আজকাল ওয়েবডেস্ক: বাংলায় লেখা হোক দোকানের সাইনবোর্ড। সেখানে অন্য ভাষায় দোকানের নাম থাকতেই পারে কিন্তু তার সঙ্গে বাংলা লেখাও থাকা উচিত। একমত হলেন রাজনীতি থেকে ভাষা, সাহিত্য থেকে চিকিৎসা এবং ক্রীড়া জগতের বিশিষ্টরা।
টেলিভিশন হোক বা খবরের কাগজ, গত কয়েকদিন ধরে এমন কোনও দিন যায়নি যেখানে ভিন রাজ্যে বাংলাভাষীদের উপর অত্যাচারের কিছু না কিছু ঘটনা সামনে আসছে না। কখনও বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী সন্দেহে তাঁদের আটকে রাখা আবার কখনও সন্দেহের বশে মারধর করা। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে ভিন রাজ্যে থাকতে বা কাজের খোঁজে যেতে এরাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকরা রীতিমতো আতঙ্কে রয়েছেন। স্থানীয় থানায় 'পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট' নিতে জমছে তাঁদের লম্বা লাইন। রাজ্য পুলিশের থেকে তাঁদের জন্য তৈরি করা হয়েছে হেল্পলাইন নম্বর। বারবার প্রশ্ন উঠছে এরাজ্যে যখন হিন্দি বা অন্য ভাষাভাষীদের উপর কোনও অত্যাচার হয় না তখন কেন ভিন রাজ্যে এই অত্যাচার?

বাঙলায়ভাষার প্রতি সম্মান জানাতে এবং এই ভাষার অমর্যাদা রুখতে সোমবার মুখ্যমন্ত্রী তাঁর পূর্ব ঘোষিত 'ভাষা আন্দোলন'-এর সূচনা করেছেন বীরভূম থেকে। একইসঙ্গে এবার দাবি উঠেছে রাজ্যের দোকানগুলির সাইনবোর্ডে বাঙলা ভাষায় দোকানের নাম লেখা আবশ্যিক হোক। যা নিয়ে একমত হয়েছেন সমাজের বিশিষ্টরা।
ভাষাবিদ পবিত্র সরকার এবিষয়ে বলেন, 'অনেকসময় দেখা যায় বাঙালিরাই তাঁদের দোকানের সাইনবোর্ড ইংরেজি ভাষায় লিখছেন। অন্য কোনও ভাষায় লিখতেই পারে। তাতে কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু তার সঙ্গে বাঙলায় অন্তত নামটা লেখা হোক।' রাজ্যে অতীতেও এই দাবি তোলা হয়েছিল। জানিয়েছেন সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছেন, এর আগে তিনি এবং আরেক সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এই বিষয়ে আন্দোলন করেছিলেন। তাঁর কথায়, 'একটা সময় আমি আর সুনীল এই নিয়ে আন্দোলন করেছিলাম। আমি যদিও রাস্তায় নামিনি কিন্তু সুনীল নেমেছিল। দাবি ছিল প্রত্যেকটি সাইনবোর্ডে বাংলা যেন আবশ্যিকভাবে থাকে। হিন্দি বা অন্য ভাষা থাক, কোনও অসুবিধা নেই। কিন্তু বাংলাটা যেন অবশ্যই থাকে। কিন্তু সেটা নিয়ম বা আইন করে করা যায়নি। বাঙলা ভাষাকে মর্যাদা দিতে এটা হওয়া উচিত বলেই আমি মনে করি। একইসঙ্গে আমি মনে করি প্রাথমিক স্তরে প্রতিটি স্কুলে বাংলা ভাষা যেন আবশ্যিক হয়। অন্তত অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। দেশে অনেক রাজ্য আছে যেখানে সেখানকার স্থানীয় ভাষা কিন্তু শেখাটা আবশ্যিক।'

বাঙালি হিসেবে গর্ব এবং সেখানে বাংলা ভাষার স্থান, যা জানাতে গিয়ে সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ কুণাল ঘোষ দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়েছেন 'দোকানের নাম অন্য কোনো ভাষায় থাকুক। আপত্তি নেই। কিন্তু সেটার সঙ্গে বাংলায় লেখা নামটাও যেন অবশ্যই থাকে। এটাই আমার মতামত।'
ভাষা, সাহিত্য ও রাজনৈতিক জগতের লোকেদের সঙ্গে এবিষয়ে এগিয়ে এসেছেন চিকিৎসা ও ক্রীড়া জগতের ব্যক্তিত্বরাও। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ ইন্দ্রনীল বিশ্বাস জানান, 'অন্য ভাষা থাকুক। কিছু অসুবিধা নেই। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে বাংলাতেও যেন নামটা থাকে।' একই মত পোষণ করেন প্রখ্যাত প্রাক্তন ফুটবলার নিমাই গোস্বামী। তিনি জানান, 'অবশ্যই থাকা উচিত বাঙলা ভাষায় লেখা নাম। খেলার সুবাদে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে গিয়ে দেখেছি সেখানে কিন্তু সেই রাজ্যের স্থানীয় ভাষায় দোকান বা প্রতিষ্ঠানের নাম রয়েছে। আমাদের রাজ্যে ইংরেজি বা অন্য ভাষায় থাকতেই পারে। কিন্তু তার সঙ্গে বাংলা ভাষাতেও যেন নামটা লেখা হয়।'
