রান্না কি শুধুই পেট ভরে খবর খাওয়ার জন্য? না কি একজন রাঁধুনি কত কিসিমের, কত উৎকৃষ্ট স্বাদের নানান খাবারের পদ তৈরি করতে পারেন, তা দেখানোর মাধ্যম? শুধুই বোধ হয় তা নয়। আদতে, রান্না মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ তৈরি করে। আর তৈরি করে সম্পর্ক। রান্না কি পারে কোনও মৃতপ্রায় সম্পর্ককেও কি বাঁচিয়ে তুলতে? সেই উত্তরই খুঁজবে প্রতীম ডি গুপ্ত পরিচালিত নতুন ছবি ‘রান্না বাটি’। প্রযোজনায় নন্দী মুভিজ। ছবি জুড়ে রয়েছে রান্নার গল্প এবং তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা নানান সম্পর্কের গল্প।

 


‘রান্না বাটি’ মুক্তি পাবে আগামী ৭ নভেম্বর। এই ছবিতে তুলে ধরা হয়েছে এক বাবা আর মেয়ের গল্প। মা মেয়ের সম্পর্ক খুব ভাল ছিল বটে, কিন্তু অকালেই চলে যান মা। আর তারপরে, গোটা দায়িত্বই গিয়ে পড়ে বাবার ওপর। বাবার ভূমিকায় দেখা যাবে ঋত্বিককে, আর মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করছেন শোলাঙ্কি। তবে মা চলে যাওয়ার পরে, মেয়ে আর বাবার মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকে। কিছুতেই মা-কে যেন ভুলতে পারে না মেয়ে। আর তাই বাবার সঙ্গে যেন আরও বাড়তে থাকে দূরত্ব। এই পরিস্থিতিতেই হঠাৎ সেই মেয়ের বাবা অনুভব করেন, মেয়ে রান্না ভালবাসত। মা যখন রান্না করছিলেন, তখন নাকি দাঁড়িয়ে দেখত মেয়ে। আর সেই কারণেই বাবা অনুভব করেন, তাঁকে রান্না শিখতে হবে। এখানেই, আসে সোহিনীর চরিত্র। একজন কুকিং কোচের ভূমিকায় দেখা যাবে তাঁকে। ঋত্বিক তাঁর কাছেই রান্না শিখতে যান। আর সেখান থেকে শুরু হয় নতুন গল্প, অন্যদিকে সেই রান্না কতটা বদলে দিল ঋত্বিক ও টিনার মেয়ের সম্পর্কের গল্প? উত্তর লুকিয়ে রান্না-বাটিতে।  প্রসঙ্গত, প্রতীম ডি গুপ্ত-র পরিচালিত একাধিক ছবিতে মুখ্যভূমিকায় দেখা গিয়েছে ঋত্বিককে। আরও ভাল করে বললে, এই পরিচালকের আটটি ছবির মধ্যে পাঁচটিতেই রয়েছেন ঋত্বিক। কেন তিনি নিজের বেশিরভাগ ছবিতে ঋত্বিককেই বাছাই করেন? এত বছরে প্রথমবার সে জবাব-ই খোলাখুলি সাম্যমধ্যমে একটি নাতিদীর্ঘ পোস্টের মাধ্যমে স্বয়ং।  


প্রতীম ডি গুপ্ত লিখেছেন, “পরিচালক হিসেবে এটা আমার আট নম্বর ছবি। আর এর মধ্যে পাঁচটি ছবিতেই রয়েছে অভিনেতা ঋত্বিক চক্রবর্তী। মানে, ও এখন আমার এমন এক অভ্যেসে পরিণত, যা আমি একেবারেই ছাড়তে চাই না। প্রতিবার নতুন গল্প লিখতে বসলে নিজেকে বলি, “এইবার, ঋত্বিককে ভেবে লিখব না ।” কিন্তু মোটামুটি তিরিশ পাতা পেরোনোর মধ্যে কিছু একটা ঘটে যায়। সংলাপের ছন্দে ওর কণ্ঠ চলে আসে, বিরতিগুলো ওর নীরবতার মতো শোনায়, ব্যঙ্গগুলোয় ওর হাসি হয়ে ফুটে ওঠে। আর চিত্রনাট্যটা যখন শেষ হয়, মনে হয় এই চিত্রনাট্যটি মনে হয় লুকিয়ে লুকিয়ে ঋত্বিকের সঙ্গে জোট বেঁধে এই কাণ্ড করল।

 

 

 

সেটে ঋত্বিককে কাজ করতে দেখা একটা অন্যরকম আনন্দ। তখন বুঝি, লেখাটা শেষ হয়েছে। কারণ চিত্রনাট্যের সেই সংলাপগুলো তখন কাগজ থেকে একে একে উঠে দাঁড়াচ্ছে, নিঃশ্বাস নিচ্ছে, বাঁচছে। আর সবই হচ্ছে ঋত্বিকের জন্য।

সিনেমার দুনিয়ায় বহু কিংবদন্তি জুটি আছে। যেমন, কুরোসাওয়া আর তোশিরো মিফুনে, স্করসেসি আর ডি নিরো, সত্যজিৎ রায় আর সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। আমি বলছি না, আমরা তেমন জায়গায় পৌঁছেছি। তবে আরও কয়েকটা ছবি আর কিছু পাকা চুল বাড়লে হয়তো অন্তত সেই তালিকার “ব্লুপার রিল”-এ আমাদের নামটা থাকবে! 

আর হ্যাঁ, জেনে রাখুন আমাদের স্ত্রীদের কাছে সব খবর আছে আমাদের বন্ধুত্বের, ব্রোম্যান্সের। তাই গুঞ্জন শুরু করার দরকার নেই। কারণ এখন তো ওরা একে অন্যকে শেখায় কীভাবে আমাদের এই ব্রোমান্স সামলাতে হবে!

 

ঋত্বিক, তুই আমার সিনেমা সঙ্গী আর প্রিয় নেশা। চাই, আমরা যেন আরও অনেক গল্পে একে অপরকে বিরক্ত করে যাই, বারবার।”