নিজস্ব সংবাদদাতা: নয়ের দশকের গোড়ায় ‘তোমাকে চাই’ অ্যালবাম দিয়ে বাংলা আধুনিক গানের জগতে আবির্ভাব হয়েছিল কবীর সুমনের। প্রবল জনপ্রিয় হয়েছিলেন তিনি। মোড় ঘোরানো আধুনিক বাংলা গানের জনক হিসাবে তাঁকেই গ্রহণ করেছিল বাঙালি। আপাতত বাংলা খেয়াল নিয়ে চর্চা করছেন ‘নাগরিক কবিয়াল’। সমাজমাধ্যমে বহু বাঙালি-ই প্রেমে-অপ্রেমে, ছবিতে-লেখায় এই কিংবদন্তি শিল্পীর লেখা গানের পংক্তি ব্যবহার করেন। অনেকসময় তাতে শিল্পীর নামের উল্লেখ থাকে, কখনও থাকে না। সম্প্রতি এই কাণ্ড করেছেন জনপ্রিয় পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়-ও।
বহু বছর পর ফের কাছাকাছি সৃজিত মুখোপাধ্যায় এবং তাঁর ‘প্রাক্তন’ ঋতাভরী চক্রবর্তী। শুধু কাছাকাছি নয়, একে অপরকে জড়িয়ে ধরে, হাসিমুখে ছবি তুলে সমাজমাধ্যমে বিশেষ পোস্ট দিলেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়। দু’জনেরই পরনে কালো ব্লেজার। তাহলে কি 'সত্যি বলে সত্যি কিছু নেই '-এর ঝলক মুক্তির অনুষ্ঠানের পর এই ছবি তাঁরা তুলেছেন? ছবির সঙ্গে ক্যাপশনে এই জনপ্রিয় পরিচালক কবীর সুমনের অন্যতম জনপ্রিয় গান ‘কেমন আছো’র পংক্তি যোগ করলেন -
জমাখরচ হিসেবনিকেশ, কোথায় শুরু, কোথায় বা শেষ, কেমন আছো? 
 
 অনেক বছর পেরিয়ে এলাম, হঠাৎ তোমার দেখা পেলাম, কেমন আছো?  
তবে এই গানের পংক্তি যে কবীর সুমনের তা কোথাও উল্লেখ করেননি সৃজিত। দেননি ঊর্ধ্বকমাও। কবীর সুমন কি তাতে খানিক মনঃক্ষুণ্ণ? কারণ সৃজিতের প্রতি তাঁর স্নেহের কথা সর্বজনবিদিত। শোনামাত্রই গীতিকার, সুরকার এবং গায়ক সুমন নিজস্ব ছন্দে বলে উঠলেন, “ধরুন, জীবনানন্দ দাশের কবিতা ‘বনলতা সেন’। কবিতার ওই যে লাইন... ‘থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন’ আহা! এবার এই লাইনটি যদি বারবার ব্যবহৃত করা হয় তাহলে তো মুশকিল...কী-ই বা করা যাবে। অবশ্য এটা হওয়ার-ই ছিল। এছাড়া, আরও একটি কারণ রয়েছে। জনপ্রিয়তা। সেই যুক্তিতে হয়তো আমার গান, গানের পংক্তি উদ্ধৃত করা হয়, ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশে তো অসংখ্য মানুষ আমার গান শুধু গেয়েই থেমে থাকেন না। মৃত্যু-জীবনে তাঁরা আমার গান ব্যবহার করেন। আমার গানের মাধ্যমে প্রেম নিবেদন করেন, কেউ মারা গেলে শোকজ্ঞাপন ব্যবহার করেন। বা এই যে বাংলাদেশে এত বড় বিপ্লব হল -আমার গানের লাইন কিন্তু সমাজমাধ্যম থেকে দেয়ালে দেয়ালে লেখা হয়েছে – ‘হাল ছেড়ো না বন্ধু...’ তখন কিন্তু আর এই গানের সঙ্গে কবীর সুমন লেখার কোনও দরকার নেই। কারণ তখন এই গান সকলের!”
স্বীকৃতিবিহীন আত্মপ্রচারে তাহলে বিন্দুমাত্র কোনও আপত্তি নেই কবীর সুমনের? শোনামাত্রই সেই অতিপরিচিত শিশুর সারল্য মাখা হাসি হেসে উঠলেন নাগরিক কবিয়াল। হাসি থামলে সুমনোচিত ছন্দে বলে উঠলেন, “এটা নিয়ে আর কী বলব? বয়স তো আমার কম হল না। এই বিষয়ে আর কিছু বলার নেই। আমার স্নেহভাজন সকলেই। শুধু বলব, আমার বিন্দুমাত্র আপত্তি নেই। বরং বিষয়টি এভাবে দেখতে পছন্দ করব যে মানুষ তো তাঁদের পছন্দের, ভালবাসার শিল্পীকে এভাবেই স্বীকৃতি দেয়। এই যে কথায় কথায় আমরা অনেকে ব্যবহার করি, ‘ফুল ফুটুক না ফুটুক, আজ বসন্ত’ এটা তো কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কবিতার লাইন। সেখানে আমরা কি বারবার কবির নাম উল্লেখ করি? তাহলে...” বলতে বলতে ফের হেসে উঠলেন সুমন। এবং হাসতে হাসতেই কথাশেষে জুড়লেন –“তাই কারও যদি ভাল লাগে আমার গানের পংক্তি তিনি কোট করবেন। আমার নাম উল্লেখ করলে ভাল আর না করলেও বা কী আসে যায়? কিচ্ছু আসে যায় না আমার।”
