আধুনিক জীবনের জাঁতাকালে বিভিন্ন মারণ রোগের মধ্যে সবচেয়ে ভয় ধরাচ্ছে হার্টের অসুখ। ইদানীং অল্প বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর খবর আকছার ভেসে আসছে। কম বয়সে এত বেশি হার্ট অ্যাটাকের কারণ হল হৃদযন্ত্রের বয়স বৃদ্ধি, সম্প্রতি এমন তথ্য খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা। আসলে শরীরের যা বয়স, তার ছেয়ে ঢের বেশি বৃদ্ধ হয়ে পড়ে হার্ট। অর্থাৎ বয়স যাই-ই হোক না কেন, আপনার হৃদযন্ত্রের বার্ধক্যের গতি কিন্তু আরও বেশি। আর হার্ট বুড়ো হলেই কমে যায় তার রক্ত সঞ্চালনের ক্ষমতা। তখন একদিন বড় কোনও লক্ষণ ছাড়াই আচমকা বন্ধ হয়ে যেতে পারে হৃদস্পন্দন। তাই হৃদয়ের সুস্থতার জন্য স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের ওপর জোর দিচ্ছেন চিকিৎসেকরা। যার অন্যতম বড় চাবিকাঠি হল ব্যায়াম।
 
 হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে নিয়মিত ব্যায়ামের বিকল্প নেই, এমন কথা চিকিৎসকেরা বহুদিন ধরেই বলে আসছেন। তবে জানেন কি মাত্র দু’বছর ধারাবাহিকভাবে ব্যায়াম করলে তা শুধু শরীরকেই নয়, হৃদপিণ্ডকেও একেবারে তরুণের মতো করতে করে তুলতে পারে।  নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে এমনি চমকে দেওয়ার মতো তথ্য। 
আরও পড়ুনঃ এক চিমটে এই মশলা কিডনির 'রক্ষাকবচ'! নিয়ম করে কয়েকদিন খেলেই দেখবেন ম্যাজিক
বিশেষজ্ঞদের দাবি, মাত্র দু’বছরের ধারাবাহিক ও সঠিক ব্যায়াম হৃদপিণ্ডকে এতটাই কার্যকরভাবে শক্তিশালী করতে পারে যে তা প্রায় ২০ বছরের বার্ধক্য কমিয়ে দিতে সক্ষম। সাধারণ যারা দীর্ঘদিন ধরে অলস জীবনযাপন করেন তাঁদের বয়সের সঙ্গে সঙ্গে হৃদপিণ্ড দুর্বল হয়ে পড়ে। কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যায়াম করলে দারুণ ফল মিলতে পারে।
 
  গবেষণায় দেখা দেছে, সঠিকভাবে সপ্তাহে অন্তত ৪-৫ দিন মাঝারি থেকে উচ্চমাত্রার ব্যায়াম করলে হৃদপিণ্ডের নমনীয়তা ও কার্যক্ষমতা ফিরে আসে। এই পরিবর্তন শরীরে শুধু রক্তপ্রবাহ বাড়ায় না, বরং হৃদপিণ্ডে রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি ও হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কাও কম করে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যায়াম হৃদপিণ্ডের ধমনীকে নমনীয় রাখে এবং অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ায়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যেসব শিরা-উপশিরা শক্ত হয়ে যায়, নিয়মিত ব্যায়াম সেগুলোকে আবার তরুণ অবস্থার মতো কার্যকর করে তুলতে সাহায্য করে। এর ফলে হৃদযন্ত্র ২০ বছর কম বয়সের মতো শক্তিশালীভাবে কাজ করতে পারে।
চিকিৎসকদের মত, ব্যায়ামের মধ্যে দ্রুত হাঁটা, দৌড়ানো, সাইক্লিং, সাঁতার কিংবা এরোবিক্স হার্ট ভাল রাখার জন্য সবচেয়ে কার্যকর। তবে তারা সতর্ক করেছেন, ব্যায়াম শুরু করার আগে বয়স ও শারীরিক অবস্থার ভিত্তিতে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
নিয়মিত ব্যায়াম শরীরের জন্য উপকারী ঠিকই, তবে অনেক সময় ব্যায়াম করতে গিয়েই অজান্তে হৃদরোগের ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শরীরচর্চার সময় যদি কিছু অস্বাভাবিক উপসর্গ দেখা দেয় তবে সেগুলোকে অবহেলা করলে বড় ধরনের বিপদ ঘটতে পারে। বিশেষ করে ব্যায়ামের সময় হঠাৎ মাথা ঘোরা বা অচেতন ভাব, শ্বাসকষ্ট বা নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা, অস্বাভাবিক দুর্বলতা বা ক্লান্তি, অপ্রত্যাশিত ঘাম, হাত, গলা বা চোয়ালে ব্যথার মতো হার্ট অ্যাটাকের মতো কোনও উপসর্গ লক্ষ্য করলে সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
