আজকাল ওয়েবডেস্ক: সম্প্রতি মধ্যপ্রদেশে কফ সিরাপ খেয়ে ১১ জন শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় সারা দেশে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। সেই ঘটনার রেশ পড়েছে পশ্চিমবঙ্গেও। রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর এবং কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক উভয়েই সতর্ক। এর মধ্যেই ফের সামনে এল জাল ও সার্টিফিকেটহীন ওষুধের ঘটনা। 

ফলে রাজ্যজুড়ে উদ্বেগ ছড়িয়েছে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিয়ে। পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য দপ্তর ইতিমধ্যেই নির্দেশ দিয়েছে, সমস্ত সরকারি হাসপাতাল ও ওষুধ ডিসপেনসারি কেন্দ্রগুলিতে মজুত ওষুধের গুণগতমান পরীক্ষা করে তবেই ব্যবহার করা যাবে।

সেই নির্দেশ অনুসারে স্টেট ড্রাগ কন্ট্রোল দপ্তর কড়া নজরদারি শুরু করেছে ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলির ওপর।সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে সংগ্রহ করা ওষুধের নমুনা পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। সেই পরীক্ষায় ৩৪টি ওষুধ গুণগত মানে ব্যর্থ হয়েছে।

স্টেট ড্রাগ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ ল্যাবরেটরি (SDCRL)–এর রিপোর্টে এই ওষুধগুলিকে ‘Not of Standard Quality (NSQ)’ এবং ‘Spurious’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, এই ওষুধগুলির মধ্যে অনেকগুলি লাইভ সেভিং ড্রাগসের বিভাগে পড়ে।

কিছু ক্ষেত্রে নকল কোম্পানির লেবেল ব্যবহার করে ওষুধ বিক্রির ঘটনাও ধরা পড়েছে। একজন সিনিয়র স্বাস্থ্য আধিকারিক জানিয়েছেন, ‘রোগীর নিরাপত্তাই আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। যেসব ওষুধ মানহীন বলে প্রমাণিত, সেগুলির বিক্রি ও ব্যবহার বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে।’ ভাইরোলজিস্ট ডা. যোগীরাজ রায় বলেন, ‘রাজ্যের ড্রাগ কন্ট্রোল সঠিকভাবে কাজ করছে, এটাই স্বস্তির খবর। নিম্নমানের ওষুধের গুণগতমান পরীক্ষা করে যে সত্যিটা প্রকাশ্যে এসেছে, তাতে রোগীরা সঠিক চিকিৎসা পাবেন।’

অন্যদিকে, চিকিৎসক ডা. শুভ্রজ্যোতি ভৌমিক জানান, ‘এই দুটি কোম্পানির ওষুধের মান একেবারেই নিম্নস্তরের। প্রয়োজনীয় উপাদান নেই বললেই চলে। এই ওষুধ ব্যবহার করলে রোগীর প্রাণসংশয় পর্যন্ত হতে পারে। তাই রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোল যথার্থভাবেই এগুলি নিষিদ্ধ করেছে।’

রাজ্য প্রশাসন জানিয়েছে, সেপ্টেম্বর মাসে ধরা পড়া ওষুধগুলির পূর্ণ তালিকা ইতিমধ্যেই সরকারকে পাঠানো হয়েছে এবং কয়েকটি সংস্থা ও ফার্মেসির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মানহীন বা জাল ওষুধ শরীরের মারাত্মক ক্ষতি করে এবং চিকিৎসার কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয়।

তাই এই ধরনের ওষুধ দ্রুত শনাক্ত ও বাজার থেকে তুলে নেওয়া জরুরি। এমনকি, এই ঘটনার পরে ড্রাগ কন্ট্রোল দপ্তরের পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষকেও সতর্ক করা হয়েছে। জানানো হয়েছে, ওষুধ কেনার সময় ব্র্যান্ড, ব্যাচ নম্বর ও এক্সপায়ারি ডেট তারিখ পরীক্ষা করতে হবে।

সন্দেহজনক কিছু মনে হলে নিকটস্থ ড্রাগ ইন্সপেক্টরকে জানানো বাধ্যতামূলক। রাজ্য প্রশাসন স্পষ্ট জানিয়েছে, ‘জাল ওষুধের কারবার রুখতে অভিযান অব্যাহত থাকবে। সচেতন নাগরিকই নিরাপদ সমাজের ভিত্তি।’