আজকাল ওয়েবডেস্ক: মানব দেহে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি নিয়ে বৈজ্ঞানিক মহলে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, অতিক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা — মাইক্রোপ্লাস্টিক — মানুষের মস্তিষ্কেও জমা হতে পারে। যদিও এ সংক্রান্ত প্রমাণ এখনও পর্যাপ্ত নয়, তবু বিজ্ঞানীরা এই সম্ভাবনাকে হালকাভাবে নিতে নারাজ। এই মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা ইতোমধ্যেই পাহাড়ের চূড়া থেকে শুরু করে মহাসাগরের গভীরে, এমনকি বাতাস ও খাদ্যেও শনাক্ত হয়েছে। মানুষের ফুসফুস, হৃদপিণ্ড, গর্ভনালিতেও এদের উপস্থিতি মিলেছে। সর্বশেষ, এই কণা যে রক্ত-মস্তিষ্ক প্রতিবন্ধক (blood-brain barrier) অতিক্রম করতে সক্ষম — এমন প্রমাণ ঘিরে উদ্বেগ আরও বেড়েছে।

নিউ মেক্সিকোর গবেষণা ও বিতর্ক

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকোতে মৃত ৫২ জনের মস্তিষ্ক পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, গত কয়েক বছরে মস্তিষ্কে মাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিমাণ বেড়েছে। গবেষণাটির প্রধান বিজ্ঞানী ম্যাথিউ ক্যাম্পেন বলেন, এক একটি মানুষের মস্তিষ্ক থেকে গড়ে প্রায় ১০ গ্রাম প্লাস্টিক আলাদা করা সম্ভব, যা একটি ক্রেয়নের ওজনের সমান। তবে অন্যান্য গবেষকরা এই গবেষণার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। স্কটল্যান্ডের হারিয়ট-ওয়াট বিশ্ববিদ্যালয়ের টক্সিকোলজিস্ট থিওডোর হেনরি বলেন, “এই গবেষণা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু এতে পাওয়া তথ্য এখনই চূড়ান্ত বলে ধরে নেওয়া ঠিক নয়।” অস্ট্রেলিয়ার আরএমআইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অলিভার জোনস আরও বলেন, “এই গবেষণার ভিত্তিতে এখনই বৈশ্বিক সিদ্ধান্ত টানা অনুচিত।” এছাড়া, গবেষণাটিতে কিছু ছবি বারবার ব্যবহার করা হয়েছে বলেও তথ্য সামনে এসেছে। তবে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এতে গবেষণার মূল ফলাফল খুব বেশি প্রভাবিত হয়নি।

সতর্কতা নাকি অপেক্ষা?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ২০২২ সালের এক পর্যালোচনায় জানায়, মাইক্রোপ্লাস্টিক মানবস্বাস্থ্যের জন্য কতটা ক্ষতিকর, তা নির্ধারণে এখনও যথেষ্ট তথ্য নেই। তবে বার্সেলোনার ইনস্টিটিউট ফর গ্লোবাল হেলথ-এর নতুন এক রিপোর্ট বলছে, "আমরা সম্পূর্ণ তথ্যের অপেক্ষায় বসে থাকতে পারি না।" রিপোর্টে বলা হয়েছে, এখনই সচেতন পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে এটি একটি বড় জনস্বাস্থ্য সংকট হয়ে উঠতে পারে।

প্লাস্টিক উৎপাদন দ্রুত বাড়ছে

বিশ্বে প্লাস্টিক উৎপাদনের হার ২০০০ সালের পর দ্বিগুণ হয়েছে এবং ২০৬০ সালের মধ্যে তা তিনগুণে পৌঁছবে বলেই আশঙ্কা। তাই আসন্ন জাতিসংঘের প্লাস্টিক দূষণবিরোধী বৈঠকে এই ইস্যু গুরুত্বপূর্ণভাবে আলোচিত হতে চলেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে — আমরা কি আগে থেকেই সতর্ক হব, নাকি ক্ষতি হওয়ার পরে ব্যবস্থা নেব? বিজ্ঞান এখনো নিশ্চিত না হলেও, পরিবেশ ও মানবস্বাস্থ্যের জন্য বিষয়টি নিঃসন্দেহে এক বড় সতর্কবার্তা।

আরও পড়ুন:  ২৮ বছর পর বিক্রি হল মাইকেল জ্যাকসনের 'নোংরা' সেই জিনিস!  দাম উঠল প্রায় ৯,০০০ ডলারে! 

বিশেষজ্ঞদের মতে, মাইক্রোপ্লাস্টিকের প্রভাব মানবদেহে ধীরে ধীরে জমে উঠতে পারে এবং এর দীর্ঘমেয়াদি ফলাফল হতে পারে মারাত্মক। বিশেষত, শিশু, গর্ভবতী মহিলা এবং দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষেরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন। মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা শরীরের কোষে প্রবেশ করে স্নায়ুতন্ত্রে সমস্যা, প্রদাহ এবং হরমোনীয় ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করতে পারে — এমন আশঙ্কা করছেন অনেক গবেষক।

একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, প্লাস্টিকের সূক্ষ্ম কণা রক্তনালির ভেতর জমে গিয়ে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। যদিও এসব গবেষণা এখনো পর্যবেক্ষণমূলক, তবুও ঝুঁকি উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। ফলে বিজ্ঞানীরা ‘প্রিকশনারি প্রিন্সিপল’ বা সতর্কতামূলক নীতি গ্রহণের পরামর্শ দিচ্ছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এখনই প্রয়োজন সচেতনতা বৃদ্ধি, প্লাস্টিকের ব্যবহার হ্রাস এবং নীতিনির্ধারকদের তরফে কঠোর পদক্ষেপ। কারণ, মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ শুধু পরিবেশগত ইস্যু নয়, এটি এখন সরাসরি মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্যের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে।