আজকাল ওয়েবডেস্ক: শ্রাবণ মাসের শুক্লা ষষ্ঠী তিথিতে পালিত হয় লোটন বা লুণ্ঠন ষষ্ঠী ব্রত, যা সন্তানের মঙ্গল, দীর্ঘায়ু ও শ্রীবৃদ্ধির কামনায় পালন করেন মা ও দিদিমারা। বাংলার বারো মাসে তেরো পার্বণের মধ্যে এটি এক গুরুত্বপূর্ণ লৌকিক উৎসব। লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, একবার মা ষষ্ঠীর সোনার গয়না ‘লোটন’ চুরি হয়ে যায়। সেই কাহিনি থেকেই এই ব্রতের নাম হয় ‘লুন্ঠন’ বা ‘লোটন’ ষষ্ঠী। আবার অনেকে বলেন, রাজা প্রিয়ব্রত এই ব্রত করে মৃত সন্তানকে জীবিত করে তোলেন। সেই থেকে এই ব্রতের মাহাত্ম্য আরও বেড়ে যায়।
এ বছর ৩০ জুলাই, বুধবার, পালিত হবে এই ব্রত। ব্রতের মূল উদ্দেশ্য সন্তানদের সর্বাঙ্গীন মঙ্গল। এই দিনে ব্রতীরা খুব ভোরে উঠে স্নান সেরে শুদ্ধবস্ত্র পরেন—বিশেষত হলুদ রঙের পোশাক পরা শুভ বলে মনে করা হয়। তারপর ষষ্ঠী দেবীর আসন পাতার আগে পুজোস্থল পরিষ্কার করে আলপনা দেওয়া হয়। পুজোর উপকরণ হিসেবে রাখা হয় আতপচাল, গুড়ের পিঠে, ক্ষীরের নাড়ু, আখের গুড়, ডাব, ঘি, ফল, ফুল, মিষ্টি, ঝিঙে ও কড়াই। বছরের মধ্যে শ্রাবণ মাসে এই ব্রত পালন বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। এবছর ৩০ জুলাই বুধবার দিনটি লোটন ষষ্ঠী হিসেবে নির্ধারিত। সাধারণত এই দিনে ব্রতীরা খুব ভোরে উঠে স্নান সেরে হলুদ বা পরিষ্কার শুদ্ধ পোশাক পরে থাকেন। পুজোর আগে বাড়ির নির্দিষ্ট জায়গা পরিষ্কার করে আলপনা দিয়ে সাজানো হয়।
আরও পড়ুন: নস্টালজিয়াকে পুঁজি করে কোটি টাকার মাসিক ব্যবসা! তাক লাগিয়ে দিলেন এই যুগল!
ব্রতের বিশেষ রীতি অনুযায়ী, ৭ বা ৯টি নাড়ু গোবর মাখিয়ে মাটিতে ফেলে দিতে হয় এবং পরে তা চুল দিয়ে মুছে তুলে রাখা হয়। এটি সন্তানদের যত্ন ও সুরক্ষার প্রতীক। ব্রতকালে উপবাস রাখার রীতি রয়েছে। দিনের বেলায় লুচি খাওয়া গেলেও ভাত বা চালজাত খাবার একেবারে নিষিদ্ধ। মুসুর ডাল, পেঁয়াজ, রসুন, মাছ, মাংস ও যে কোনও ধরনের নেশাজাতীয় পদার্থ থেকেও বিরত থাকতে হয়। রাতে ফল বা মিষ্টি খেয়ে ব্রতভঙ্গ করা যায়। ডাবের জল পান করা যেতে পারে।
ব্রত পালনকালে ব্রতকথা পাঠ বা শ্রবণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেকের মতে, ব্রতকথা না পড়লে বা না শুনলে পুজো সম্পূর্ণ হয় না। ব্রতের পর প্রসাদ বিতরণ করা হয়, বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে। মনে করা হয়, এতে সন্তানের উন্নতি ও সংসারের শান্তি নিশ্চিত হয়। যিনি ব্রত পালন করছেন তিনি নিজে পড়তেও পারেন, কিংবা অন্য কেউ পড়লেও চলবে, কিন্তু শোনা আবশ্যক। এই ব্রতের পর মিষ্টি ও ফল দিয়ে সকলকে, বিশেষত শিশুদের, প্রসাদ বিতরণ করার রীতি রয়েছে।
জ্যোতিষবিশারদ ও লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, নিষ্ঠা সহকারে লোটন ষষ্ঠী পালনে সংসারে অভাব দূর হয়, সন্তানের জীবনে আসে সৌভাগ্য ও সুস্থতা। তাই এই ব্রত শুধু ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং মাতৃত্বের এক গভীর, আধ্যাত্মিক প্রকাশ। জ্যোতিষ বিশারদদের মতে, নিষ্ঠা সহকারে এই ব্রত পালনে সংসারে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি আসে। সন্তানদের জীবনে আসে উন্নতি ও কল্যাণ। তাই বাঙালি মায়েদের কাছে লোটন ষষ্ঠী শুধু একদিনের পুজো নয়, এক গোপন আশীর্বাদ ও প্রার্থনার নাম।
