আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতের বিমান পরিবহন খাত ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ালেও এখনও আর্থিক নানা চ্যালেঞ্জ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। ক্রেডিট রেটিং সংস্থা আইসিআরএ (ICRA)-এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ২০২৫ সালের আগস্ট মাসে ঘরোয়া বিমানযাত্রী সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৩১.৭ লাখে। এটি ২০২৪ সালের আগস্টের (১৩১.৩ লাখ) তুলনায় সামান্য বেশি এবং ২০২৫ সালের জুলাইয়ের তুলনায় ৪.৫% বৃদ্ধি পেয়েছে।
চলতি অর্থবছরের (এপ্রিল–আগস্ট, ২০২৬) প্রথম পাঁচ মাসে মোট ৬৭৭.৫ লাখ যাত্রী ঘরোয়া বিমান ভ্রমণ করেছেন, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২.২% বেশি। আন্তর্জাতিক ভ্রমণও ধীরে ধীরে পুনরুজ্জীবিত হচ্ছে। শুধু জুলাই ২০২৫-এই ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলি আন্তর্জাতিক রুটে ২৯.৬ লাখ যাত্রী বহন করেছে, যা গত বছরের তুলনায় ৬.৭% বেশি।


প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘরোয়া বিমান পরিবহনের প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস ৭–১০% থেকে কমিয়ে ৪–৬% করা হয়েছে। এর কারণ হিসেবে সংস্থা উল্লেখ করেছে সীমান্তবর্তী উত্তেজনা, এক সাম্প্রতিক বিমান দুর্ঘটনার পর যাত্রীদের ভ্রমণ সংশয়, এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে চাপ তৈরি করা মার্কিন শুল্কনীতিকে। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক যাত্রী প্রবৃদ্ধির অনুমানও সামান্য কমানো হয়েছে—আগে যেখানে ছিল ১৫–১৭%, এখন রাখা হয়েছে ১৩–১৫%।

আরও পড়ুন: ভারতকে আর্থিকভাবে সমৃদ্ধ করেছে গৃহঋণ, কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা


বিমান সংস্থাগুলির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো বর্ধিত খরচ। ২০২৫ অর্থবছরে এভিয়েশন টারবাইন ফুয়েল (ATF)-এর গড় দাম দাঁড়ায় প্রতি কিলোলিটারে ৯৫,১৮১, যা আগের বছরের তুলনায় ৮% কম হলেও মোট পরিচালন ব্যয়ের ৩০–৪০% জুড়ে থাকে। এর পাশাপাশি, বিমান রক্ষণাবেক্ষণ ও লিজ পেমেন্টের মতো ৩৫–৫০% খরচ মার্কিন ডলারে হওয়ায় মুদ্রা বিনিময় হার ওঠানামা বিমান সংস্থাগুলিকে বাড়তি ঝুঁকির মুখে ফেলে।


গত কয়েক বছরে প্র্যাট অ্যান্ড হুইটনি-র ইঞ্জিন ত্রুটি এবং সরবরাহ সমস্যায় বেশ কিছু বিমান সংস্থা বিপাকে পড়ে। ইন্ডিগো এবং গো এয়ারলাইন্সকে বহু বিমান দীর্ঘ সময়ের জন্য মাটিতে নামিয়ে রাখতে হয়েছিল। যদিও ২০২৫ সালের জুন নাগাদ এই সংখ্যা কিছুটা কমে প্রায় ৪০ বিমানে এসে দাঁড়িয়েছে। বিমান গ্রাউন্ডিংয়ের কারণে খরচ বেড়েছে, জ্বালানি সাশ্রয় কমেছে এবং ভাড়ায় অতিরিক্ত বিমান আনতে হয়েছে। একইসঙ্গে পাইলট ও কেবিন ক্রু ঘাটতির কারণে দেরি ও বাতিলের ঘটনাও বেড়েছে, যা যাত্রীদের অসন্তোষ বাড়াচ্ছে।


আইসিআরএ পূর্বাভাস দিয়েছে, ২০২৬ অর্থবছরে ভারতীয় বিমান পরিবহন খাতের নিট লোকসান দাঁড়াতে পারে ৯৫,০০০–১,০৫,০০০ কোটি টাকায়, যা ২০২৫ সালের ৫৫,০০০ কোটির তুলনায় অনেক বেশি। কিছু বিমান সংস্থা মূল কোম্পানির সহায়তায় স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পারলেও অনেকে মারাত্মক সংকটে ভুগছে, যা আগামী মাসগুলোতে আরও নজরদারির দাবি রাখে।


তবে সব দিক অন্ধকার নয়। তুলনামূলকভাবে উচ্চ ভাড়া আদায়, ভালো লোড ফ্যাক্টর এবং আংশিকভাবে ইঞ্জিন প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলির ক্ষতিপূরণ বিমান সংস্থাগুলিকে ধাক্কা সামাল দিতে সাহায্য করছে। ফলে ভারতীয় বিমান পরিবহন খাত এখনও ধীরে হলেও একটি সতর্ক পুনরুদ্ধারের পথে এগোচ্ছে।