্যে পার্থক্যটা ঠিক কোথায় এবং আমাদের শরীরের জন্য কোনটি বেশি উপকারী? চলুন, এই বিষয়টি বিশদে জেনে নেওয়া যাক।
আরও পড়ুন: মধুচক্র চালানোয় অভিযুক্ত অভিনেত্রী অনুষ্কা দাস! সেক্স র‍্যাকেট থেকে উদ্ধার বাংলা সিরিয়ালের আরও ২ নায়িকা! তুলকালাম মহারাষ্ট্রে 
প্রোবায়োটিক: অন্ত্রের বন্ধু জীবাণু
সহজ ভাষায় বলতে গেলে, প্রোবায়োটিক হল জীবন্ত এবং উপকারী ব্যাকটেরিয়া ও ইস্ট। এই জীবাণু আমাদের অন্ত্রে বাস করে এবং হজমশক্তি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এদেরকে বলা হয় ‘বন্ধু’ ব্যাকটেরিয়া। আমাদের অন্ত্রে কোটি কোটি জীবাণু বাস করে, যার মধ্যে কিছু উপকারী এবং কিছু অপকারী। প্রোবায়োটিক এই উপকারী জীবাণুদের সংখ্যা বৃদ্ধি করে অন্ত্রের ভারসাম্য বজায় রাখে।
সাধারণত গাঁজন বা ফারমেন্টেশন প্রক্রিয়ায় তৈরি হওয়া খাবারে প্রোবায়োটিক প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। যেমন- দই, ঘোল, বাটারমিল্ক, আচার, কিমচি, কোম্বুচা ইত্যাদি। অসুস্থ হলে বা অ্যান্টিবায়োটিক খেলে অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়া প্রায়ই নষ্ট হয়ে যায়। সেই ঘাটতি পূরণ করতে প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার বা সাপ্লিমেন্ট অত্যন্ত কার্যকর।
প্রিবায়োটিক: উপকারী জীবাণুদের খাদ্য
অন্যদিকে, প্রিবায়োটিক কিন্তু কোনও জীবাণু নয়। এগুলি হল এক বিশেষ ধরনের ডায়েটারি ফাইবার বা শর্করা, যা আমাদের শরীর হজম করতে পারে না। কিন্তু এই ফাইবারই অন্ত্রে থাকা উপকারী প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়ার প্রধান খাদ্য। অর্থাৎ, প্রিবায়োটিক হল সেই সার যা অন্ত্রের ‘বন্ধু’ ব্যাকটেরিয়াদের পুষ্টি জুগিয়ে তাদের বংশবৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
প্রাকৃতিকভাবেই বেশ কিছু খাবারে প্রিবায়োটিক পাওয়া যায়। যেমন- পেঁয়াজ, রসুন, কলা (বিশেষত কাঁচকলা), ওটস, বার্লি, আপেল, ফ্ল্যাক্সসিড এবং বিভিন্ন শাকসবজি। এই খাবারগুলি নিয়মিত খেলে অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা স্বাভাবিকভাবেই বাড়তে থাকে।
আরও পড়ুন: মধুচক্র চালানোয় অভিযুক্ত অভিনেত্রী অনুষ্কা দাস! সেক্স র‍্যাকেট থেকে উদ্ধার বাংলা সিরিয়ালের আরও ২ নায়িকা! তুলকালাম মহারাষ্ট্রে 
পার্থক্যটা ঠিক কোথায়?
বিষয়টিকে একটি বাগানের সঙ্গে তুলনা করলে বুঝতে সুবিধা হবে। প্রোবায়োটিক হল বাগানে লাগানো নতুন চারাগাছ, যা বাগানের সৌন্দর্য এবং স্বাস্থ্য বৃদ্ধি করে। আর প্রিবায়োটিক হল সেই গাছের জন্য প্রয়োজনীয় সার এবং জল। সার-জল ছাড়া যেমন চারাগাছ বাঁচতে বা বাড়তে পারে না, তেমনই প্রিবায়োটিক ছাড়া প্রোবায়োটিক অন্ত্রে টিকে থাকতে বা বংশবৃদ্ধি করতে পারে না। প্রোবায়োটিক অন্ত্রে নতুন উপকারী ব্যাকটেরিয়া যোগ করে, আর প্রিবায়োটিক আগে থেকে উপকারী ব্যাকটেরিয়াদের শক্তি জোগায়।
আরও পড়ুন: মধুচক্র চালানোয় অভিযুক্ত অভিনেত্রী অনুষ্কা দাস! সেক্স র‍্যাকেট থেকে উদ্ধার বাংলা সিরিয়ালের আরও ২ নায়িকা! তুলকালাম মহারাষ্ট্রে 
কোনটি বেশি উপকারী?
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রশ্নটিই আসলে অবান্তর। একটিকে ছাড়া অন্যটি অসম্পূর্ণ। অন্ত্রের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য প্রোবায়োটিক এবং প্রিবায়োটিক, দু’টিই সমানভাবে জরুরি। আপনি যদি প্রচুর পরিমাণে প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার খান, কিন্তু অন্ত্রে তাদের বেঁচে থাকার মতো খাবার বা প্রিবায়োটিক না থাকে, তবে সেই প্রোবায়োটিকের কার্যকারিতা অনেকটাই কমে যাবে। আবার, শুধু প্রিবায়োটিক খেলে তা অন্ত্রে থাকা ব্যাকটেরিয়াদের পুষ্টি জোগাবে ঠিকই, কিন্তু যদি উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা আগে থেকেই কম থাকে, তবে আশানুরূপ ফল মিলবে না।
বরং এই দু’টির যুগলবন্দিই হল সুস্থ অন্ত্রের চাবিকাঠি। যখন কোনও খাবারে প্রোবায়োটিক এবং প্রিবায়োটিক একসঙ্গে থাকে, তখন তাকে ‘সিনবায়োটিক’ বলা হয়, যা স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে উপকারী। যেমন, কলার সঙ্গে দই মিশিয়ে খাওয়া একটি চমৎকার সিনবায়োটিকের উদাহরণ।
সুতরাং, কোনও একটিকে বেছে না নিয়ে, সুষম খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে এই দুই উপাদানই পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্রহণ করা উচিত। এতেই অন্ত্র সুস্থ থাকবে এবং তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে সার্বিক স্বাস্থ্যের উপর।