আজকাল ওয়েবডেস্ক: মুম্বইয়ের ব্যস্ত শহুরে জীবনের মাঝে ছোট্ট এক ক্যাফে—মাত্র ১২ জন বসার জায়গা। অথচ সেখান থেকেই প্রতিদিন তৈরি হয় ৮০০টিরও বেশি ডোসা। মাসিক আয় এক কোটি টাকা! এই চমকপ্রদ ব্যবসার নেপথ্যে রয়েছেন কর্ণাটকের আখিল আইয়ার ও শ্রেয়া নারায়ণ। তাঁদের প্রতিষ্ঠিত 'বেন্নে' ক্যাফে এখন রীতিমতো ব্র্যান্ড, যার বার্ষিক আয় ১২ কোটি টাকারও বেশি। এই সাফল্যের শুরুটা হয়েছিল এক সহজ অনুভূতি থেকে—বাড়ির মতো একটা গরম, মাখনভরা দাভনগেরে স্টাইলের ডোসার জন্য আকুলতা। কিন্তু মুম্বইয়ের কোন রেস্তোরাঁতেই সে স্বাদ মেলেনি। তখনই তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন, নিজেরাই শুরু করবেন এমন একটি জায়গা, যেখানে 'ঘরের স্বাদ' হবে আসল আকর্ষণ। কোনো রেস্তোরাঁ চালানোর অভিজ্ঞতা ছিল না, মূলধনও ছিল অল্প। কিন্তু ছিল একগুঁয়েমি, সততা আর স্বাদকে ঘিরে আবেগ। সেই জায়গা থেকেই জন্ম নেয় ‘বেন্নে’।

বেন্নের ডোসা মেনু বেশ সীমিত, এবং অধিকাংশ পদই ২৫০ টাকার মধ্যে। আজকাল অধিকাংশ স্টার্টআপ যেখানে ট্রেন্ডের পিছনে ছুটছে, সেখানে বেন্নে মন দিয়েছে একটিমাত্র প্রোডাক্টকে নিখুঁত করে তোলায়। শুধু ডোসাই নয়, সঙ্গে থাকছে উচ্চ মার্জিনের ফিল্টার কফি, ঘি পডির মতো পদও, যা ক্রেতাদের বারবার ফিরিয়ে আনে। খাবারের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা স্মৃতি তাঁদের আসল সম্পদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একবার বিরাট কোহলি ও অনুষ্কা শর্মা আগাম নোটিশ ছাড়াই এই ক্যাফেতে চলে আসেন। ডোসা খেয়ে অনুষ্কা বলেছিলেন, "এটা আমার ছোটবেলার কথা মনে করিয়ে দিল।" এমন স্মৃতি ও নস্টালজিয়ার জোরেই তৈরি হয়েছে 'বেন্নে'-র নিজস্ব অবস্থান। এই গল্প আমাদের দেখায়, সব সময় নতুন আইডিয়ার প্রয়োজন হয় না। প্রয়োজন হয় একটা সত্যিকারের অনুভব, মানের প্রতি অনমনীয় নিষ্ঠা, আর ছোট পরিসর থেকে সাহসের সঙ্গে শুরু করার মানসিকতা। ‘বেন্নে’-র সাফল্য নিঃসন্দেহে আজকের তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য এক শিক্ষণীয় উদাহরণ।

আরও পড়ুন: বাঙালি শ্রমিককে বাংলাদেশী বলে দেগে দিয়ে দিল্লি পুলিশের নির্মমতা ও জবরদস্তির অভিযোগ, তৃণমূলের পাশে দাঁড়িয়ে সাংবাদিক বৈঠকে মালদার পরিবার

‘বেন্নে’-র মতো অভিনব ব্যবসার সাফল্যের পেছনে রয়েছে গভীর সাংস্কৃতিক উপলব্ধি ও মানসম্পন্ন পণ্যের প্রতি অবিচল প্রতিশ্রুতি। তারা ট্রেন্ডের পেছনে না ছুটে একটি পরিচিত স্বাদের উপর ভরসা রেখে গ্রাহকের আবেগকে ছুঁয়েছে। সীমিত মেনু, উচ্চ গুণমান ও দ্রুত পরিবেশনার মাধ্যমে তারা প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক ক্রেতাকে আকর্ষণ করছে। এই ধরনের ব্যবসা দেখায়, স্থানীয় স্মৃতি ও অভিজ্ঞতা যদি সঠিকভাবে উপস্থাপিত হয়, তবে তা বৃহৎ বাণিজ্যে পরিণত হতে পারে। ছোট পরিসরে শুরু করেও উদ্ভাবনী চিন্তা ও একাগ্রতাই পারে একটি ব্যবসাকে তুঙ্গে পৌঁছে দিতে।

‘বেন্নে’-র সাফল্য প্রমাণ করে যে একটি নির্দিষ্ট পণ্যের উপর ফোকাস রেখে গভীরতা তৈরি করাই আজকের প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকার মূল চাবিকাঠি। তাঁরা ডোসার স্বাদে আঞ্চলিক নস্টালজিয়া ও ঘরোয়া অনুভূতিকে এমনভাবে ফিরিয়ে এনেছেন, যা শহুরে জীবনে বিরল। এই আবেগকে ব্যবহার করেই তাঁরা গড়ে তুলেছেন এক বিশ্বস্ত ক্রেতা-ভিত্তি। এছাড়া, উচ্চ মার্জিনযুক্ত পণ্য যেমন ফিল্টার কফি ও ঘি পডি যুক্ত করে আয় বাড়িয়েছেন। সীমিত আসন ও খরচে বেশি সংখ্যক অর্ডার গ্রহণযোগ্য করার মাধ্যমে তাঁরা দেখিয়েছেন, কম জায়গা থেকেও কৌশলী মডেল গড়ে তুললে আয় ও পরিচিতি দুটোই পাওয়া সম্ভব।