আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিলুপ্ত প্রাণী ফিরিয়ে আনার প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করা মার্কিন জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি কোলসাল বায়োসায়েন্সেস জানিয়েছে, তারা ডোডো পাখিকে ফেরানোর পথে বিশাল সাফল্য অর্জন করেছে।


এই প্রতিষ্ঠানটি ঘোষণা করে যে তাদের গবেষক দল সফলভাবে পিজিয়নের প্রাইমোর্ডিয়াল জার্ম সেলস বা প্রজনন পূর্ববর্তী কোষ পরিবর্তনে সক্ষম হয়েছে। এটাই প্রথমবার মুরগি ও হাঁসের বাইরে অন্য কোনও পাখির ক্ষেত্রে এমন সাফল্য এল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই উন্নতি কেবল পাখি-জেনেটিক্স নয়, পুরো ডি-এক্সটিঙ্কশন বিজ্ঞানের ক্ষেত্রেই যুগান্তকারী পদক্ষেপ।


কোলসালের সহ–প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও বেন ল্যাম বলেন, “এখন পর্যন্ত মাত্র তিনটি পাখি প্রজাতির ক্ষেত্রে এই নতুন কাজটি করা সম্ভব হয়েছে। এবার পায়রার ক্ষেত্রেও তা করা গেছে। এটি অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়া, অথচ আমরা মাত্র ১৮ মাসে তা অর্জন করেছি। এটি ডোডো ফিরিয়ে আনার জন্য এক বিশাল প্রযুক্তিগত অগ্রগতি।”

আরও পড়ুন: জ্বর কমাতে কাজ করছে না প্যারাসিটামল? কোন পরামর্শ দিলেন চিকিৎসকরা


এই সাফল্য তাদেরকে নতুন আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে। ল্যাম জানিয়েছেন, এটি  ছাড়া আমরা বলতে পারতাম না ডোডো ফিরিয়ে আনতে ২০ বছর লাগবে না ৩০ বছর। কিন্তু এখন আমরা নিশ্চিত, আগামী ৫–৭ বছরের মধ্যে ডোডোকে দেখতে পাব। আশা করছি, এডিটিং প্রক্রিয়ায় অগ্রগতি হলে সময় আরও কম লাগতে পারে।”


কোলসাল জানায়, তারা আরও ১২০ মিলিয়ন ডলার অর্থা পেয়েছে। ফলে তাদের মোট তহবিল দাঁড়িয়েছে ৫৫৫ মিলিয়ন ডলার এবং কোম্পানির মোট অর্থের পরিমান ছুঁয়েছে ১০ বিলিয়ন ডলার। এই অর্থে তারা তাদের জিন সম্প্রসারণ, জিনোম সিকোয়েন্সিং বাড়ানো এবং ডোডো ছাড়াও অন্যান্য প্রাণীদের সংরক্ষণ কর্মসূচি শুরু করছে।


ডোডোর পাশাপাশি কোলসালের ডায়ার উলফ প্রকল্পেও অগ্রগতি ঘটেছে। তিনটি নেকড়ে—রোমুলাস, রিমুস ও খালিসি—এখন একটি সুরক্ষিত। এরা বর্তমানে ২,০০০ একর জায়গায় একসঙ্গে বসবাস করছে। তারা এখন আর মানুষের খাওয়ানো খাবারের ওপর নির্ভর করছে না, বরং প্রাকৃতিক দলগত আচরণ যেমন একত্রে শিকার করা শুরু করেছে। কোম্পানির মতে, এটি প্রমাণ করছে যে হাজার বছর আগে বিলুপ্ত প্রাণীর স্বাভাবিক প্রবৃত্তি আবার ফিরে আসতে পারে।


তবে সমালোচকেরা প্রশ্ন তুলেছেন, বিলুপ্ত প্রাণী ফিরিয়ে আনা পশু কল্যাণ, পরিবেশ ও ইকোলজির জন্য কতটা নিরাপদ? কোলসালের প্রধান বিজ্ঞানী ড. বেথ শাপিরো বলেন, “আমরা শুধু ডি-এক্সটিঙ্কশন কোম্পানি নই, বরং স্পিসিজ সংরক্ষণের জন্য প্রযুক্তি উন্নয়ন করছি। একসময় যে প্রাণী এই ইকোসিস্টেমে ভূমিকা রাখত, তাকে ফিরিয়ে আনলে পুরো পরিবেশ আরও সহনশীল হতে পারে।” তিনি ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্কের উদাহরণ টেনে বলেন, সেখানে নেকড়ে ফিরিয়ে আনার পর পুরো ছবিটি পাল্টে গিয়েছে।


কোলসালের প্রতিষ্ঠাতা ল্যাম বলেন, “আমাদের কাজ জটিল, কখনও রোমাঞ্চকর, কখনও ভয় ধরানো। কিন্তু বিজ্ঞানকে আবার জনপ্রিয় করার একমাত্র উপায় হল এই কঠিন আলোচনা সবার সঙ্গে ভাগ করা।”


ডোডো, ডায়ার উলফ, মামথ ও মোয়া—সব মিলিয়ে কোলসালের ডি-এক্সটিঙ্কশন প্রকল্প এখন বৈজ্ঞানিক কল্পনা ও বাস্তব সংরক্ষণকে একত্রিত করছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই যদি মরিশাসে ডোডো পাখি আবার হাঁটে, তবে সেটি শুধু এক প্রজাতির পুনর্জন্ম নয়, বরং বিজ্ঞান ও প্রকৃতি সংরক্ষণের নতুন অধ্যায় রচনা করবে।