আজকাল ওয়েবডেস্ক: অনাবৃষ্টির প্রকোপ উত্তরবঙ্গের চা শিল্পে। অন্য বছরের তুলনায় এবছর কিছুটা আগে বর্ষা দেখা দিলেও শ্রাবণ মাসে আর সেভাবে বর্ষা হচ্ছে না। আর সেজন্যই চিন্তার মেঘ জমা হয়েছে চা বাগানের আকাশে। উদ্বিগ্ন মালিক থেকে শ্রমিক, দু'পক্ষই।
যদি বৃষ্টির হিসাবে ধরা হয় তবে আদর্শ চা উৎপাদনে প্রয়োজন হয় বছরে ১৫০ থেকে ২০০ সেন্টিমিটার বৃষ্টি। কিন্তু এবছরের হিসেবে এখনও পর্যন্ত দেখা গিয়েছে একমাত্র কালিম্পং জেলা ছাড়া বাকি সব জায়গাতেই বৃষ্টি কম হয়েছে। শেষ সপ্তাহে দার্জিলিং জেলায় বৃষ্টির পরিমাণ সাধারণের চেয়ে ৪৩ শতাংশ, জলপাইগুড়িতে ৫৯ শতাংশ, আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহারে জেলায় ৮০ শতাংশ কম হয়েছে। কালিম্পং ছাড়া আর কোথাও পরিমাণ মতো বৃষ্টি হয়নি। প্রয়োজনীয় বৃষ্টির এই অভাবটা যত বাড়ছে ততই ধাক্কা খাচ্ছে চা উৎপাদন। যে কারণে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত সকলেই।
আরও পড়ুন: ‘আমিষ’ দুধ ভারতে বিক্রি করতে চায় আমেরিকা! কী সেই তরল, কীভাবে উৎপাদন করা হয়, খাওয়া স্বাস্থ্যকর তো?
স্বাদের হিসেবে দেখতে গেলে গোটা পৃথিবীতে সবচেয়ে ভালো স্বাদের চা উৎপাদন হয় দার্জিলিংয়ে। এর সবচেয়ে বড় কারণ দার্জিলিং জেলার ভৌগলিক অবস্থান। প্রকৃতি নিজেই এই ভালো স্বাদের চা উৎপাদনের সহায়ক। পাহাড়ের ঢাল, পর্যাপ্ত বৃষ্টি এবং জল জমতে না পারা, যা বছরের পর বছর ধরে সুস্বাদু চা উৎপাদনে দার্জিলিংকে এগিয়ে রেখেছে। কিন্তু এবছরের পরিস্থিতি আলাদা।

জানা গিয়েছে, অন্যান্য বছরের তুলনায় কম বৃষ্টিপাতের জন্য এবং রোদের প্রখর তাপে চা পাতা জ্বলতে শুরু করেছে। প্রতিদিন বিকল্প উপায়ে বাগানে জল দেওয়ার কাজ চলছে। কিন্তু পরিমাণ মতো জল দিতে হিমশিম খাচ্ছে চা বাগানগুলি। সমতলের অবস্থা আরও করুণ। মাটিগাড়া, নকশালবাড়ি, বাগডোগরা, ওদলাবাড়ি, মালবাজার-সহ আলিপুরদুয়ার পর্যন্ত বিস্তৃত প্রায় ২০০টি চা বাগানের পরিস্থিতি জলের অভাবে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। বড় বাগানে জল দেওয়ার জন্য পাম্প ও প্রয়োজনীয় পাইপের ব্যবস্থা থাকলেও ছোট বাগান যেমন এক বিঘা থেকে ১০ বিঘার মতো জমিতে তৈরি হওয়া বাগানগুলিতে সমস্যা তৈরি হয়েছে।
আরও পড়ুন: এক টাকাও কর দিতে হয় না এই দেশগুলিতে, যা উপার্জন করবেন পুরোটাই আপনার
নকশালবাড়ি এলাকার চা উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত আনন্দ রায় জানান, 'বাপ-দাদাদের সঙ্গে চা চাষের সঙ্গে যুক্ত রয়েছি প্রায় ২৫ বছর। আমার চার বিঘা জমিতে বাগান আছে। অন্য বছরের এই সময় বাগান ভরে যায় সবুজ চা পাতায়। কিন্তু এবছর বৃষ্টি নেই। শুধু রোদ আর রোদ। আর যেদিন বৃষ্টি হচ্ছে সেদিন শুধু জোরালো বৃষ্টি। একদিকে ক্ষরা অন্যদিকে জোর বৃষ্টির জন্য চা বাগানের অবস্থা খুবই খারাপ। জলবায়ুর এই এমন খামখেয়ালি অবস্থায় মনে হচ্ছে পরিবার নিয়ে পথে বসতে হবে।'
বাগডোগরার একটি চা বাগানের কোয়ালিটি ম্যানেজার তিরঞ্জন ফুকার জানিয়েছেন, 'শুধু আমাদের বাগান নয়। গোটা উত্তরবঙ্গ জুড়েই এই অবস্থা চলছে। কৃত্রিমভাবে বাগানে জল দেওয়ার কাজ চলছে। যার জন্য ব্যয় বাড়লেও প্রতিযোগিতার বাজারে চা পাতার দাম কিন্তু বাড়েনি। ফলে ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। তরাই ও ডুয়ার্সের সমস্ত চা বাগানের ক্ষতি হিসাব করলে সেটা পৌঁছবে কয়েকশো কোটি টাকায়। এটা যেমন চা শিল্পের জন্য ক্ষতি তেমনি রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের জন্যও ক্ষতি। আর সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ চা বাগানের শ্রমিকরা।'
