আজকাল ওয়েবডেস্ক: খুব বেশি দিন জার্সি স্পনসর ছাড়া থাকতে হল না ভারতীয় ক্রিকেট দলকে। ড্রিম ইলেভেনের জায়গায় এবার টিম ইন্ডিয়ার অফিশিয়াল জার্সি স্পনসর হচ্ছে অ্যাপোলো টায়ার্স। মঙ্গলবার সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এক সিনিয়র বিসিসিআই আধিকারিক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সরকার সম্প্রতি অনলাইন মানি গেমিং প্ল্যাটফর্মগুলিকে নিষিদ্ধ করেছে নতুন বিল পাশ হওয়ার পর। তার জেরেই ড্রিম ইলেভেনের স্পনসরশিপ বাতিল হয়ে যায়। ফলে এশিয়া কাপে জার্সিতে কোনও জার্সি স্পনসর ছাড়াই প্রথম দুটি ম্যাচে নেমেছে টিম ইন্ডিয়া। তবে সেই শূন্যস্থান পূরণ করল অ্যাপোলো টায়ার্স।
একাধিক রিপোর্ট অনুযায়ী, অ্যাপোলো টায়ার্স প্রতি ম্যাচে প্রায় ৪.৫ কোটি টাকা দেবে বিসিসিআই-কে। যা ড্রিম ইলেভেনের দেওয়া ৪ কোটির তুলনায় কিছুটা বেশি। জানা গিয়েছে, এই সংস্থার সঙ্গে মোট তিন বছরের চুক্তি হয়েছে বিসিসিআইয়ের। তিন বছরে বোর্ডের সঙ্গে মোট ৫৭৯ কোটি টাকার চুক্তি করেছে অ্যাপোলো টায়ার্স। আগামী তিন বছরে একাধিক দ্বিপাক্ষিক সিরিজ এবং আইসিসি টুর্নামেন্টে অংশ নেবে ভারতীয় দল। যার মধ্যে রয়েছে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপও। পরিসংখ্যান বলছে, আগামী তিন বছরে মোট ১২১টি ম্যাচ এবং আইসিসি টুর্নামেন্টে ২১টি ম্যাচ কভার করবে বোর্ডের সঙ্গে এই সংস্থার চুক্তি।
এক সিনিয়র বিসিসিআই আধিকারিক জানান, 'অ্যাপোলো টায়ার্সের সঙ্গে চুক্তি সই হয়েছে। খুব শিগগিরিই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হবে।' একাধিক সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, আরও দুটি সংস্থা ক্যানভা এবং জে কে টায়ার্সও টিম ইন্ডিয়ার জার্সি স্পনসর হতে চেয়েছিল। কিন্তু তিন সংস্থার লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত জয়ী হয় অ্যাপোলো টায়ার্স। শোনা যায়, বিড়লা অপটাস পেইন্টসও আগ্রহ দেখিয়েছিল, তবে বিডিং প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে চাননি তারা। অবশেষে অ্যাপোলো টায়ার্সের সঙ্গেই চুক্তি পাকাপাকি হয়েছে। এখন শুধু সরকারি ঘোষণার অপেক্ষা। এশিয়া কাপ চলাকালীন এই ঘোষণা হলে তা ভারতীয় দলের মনোবলকেও উজ্জীবিত করবে বলে মনে করছেন ক্রিকেট মহল।
প্রসঙ্গত, লোকসভায় পাশ হয়ে গিয়েছিল আগেই, রাজ্যসভাতেও পাশ হয়ে যায় ‘দ্য প্রোমোশন অ্যান্ড রেগুলেশন অফ অনলাইন গেমিং বিল, ২০২৫’। সংসদের উচ্চ কক্ষে বিলটি পেশ করেন কেন্দ্রের ইলেকট্রনিক্স এবং তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। বিতর্ক ছাড়াই ধ্বনিভোটে পাশ হয় বিলটি। কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে, বিলটির লক্ষ্য ই-স্পোর্টস এবং ক্যাজুয়াল গেমিংকে উৎসাহিত করা। তবে আসক্তি, আর্থিক ক্ষতি এবং নিরাপত্তা হুমকির উদ্বেগের কারণে অর্থের বিনিময়ে গেমিং এবং গড়াপেটা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সংসদের উভয় কক্ষের অনুমোদনের পর, অনলাইনে অর্থের বিনিময়ে গেমিং অফার করা বা সহায়তাতেও করার জন্য এখন তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং/অথবা এক কোটি পর্যন্ত জরিমানা করা হবে। বিলটিতে অনলাইন অর্থের গেম সম্পর্কিত বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করার এবং ব্যাঙ্ক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে এই জাতীয় যে কোনও গেমের জন্য টাকা স্থানান্তর থেকে বিরত রাখারও চেষ্টা করা হয়েছে।
ড্রিম ইলেভেনের সঙ্গে চুক্তি বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর স্পনসরের খোঁজ শুরু হয় বোর্ডের তরফে। তার আগে বেশ কয়েকটা নতুন নিয়মও চালু করা হয়। জানানো হয়, বিডিংয়ে অংশ নিতে পারবে না কোনও গেমিং সংস্থা এবং ক্রিপ্টোকারেন্সির সঙ্গে যুক্ত সংস্থা। ২০২৫ প্রমোশন এবং রেগুলেশন অফ অনলাইন গেমিং অ্যাক্ট চালু হওয়ার পর ভারতীয় দলের মূল স্পনসরশিপ থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়েছে ড্রিম ইলেভেন। ভারতীয় ক্রিকেটে মাই সার্কেল এবং ড্রিম ইলেভেনের প্রচুর অবদান রয়েছে। টাইটেল স্পনসরশিপের বাবদ ভারতীয় দল এবং আইপিএলে ১০০০ কোটি লগ্নি করে ফেলেছে এই দুই সংস্থা। এবার বিডারদের জন্য নির্দিষ্ট নির্দেশিকা পেশ করে বোর্ড। একটি মিডিয়া বিবৃতিতে জানানো হয়, 'প্রথমত, বিডারদের অনলাইন গেমিং, বেটিং এবং জুয়ার সঙ্গে যোগাযোগ থাকলে হবে না। দ্বিতীয়ত, কোনও ভারতীয় নাগরিককে অনলাইন গেমে না বেটিংয়ে সাহায্য করা যাবে না। তৃতীয়ত, কোনও ভারতীয় নাগরিক বেটিংয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকলে, তাঁকে এবং তাঁর সংস্থাতে কোনও লগ্নি করা যাবে না।'
