আজকাল ওয়েবডেস্ক: দুপুরে খাবার খাওয়ার পর একটু ভাত ঘুম না দিলে কি চলে? বাঙালির এই চিরাচরিত অভ্যাসকে অলসতার লক্ষণ বলে দাগিয়ে দেওয়া হত এতকাল। কিন্তু নতুন এক গবেষণা বলছে, এই সামান্য দিবানিদ্রাই আপনার মস্তিষ্কের বয়সকে কমিয়ে দিতে পারে প্রায় সাড়ে ছয় বছর!
বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, ৬০ বছর বয়সের পর প্রতি বছর মস্তিষ্কের আয়তন প্রায় ০.৫ শতাংশ হারে সঙ্কুচিত হতে থাকে। এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু সম্প্রতি বিজ্ঞানপত্রিকা ‘স্লিপ হেলথ’ জার্নালে প্রকাশিত এক যুগান্তকারী গবেষণায় জানা গিয়েছে, সহজেই ঘিলু সংকুচিত হওয়ার এই প্রক্রিয়াকে শ্লথ করে দেওয়া যায়।

আরও পড়ুন: ‘ধরবে নাকি?’ পুরুষাঙ্গ দেখিয়ে কুপ্রস্তাব দেন প্রযোজক! টাকার বিনিময়ে সঙ্গমও করেন কামসূত্রের নায়িকা?
আরও পড়ুন: ২৬৪৫ লিটার স্তন্য উৎপন্ন হয় বধূর শরীরে! 'রোজ রাতে ৩ ঘণ্টা..' বিপুল দুগ্ধ উৎপাদনের রহস্য ফাঁস করলেন নিজেই

গবেষকরা প্রায় ৩ লক্ষ ৮০ হাজার মানুষের জেনেটিক ডেটা নিয়ে একটি সমীক্ষা চালান। এই বিশেষ সমীক্ষার সাহায্যে তাঁরা দিবানিদ্রা এবং মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের মধ্যে একটি প্রত্যক্ষ কার্য-কারণ সম্পর্ক খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। শুধুমাত্র জেনেটিক মার্কার বিশ্লেষণ করে তাঁরা দেখতে চেয়েছিলেন, যাঁদের জিনে দিবানিদ্রার প্রবণতা রয়েছে, তাঁদের মস্তিষ্কের গঠনে কোনও বিশেষত্ব আছে কি না।
ফলাফল ছিল চমকে দেওয়ার মতো। দেখা গিয়েছে, যে ব্যক্তিদের মধ্যে জিনগতভাবেই দিবানিদ্রার প্রবণতা রয়েছে, তাঁদের মস্তিষ্কের গড় আয়তন অন্যদের তুলনায় ১৫.৮ ঘন সেন্টিমিটার বেশি। সহজ ভাষায় বললে একটি সদ্যোজাত শিশুর সঙ্গে একটি সাড়ে ছয় বছর বয়সি শিশুর মস্তিষ্কের ফারাক যতটা এটা ঠিক ততটাই। এই আবিষ্কার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ মস্তিষ্কের আয়তন কমে যাওয়ার সঙ্গে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতার অবক্ষয় এবং ডিমেনশিয়ার মতো রোগের ঝুঁকি ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
কিন্তু ঘুম কীভাবে মস্তিষ্ককে রক্ষা করে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, মস্তিষ্কের আয়তন কমে যাওয়া বার্ধক্য এবং স্নায়বিক অবক্ষয়ের একটি অন্যতম প্রধান লক্ষণ। ঘুম, মাথাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার কাজ করে। ঠিক যেমন কম্পিউটার রিসেট করলে আগের জমে থাকা বাতিল ফাইল মুছে যায় এবং কম্পিউটারের কার্যকারিতা বাড়ে, ঘুমও কিছুটা তেমন ভাবেই কাজ করে। ঘুমের সময় মস্তিষ্ক স্নায়ুকোষের থেকে ক্ষতিকারক বর্জ্য পরিষ্কার করে, প্রদাহ কমায় এবং কোষের সংযোগকারী অঞ্চলকে রক্ষা করে। বিজ্ঞানীদের অনুমান, এই কারণেই যাঁরা নিয়মিত দিবানিদ্রায় অভ্যস্ত, তাঁদের মস্তিষ্কের গঠন দীর্ঘদিন পর্যন্ত সুগঠিত থাকে।

কাজেই যদি মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য এবং কর্মক্ষমতা ধরে রাখতে চান, তবে ভরদুপুরে খাবার খাওয়ার পর ছোট্ট একটি ভাতঘুম দিয়ে নিন। তবে খেয়াল রাখবেন, এই ঘুম যেন রাতের ঘুমে ব্যাঘাত না ঘটায়। ঘরে আলো কমিয়ে, মোবাইল ফোন দূরে সরিয়ে, ১৫-২০ মিনিটের জন্য একটি ছোট্ট ঘুম উপকার করবে, অপকার নয়। অতএব, দিবানিদ্রা অলসতা নয়। বরং এটি আপনার মস্তিষ্ককে আরও তরুণ, সতেজ করে তোলার এক চাবিকাঠি।