আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতের মতো দ্রুত পরিবর্তনশীল আর্থিক পরিবেশে ব্যক্তিগত ঋণ এখন আর কেবল জরুরি প্রয়োজনে শেষ বিকল্প নয়। বরং এটি এখন সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন প্রয়োজন ও জীবনধারাভিত্তিক চাহিদা মেটানোর গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো ক্রমবর্ধমান খরচ সামলাতে নগদের ঘাটতি পূরণে এই ঋণের উপর নির্ভর করছে।


জানুয়ারি ২০২৫ থেকে জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত ঋণ বিতরণের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রায় অর্ধেক ৪৭.৮০ শতাংশ ঋণের আবেদন এসেছে জীবনধারাভিত্তিক খরচের জন্য। এর মধ্যে রয়েছে ভাড়া, কেনাকাটা, বাড়ি সংস্কার, ভ্রমণ ও উপহার দেওয়া। এই তথ্য প্রমাণ করে যে, এখন ক্রেডিট ব্যবহারের প্রবণতা কেবল টিকে থাকার জন্য নয়, বরং দৈনন্দিন আর্থিক নমনীয়তা বজায় রাখার জন্যও বাড়ছে।

আরও পড়ুন: এবার থেকে চুটিয়ে মশলাদার খাবার খান, উপকৃত হবে আপনার দেহের এই দুই প্রধান অঙ্গ


ঋণ গ্রহণের তালিকায় এরপরেই রয়েছে চিকিৎসাজনিত জরুরি প্রয়োজন, যা মোট ঋণের ২০.৩৮ শতাংশ। হাসপাতালের ব্যয় বেড়ে যাওয়া এবং বিমার সীমাবদ্ধতার কারণে মানুষ প্রায়শই তাৎক্ষণিক সহায়তার জন্য ঋণের দিকে ঝুঁকছে। এরপর রয়েছে পরিবার-সংক্রান্ত খরচ যেমন বিয়ে, অনুষ্ঠান ও উৎসব, যা ১৩.১৬ শতাংশ। গৃহস্থালি ব্যয় ১২.৩৫ শতাংশ, আর শিক্ষাজনিত খরচ ৬.৩১ শতাংশ, যা ক্রমবর্ধমান স্কুল ফি, কোচিং ও দক্ষতা উন্নয়ন কোর্সের খরচ মেটাতে নেওয়া হচ্ছে।


বিভিন্ন খাতের জন্য ঋণের গড় পরিমাণও আলাদা। চিকিৎসার জন্য নেওয়া ঋণের গড় টিকিট সাইজ প্রায় ১৫,৮০০ টাকা, তবে হঠাৎ সংকট মোকাবিলায় এক লাখ টাকারও বেশি ঋণ নেওয়া হয়েছে। শিক্ষার জন্য গড় ১৬,৮০০ টাকা, যেখানে বড় অঙ্ক ৫৫,০০০ থেকে ৭৫,০০০ টাকার মধ্যে। বিয়ে ও উৎসবের জন্য গড় ১৫,৩০০ টাকা হলেও, প্রয়োজনের সময় ৯০,০০০ থেকে ৯৫,০০০ টাকা পর্যন্ত পৌঁছেছে। গৃহস্থালি খরচের জন্য গড়ে ১৭,৫০০ টাকা নেওয়া হলেও অনেক ক্ষেত্রে তা ৯৫,০০০ টাকা পর্যন্ত পৌঁছেছে। এই তথ্য দেখায় যে ভারতীয় পরিবারগুলো এখন আয়-ব্যয়ের ওঠানামা সামলাতে এবং জীবনধারার চাহিদা মেটাতে ফিনটেক প্ল্যাটফর্মভিত্তিক ব্যক্তিগত ঋণের উপর অনেকটাই নির্ভর করছে।


ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সহজলভ্য ঋণের কারণে আবেদন বেড়েছে। দ্রুত অনুমোদন ও কম কাগজপত্র ব্যাংকের তুলনায় এটিকে আরও জনপ্রিয় করছে। কিন্তু ঝুঁকিও কম নয়। প্রথমত, উচ্চ সুদের হার যা বার্ষিক ১০ থেকে ৩৬ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। ঋণ শোধকে কঠিন করে তোলে। একাধিক ঋণ একত্রে নিয়ে ফেললে তা সহজেই ঋণের ফাঁদে পরিণত হয়। বিলম্বে কিস্তি পরিশোধ করলে জরিমানাও যুক্ত হয়।


দ্বিতীয়ত, অতিরিক্ত ঋণ নেওয়া আর্থিক শৃঙ্খলা নষ্ট করে। প্রায় অর্ধেক ঋণই জীবনধারাভিত্তিক খরচে যাচ্ছে। এর ফলে তাৎক্ষণিক খরচ মেটানো সম্ভব হলেও দীর্ঘমেয়াদে সঞ্চয় বা বিনিয়োগের জন্য অর্থ বাকি থাকে না। এতে পরিবারগুলো চাকরি হারানো বা বড় অসুস্থতার মতো ধাক্কার মুখে পড়লে ভীষণ ঝুঁকির মধ্যে পড়ে।


তৃতীয়ত, ব্যক্তিগত ঋণ ক্রেডিট স্কোরের উপর প্রভাব ফেলে। ঘন ঘন ঋণ নেওয়া বা কিস্তি মিস করলে স্কোর নেমে যায়, ফলে ভবিষ্যতে ঋণ পাওয়া আরও কঠিন বা ব্যয়বহুল হয়।


চতুর্থত, সামাজিক চাপও বড় ভূমিকা রাখে। বিয়ে বা উৎসবের মতো ব্যয় (১৩.১৬ শতাংশ ঋণ) প্রায়শই সামাজিক প্রত্যাশা পূরণের জন্য হয়, যা নতুন দম্পতিদের অপ্রয়োজনীয় ঋণের বোঝা দেয়। সব মিলিয়ে, ব্যক্তিগত ঋণ ভারতের পরিবারগুলোর আর্থিক কৌশলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠছে। তবে এর সঠিক ব্যবহার না হলে তা গুরুতর আর্থিক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। সচেতন পরিকল্পনা ও সীমিত ব্যবহারই পারে ঋণের সুবিধাকে সত্যিকারের সহায়ক করে তুলতে।