আজকাল ওয়েবডেস্ক: ছুটতে থাকে সমাজের গতির সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে জীবন কখন যে যন্ত্র হয়ে উঠেছে, তার হিসেব রাখার ফুরসত কই? শহর থেকে মফস্বল, সর্বত্রই এক ইঁদুরদৌড়। এই নিরন্তর ছুটে চলার মধ্যে যে শরীর একটু একটু করে ক্ষয়ে যাচ্ছে, সেদিকে তাকানোর সময় নেই। আর এই অসচেতনতার সুযোগেই ধমনীর অন্দরে বাসা বাঁধে নীরব ঘাতক- করোনারি আর্টারি ডিজিজ। অলক্ষ্যে, খুব সন্তর্পণে হৃৎপিণ্ডের রক্তবাহী নালীর দেওয়ালে জমতে থাকে চর্বির আস্তরণ। শরীর কিন্তু একেবারে শেষ মুহূর্তে জানান দেয় না, বরং তার অনেক আগে থেকেই পাঠাতে থাকে ছোট ছোট সঙ্কেত। বিপদের সেই চিঠি চিনে নিতে পারার উপরেই নির্ভর করে বহু মানুষের জীবন-মরণ।
হৃৎপিণ্ডের ধমনী সংকীর্ণ হয়ে এলে হৃদপেশিগুলিতে রক্ত ও অক্সিজেনের জোগান কমে যায়। এই ঘাটতিই একাধিক উপসর্গের জন্ম দেয়, যেগুলিকে চিনে রাখা অত্যন্ত জরুরি।
আরও পড়ুন: মধুচক্র চালানোয় অভিযুক্ত অভিনেত্রী অনুষ্কা দাস! সেক্স র‍্যাকেট থেকে উদ্ধার বাংলা সিরিয়ালের আরও ২ নায়িকা! তুলকালাম মহারাষ্ট্রে
কোন লক্ষণগুলি অবহেলার নয়?
১। বুকের যন্ত্রণা বা অ্যাঞ্জাইনা: হৃদরোগের সবচেয়ে পরিচিত উপসর্গ এটি। তবে এই যন্ত্রণা ছুরির ফলার মতো ধারালো হয় না। বরং বুকের গভীরে এক ধরনের দমবন্ধ করা চাপ, পেষণকারী অনুভূতি বা ভারী বোঝা চেপে বসার মতো অস্বস্তি হয়। এই যন্ত্রণা প্রায়শই বুকের মাঝখান থেকে বাঁ কাঁধ, বাহু, ঘাড় বা চোয়ালের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হল, এটি সাধারণত শারীরিক পরিশ্রম, যেমন দ্রুত হাঁটা বা সিঁড়ি ভাঙার সময় শুরু হয় এবং বিশ্রামে থাকলে ধীরে ধীরে কমে আসে। শ্রমের সঙ্গে আগমন, বিশ্রামে অন্তর্ধান- এই সমীকরণটিই হৃদরোগের ব্যথার অন্যতম বড় সূচক।
২। শ্বাসকষ্ট: যে সিঁড়ি আপনি মাস কয়েক আগেও অবলীলায় ভাঙতেন, এখন কি তার মাঝপথেই থামতে হচ্ছে? সামান্য পরিশ্রমে দম ফুরিয়ে আসা বা হাঁপ ধরা ধমনী ব্লকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। হৃৎপিণ্ড দুর্বল হয়ে পড়লে তা দক্ষতার সঙ্গে রক্ত পাম্প করতে পারে না, যার ফলে ফুসফুসে চাপ পড়ে এবং শ্বাসকষ্ট হয়।
৩। অকল্পনীয় ক্লান্তি: সারাদিনের কাজের শেষে ক্লান্তি আসা স্বাভাবিক। কিন্তু এই ক্লান্তি সে রকম নয়। ঘুম থেকে ওঠার পরেও যদি শরীরজুড়ে তীব্র অবসাদ থাকে, যদি দৈনন্দিন কাজ করতেও অনীহা বা অক্ষমতা বোধ হয়, তবে তা চিন্তার বিষয়। এটি জানান দেয় যে, সংকীর্ণ ধমনীর মধ্যে দিয়ে রক্ত পাঠাতে হৃৎপিণ্ডকে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হচ্ছে। তাই সে ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছে।
৪। ছদ্মবেশী উপসর্গ: অনেক সময়, বিশেষত ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগী এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে, বুকে ব্যথার মতো চিরাচরিত লক্ষণ দেখা যায় না। তার বদলে বুকজ্বালা, হজমের গোলমাল, বমি ভাব, মাথা ঘোরা বা ঠান্ডা ঘামে শরীর ভিজে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দেয়। গ্যাস-অম্বলের সমস্যা ভেবে এই লক্ষণগুলিকে উড়িয়ে দেওয়া এক মারাত্মক ভুল হতে পারে

শরীর যখন জানান দেয় অসুস্থতার কথা, তখন সেই কথা শুনতে শিখুন। উপরের উপসর্গগুলি যদি আপনার জীবনেও হানা দিয়ে থাকে, তবে তাকে বয়সের দোহাই দিয়ে বা কাজের চাপ আছে বলে এড়িয়ে যাবেন না। এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হন। মনে রাখবেন, ধমনীর অসুখের ক্ষেত্রে প্রতিটি মুহূর্ত মূল্যবান। আপনার আজকের সচেতনতাই আগামীর বড় বিপদকে রুখে দিতে পারে।