বাংলা ছবিতে তিনি চর্চিত অভিনেতা। রবি কিনাগী, সুজিত মণ্ডল, রাজা চন্দ থেকে শুরু করে বলিউডে একের পর এক বড় বড় তারকাসর্বস্ব ছবিতে কাজ করেছেন তিনি। বলা ভাল, করে চলেছেন। তিনি, খরাজ মুখোপাধ্যায়। হিন্দি ছবিতেও অভিনয় করে দর্শকের মন জয় করেছেন তিনি। চলতি মাসেই মুক্তি পেয়েছে ‘জলি এলএলবি’ ফ্র্যাঞ্চাইজির তিন নম্বর ছবি। সে ছবিতেও একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে দেখা গিয়েছে তাঁকে। আগের ছবিগুলির মতোই কমেডির মোড়কে সামাজিক সমস্যা নিয়ে বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে এই ছবিতেও। এবার এই বিষয়ে আজকাল ডট ইন-এর সঙ্গে কথা বললেন খরাজ মুখোপাধ্যায়। 

“আমি ওঁকে অক্ষয়জি ডাকি, উনি আমাকে খরাজজি। এর আগে অক্ষয় কুমারের সঙ্গে ‘স্পেশ্যাল ২৬’ এবং ‘মিশন রানিগঞ্জ’ ছবিতে কাজ করেছি। ছোট ছোট চরিত্রে। ভেবেছিলাম, আমাকে চিনতেই পারবেন না। ওমা! দেখামাত্রই হাসিমুখে এগিয়ে এলেন। আমার খোঁজখবর নিলেন। অসম্ভব একজন পেশাদার শিল্পী। উনি যে এত বড় তারকা, হাবেভাবে,ব্যবহারে সেসবের ছিটেফোঁটা পর্যন্ত নেই। সময় থাকলে ইউনিটে সবার সঙ্গে হাসি-ঠাট্টা করেন। আড্ডাও মারেন।” 

“অক্ষয়জিকে নিয়ে একটা ঘটনা বলি। রাজস্থানে এমন একটা জায়গায় কাজ করেছিলাম, যাকে বলে ধূ-ধূ প্রান্তর। যে হোটেলে আমরা উঠেছিলাম, সেখান থেকে দেড় ঘন্টা গাড়ি চেপে একটা প্রত্যন্ত গ্রামে যেতে হত। গ্রামটা কেমন যেন অদ্ভুতুড়ে! ওটাই ছিল শুটিং লোকেশন। এবার ওখানে নানান অদ্ভুত সব কিংবদন্তি মোড়া। একটা বিরাট,প্রাচীন তোরণ পেরিয়ে গ্রামে ঢুকতে হয়। গ্রাম জুড়ে ছড়ানো ছিটানো নানান বড় বড় প্রস্তরখণ্ড। কথা থেকে যে অত বড় বড় পাথরের চাঁই এল, কেউ জানে না। অদ্ভুত ব্যাপার, কোনও পাথরের চাঁই-ই খাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে নেই। ঈষৎ ঝুঁকে। ওই গ্রামের লোকেদের কথায়, “আমাদের গ্রাম-দেবতার  উদ্দেশে মাথা ঝুঁকিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে সব পাথরের চাঁইগুলো! গ্রাম থেকে অনতিদূরেই একটা পাহাড় আছে। টিলা নয় কিন্তু,পাহাড়। তার চূড়ায় একটা মন্দির আছে, শিবমন্দির। তিনি নাকি ভীষণ জাগ্রত।আমরা  নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতাম, বরফট্টাই করছে। কিছুই হয়ত নেই। এসব বলাবলি করতাম। এর মাঝে বলে দিই, আমাদের শুটিং করার যে জায়গাটা সেটা আমাদের এসি ভ্যান, গাড়ি যেখানে রাখা হত সেখান থেকে এক ঘন্টা হাঁটা পথের দূরত্বে ছিল! যা রাস্তা তাতে গাড়ি চালানো ভীষণ দুষ্কর ছিল। অগত্যা রাজস্থানের ওই গরমে এক ঘন্টা হেঁটে শুটিং স্পটে পৌঁছতাম। শুধু অক্ষয় কুমারকে একটা বাইকে চেপে নিয়ে যাওয়া হত কোনওরকমে।”


