আজকাল ওয়েবডেস্ক: মুদ্রানীতি কমিটির বৈঠকের পর ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদের হার (রেপো রেট) স্থিতিশীল রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই নিয়ে টানা তিনবার রেপো রেট কমানোর পর, এবার রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কোনও পরিবর্তন করেনি। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এই সিদ্ধান্ত থেকে স্পষ্ট যে, এবার আপনার ঋণের ইএমআই-এর উপর কোনও প্রভাব পড়বে না।


সংবাদিক বৈঠকে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর সঞ্জয় মালহোত্রা জানান যে, রেপো রেট ৫.৫০ শতাংশে স্থিতিশীল রাখা হয়েছে। ২০২৫ অর্থবর্ষে এখন পর্যন্ত রেপো রেট মোট ১ শতাংশ কমানো হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে ০.২৫ শতাংশ, এপ্রিলে ০.২৫ শতাংশ এবং জুনে ০.৫০ শতাংশ কমানো হয়েছিল। জুনে বড় ধরনের কমানোর পর, ইতিমধ্যেই অনুমান করা হচ্ছিল যে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অগস্টে হারে কোনও পরিবর্তন করবে না।

আরও পড়ুন:   বন্ধ হল পোস্ট অফিসের ৫০ বছরের এই পরিষেবা, কতটা ভোগান্তি হবে গ্রাহকদের


তিনদিনব্যাপী এই বৈঠকের শেষে গভর্নর সঞ্জয় মালহোত্রা মুদ্রাস্ফীতি, প্রবৃদ্ধি এবং বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ঘোষণাকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া বিশ্বের বাণিজ্য উত্তেজনা নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের অবস্থান তুলে ধরেন।


গভর্নর সঞ্জয় মালহোত্রা নিশ্চিত করেন যে MPC সর্বসম্মতভাবে রেপো রেট ৫.৫ শতাংশে অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অন্যান্য মূল হারগুলিও অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে—স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি ৫.২৫% এবং মার্জিনাল স্ট্যান্ডিং ফ্যাসিলিটি ও ব্যাঙ্ক রেট থাকবে ৫.৭৫%।
এদিন তিনি বলেন, MPC বৈঠক ৪, ৫ এবং ৬ আগস্ট অনুষ্ঠিত হয়। সাম্প্রতিক আর্থিক ও আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে MPC সর্বসম্মতভাবে রেপো রেট অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। তিনি আরও যোগ করেন, MPC ভবিষ্যতের তথ্য এবং অভ্যন্তরীণ প্রবৃদ্ধি ও মুদ্রাস্ফীতির গতিপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করবে এবং সে অনুযায়ী পরবর্তী নীতিগত পদক্ষেপ ঠিক করবে। কমিটির সবাই নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখার পক্ষেই রায় দেন।


গভর্নরের ভাষণের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল বিশ্বের বাণিজ্য উত্তেজনা নিয়ে তার মন্তব্য। সম্প্রতি ঘোষিত শুল্ক এবং বাণিজ্য আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই পরিস্থিতি ভারতের ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধিকে প্রভাবিত করতে পারে। তিনি ব্যাখ্যা করেন, দেশের অর্থনীতি মজবুত এবং পূর্বাভাস অনুযায়ীই এগোচ্ছে, যদিও প্রত্যাশার কিছুটা নিচে। তবে শুল্ক সংক্রান্ত অনিশ্চয়তা এখনও অব্যাহত রয়েছে। মুদ্রানীতির প্রভাব এখনও অর্থনীতিতে প্রতিফলিত হচ্ছে।


তবে অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও RBI ২০২৫–২৬ অর্থবছরের জন্য GDP প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৬.৫ শতাংশ অপরিবর্তিত রেখেছে। এছাড়া ২০২৬–২৭ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের জন্যও ৬.৬% প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে RBI। মালহোত্রা বলেন, প্রবৃদ্ধির দৃষ্টিভঙ্গি বিবেচনায় দেখা যাচ্ছে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বর্ষা, কম মুদ্রাস্ফীতি, উৎপাদন ক্ষমতার বাড়তি ব্যবহার এবং সহায়ক আর্থিক পরিবেশ অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করছে। তিনি বলেন, নির্মাণ ও বাণিজ্য খাত আগামীদিনে পরিষেবা খাতের প্রবৃদ্ধিকে চালিত করবে। গভর্নর স্বীকার করেন, সার্বিক মুদ্রাস্ফীতি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। যার ফলে বর্তমানে সুদের হার কমানোর আরও কোনও পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। তাঁর দাবি, সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন এসেছে খাদ্যপণ্যের দাম, বিশেষ করে সবজির দামের ওঠানামার কারণে। অন্যদিকে কোর ইনফ্লেশন স্থিরভাবে ৪% এর আশেপাশে রয়েছে। তবে আর্থিক বছরের শেষ প্রান্তিকে মুদ্রাস্ফীতি কিছুটা বাড়তে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে।


RBI ফেব্রুয়ারি ২০২৫ থেকে এখন পর্যন্ত মোট ১০০ বেসিস পয়েন্ট হার কমিয়েছে। এবিষয়ে গভর্নর বলেন, এর প্রভাব এখনও অর্থনীতিতে প্রতিফলিত হচ্ছে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা কিছুটা কমলেও বিশ্বের বাণিজ্য সমস্যা এখনও রয়ে গেছে। মধ্য-মেয়াদি ভারতীয় অর্থনীতি পরিবর্তনশীল বিশ্বব্যবস্থায় উজ্জ্বল সম্ভাবনা ধরে রাখবে, কারণ এর ভিত মজবুত, অর্থনৈতিক ভিত্তি শক্তিশালী এবং অর্থনৈতিক ‘বাফার’ আরামদায়ক পর্যায়ে রয়েছে।
তাঁর মতে, বিশ্বজুড়ে নীতিনির্ধারকরা এখনও কম প্রবৃদ্ধি ও স্থির মুদ্রাস্ফীতির সমস্যার মুখোমুখি। কিছু উন্নত অর্থনীতিতে আবার মুদ্রাস্ফীতি কিছুটা বেড়েছে। নতুন বিশ্ব ব্যবস্থায় একটি নতুন ভারসাম্য তৈরি হওয়ার সময় নীতিনির্ধারকদের জন্য এটি একটি কঠিন পরিস্থিতি, যেখানে কম প্রবৃদ্ধি, স্থায়ী মুদ্রাস্ফীতি এবং উচ্চ সরকারি ঋণের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে।