আজকাল ওয়েবডেস্ক: ১৯৬৫ সাল। বয়স মাত্র ২৭। স্কটল্যান্ডের ডান্ডির রয়্যাল ইনফার্মারির ইউনিভার্সিটি ডিপার্টমেন্ট অফ মেডিসিনে ভর্তি হন এক যুবক। নাম তাঁর অ্যাঙ্গাস বারবিয়েরি। হাসপাতালে ভর্তির নেপথ্যে একটাই কারণ স্থূলতা। সেই সময় তাঁর ওজন ছিল প্রায় ৪৫৬ পাউন্ড, অর্থাৎ ২০৬ কেজিরও বেশি। অতিরিক্ত ওজনের সমস্যায় জর্জরিত বারবিয়েরির সামনে তখন দু’টি মাত্র পথ। হয় জটিল অস্ত্রোপচার করে শরীর থেকে মেদ কেটে বার করা, নয়তো চরম আত্মনিয়ন্ত্রণ। অস্ত্রোপচার নয়, বরং দ্বিতীয় পথটাই বেছে নিলেন তিনি। শুরু করলেন উপবাস।
আরও পড়ুন: ছেলের শুক্রাণুতে সন্তানধারণ করলেন ৭০-এর অভিনেত্রী! সন্তান না নাতি? তুমুল বিতর্ক
যখন শুরু করেছিলেন তখন জানতেন না কতদিন না খেয়ে থাকতে পারবেন। একদিন দু’দিন করে পার হতে হতে পেরিয়ে গেল ৩৮২ দিন! অর্থাৎ টানা এক বছরেরও বেশি সময় বারবিয়েরি কোনও শক্ত খাবার মুখে তোলেননি। তাঁর খাদ্যতালিকায় ছিল শুধু জল, চা, কফি ও ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট। উপোস চলাকালীন পুরো সময়টাই চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে ছিলেন তিনি। তাঁর রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা, ইলেকট্রোলাইট অর্থাৎ খনিজ লবণের পরিমাণ এবং অন্যান্য শারীরবৃত্তীয় উপাদানের মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করতেন চিকিৎসকরা। এক বছর এক মাসের পর উপবাস শেষ হয় ১৯৬৬ সালের জুলাই মাসে। অসম্ভবকে সম্ভব করে তখন তাঁর ওজন দাঁড়ায় মাত্র ১৮০ পাউন্ডে, অর্থাৎ প্রায় ৮১ কেজি। ততদিনে স্রেফ খাবার না খেয়েই তিনি ঝরিয়ে ফেলেন ২৭৬ পাউন্ড বা প্রায় ১২৫ কেজি ওজন। যা একলপ্তে ওজন কমানোর বিশ্ব রেকর্ড হয়ে যায়।
আরও পড়ুন: ছেলের শুক্রাণুতে সন্তানধারণ করলেন ৭০-এর অভিনেত্রী! সন্তান না নাতি? তুমুল বিতর্ক
অদ্ভুত বিষয় হল, এতদিন কিছু না খেয়ে থাকলেও তাঁর শরীরে কোনও বড় ধরনের জটিলতা দেখা দেয়নি। চিকিৎসকেরা জানান, এর কারণ ছিল ‘কিটোসিস’ নামক একটি প্রাকৃতিক বিপাক প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় খাদ্যের অনুপস্থিতিতে শরীর নিজের চর্বিকেই শক্তির উৎস হিসেবে ব্যবহার করে। কঠিন খাবার কিংবা ফাইবার সমৃদ্ধ খাদ্য না খাওয়ায় কমে যায় মলের পরিমাণ। তাঁর মলত্যাগ হত ৪০ থেকে ৫০ দিন অন্তর।
আরও পড়ুন: ১২ কেজির বিশাল স্তন! ফিট হয় না কোনও জামা! কেন এমন হল? তরুণীর কষ্ট শুনলে চোখে জল আসবে
ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, চিকিৎসকদের বর্ণনায়, এই উপবাস পালনের সময় বারবিয়েরি ছিলেন আশ্চর্য রকমের সহনশীল, আত্মবিশ্বাসী। মনোবলও ছিল ভরপুর। যেদিন তিনি এই দীর্ঘ উপবাস ভাঙেন সেদিনের খাবারও ছিল অতি সাধারণ। একটি সেদ্ধ ডিম, মাখন লাগানো রুটি আর এক কাপ কালো কফি।
১৯৭৩ সালে বিজ্ঞানপত্রিকা পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিক্যাল জার্নালে-এ এই কেসটি প্রকাশিত হয়। আজও চিকিৎসাশাস্ত্রে পড়ানো হয় ঘটনাটি। তবে এখন এই ধরনের দীর্ঘ উপবাস রাখতে নিষেধ করেন চিকিৎসকেরা। এমনকী বর্তমান চিকিৎসাপদ্ধতি অনুযায়ী এটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তবুও এই ঘটনা মানবদেহের সহনক্ষমতা ও জৈব প্রক্রিয়ার এক আশ্চর্য দৃষ্টান্ত হয়ে রয়ে গিয়েছে।
জানা যায়, পরবর্তী কয়েক বছর বারবিয়েরি মোটের উপর  নিজের ওজন নিয়ন্ত্রণেই রাখতে পেরেছিলেন। আজও যাঁরা স্থূলতা নিয়ে গবেষণা করেন, তাঁদের কাছে অ্যাঙ্গাস বারবিয়েরির এই দৃষ্টান্ত এক অভাবনীয় ঘটনা। অনেকেই মনে করেন মানসিক দৃঢ়তা ও চিকিৎসকদের সঠিক তত্ত্বাবধানের সমন্বয়ে কখনও কখনও অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়, এই ঘটনা তারই প্রমাণ।