সামনে যা থেমে অভিনেতা ফের বলে ওঠেন, “ হ্যাঁ যা বলছিলাম, ওই গ্রামে এমন কোনও বাড়ি নেই যার চাল পাকা। রাত্রেবেলা ওঁদের বাড়ির দরজা বন্ধ হয় না। চোরের ভয় ওই গ্রামে নেই! ওঁদের মতে, যদি কেউ কোনও বাড়ি থেকে সামান্য একটা পাথরের টুকরোও চুরি করে তাহলে তাঁর মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী! এটাতেই শেষ নয়। ওই গ্রামের সীমানার মধ্যে ধূমপান করা যাবে না। কোনও গ্রামবাসী ধূমপান করেন না! আমাদের উপরেও এই নিয়ম লাগা ছিল। খুব ধূমপানের ইচ্ছে হলে, আমরা এসি ভ্যানের মধ্যে বসে দু-একটান দিতাম। হঠাৎ একদিন দেখি, দূর দূরান্ত থেকে বাস-লরি বোঝাই করে আমাদের শুটিংয়ের আশেপাশে লোক হুড়মুড়িয়ে আসছে। মুহূর্তের মধ্যে লোকে লোকারণ্য। সঙ্গে পুজোর নানান উপকরণ। ওই পাহাড় চূড়োর মন্দিরে পুজো হবে।  বুঝলাম, প্রচুর মানুষ মন্দিরের কিংবদন্তিতে বিশ্বাস করেন। অর্থাৎ বরফট্টাই নয়। আর, আমরা রাত তিনটের সময় উঠতাম, চারটের মধ্যে রূপসজ্জার কাজটাজ সেরে ভোর পাঁচটার মধ্যে শুটিং স্পটে হাজির হয়ে যেতাম। একদিন মেকআপ সেরে ভ্যানের থেকে বেড়িয়েছি, দেখি অত ভোরে মাথায় তিলক কেটে অক্ষয়জি দাঁড়িয়ে। জিজ্ঞেস করে জানলাম, তারও বহুক্ষণ আগে পায়ে হেঁটে পাহাড় চূড়ায় ওই মন্দিরে পুজো দিয়ে ফিরে এসেছেন তিনি! আমাকে পাল্টা হেসে জিজ্ঞেস করলেন, ‘যাবেন নাকি? যান না, ঘুরে আসুন!’ হাত জোর করে ককিয়ে ওঠে বলে উঠেছিলাম, ‘রক্ষে করুন স্যার, আমি পারব না। আমি তো আর অক্ষয় কুমার নই!’”
আর একবার শুটের আগে একটু বিশ্রাম নিচ্ছি, সেটের মধ্যেই। হঠাৎ দেখি অক্ষয়জি হাজির, হাতে একটা দামি ক্যামেরা। আমার চোখে চোখ পড়তেই চিৎকার করে বলে উঠলেন, ‘ঝট করে একটা অভিব্যক্তি দিন তো!’ সঙ্গে সঙ্গে কোনওরকমে একটা মজার ভঙ্গি করে তাকালাম। পটাপট ছবি তুলে নিলেন। তারপর সেই ছবি দেখে এত মজা পেয়েছিলেন যে আরশাদকে উঁচু গলায় ডেকে আমার সেই সব  ছবি দেখালেন!”

 

কথাশেষে তাঁর সংযোজন, “এছাড়াও এ ছবিতে রয়েছেন গজরাজ রাও, রাম কাপুর। গজরাজজির সঙ্গে আলাপ দারুণ জমে গিয়েছিল। যেমন ফাটাফাটি অভিনেতা তেমনই মানুষ হিসেবেও দুরন্ত। কীভাল, কী ভাল! আর ঝরঝরে বাংলা বলতে পারেন...জমিয়ে আড্ডা হত আমাদের। ওঁর সঙ্গে সুন্দর সময় কেটেছে।”