আজকাল ওয়েবডেস্ক: টোটো চালিয়ে সামান্য আয়ে বউকে দামি উপহার কিনে দিতে পারছিলেন না। তাই সম্প্রতি একটি বেসরকারি ব্যাঙ্ক থেকে চড়া সুদে বড় অঙ্কের টাকা ধার করেছিলেন মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জ থানার অন্তর্গত মহম্মদপুরের বাসিন্দা বছর পঁয়ত্রিশের সুখেন দাস। স্ত্রীকে কিনে দিয়েছিলেন দামি গয়না এবং অন্য আরও উপহার। কিন্তু এসব সত্ত্বেও দুই সন্তানের মা সুখেনের স্ত্রী বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে তিনবার 'প্রেমিকের' সঙ্গে ঘর ছেড়েছিলেন বলে অভিযোগ। প্রতিবারই নিজের সন্তানদের মুখ চেয়ে সুখেন স্ত্রীকে বুঝিয়ে বাড়ি ফিরিয়ে এনেছিলেন। কিন্তু চতুর্থ বারের জন্য স্ত্রী প্রেমিকের সঙ্গে ঘর ছাড়ার পর স্ত্রীকে হারানোর 'শোকে'  আত্মঘাতী হলেন তিনি। 

বুধবার সকালে রঘুনাথগঞ্জ থানার মহম্মদপুর এলাকায় ঘরের দরজা ভেঙে সুখেনের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করেন তাঁর পরিবারের লোকেরা। আর এরপরই ক্ষোভে ফেটে  পড়েছেন সুখেনের পরিবার এবং তাঁর প্রতিবেশীরা। বারবার স্বামীকে 'ধোঁকা' দিয়ে প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগে সুখেনের স্ত্রীর কঠোর শাস্তি  দাবি করেছেন সকলে। রঘুনাথগঞ্জ থানার পুলিশ একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে বুধবার সুখেনের মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য জঙ্গিপুর হাসপাতালে পাঠিয়েছে।

মৃত সুখেনের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় নয় বছর আগে দেখাশোনা করে বীরভূমের মাড়গ্রাম থানা এলাকার বাসিন্দা এক মহিলার সঙ্গে সুখেনের বিয়ে হয়েছিল। ওই দম্পতির সাত বছরের দুই যমজ কন্যা সন্তান রয়েছে। পরিবারে আর্থিক সচ্ছলতা আনার জন্য সুখেন এলাকায় টোটো চালক হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি বিভিন্ন সময়  কীর্তনের দলে গায়ক এবং বাদক হিসেবেও কাজ   করতেন। 

মৃত সুখেনের ভাগ্নি পিঙ্কি লেট অভিযোগ করেন, “গত কয়েক বছরে আমার মামি কমপক্ষে তিনবার নিজের প্রেমিকের সঙ্গে বাড়ি থেকে পালিয়েছেন।  প্রত্যেকবারই তাঁকে বুঝিয়ে বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।”

বাড়ি ফিরে আসার পর সুখেনের স্ত্রী একাধিকবার পরিবারের সদস্যদের কথা দিয়েছিলেন আর কোনও দিন স্বামীর ঘর ছাড়বেন না। সূত্রের খবর, গত ৪ দিন আগে বীরভূমে মায়ের বাড়িতে যান তিনি। স্বামীকে বলে গিয়েছিলেন সেখানে পুজো দিতে যাচ্ছেন। কিন্তু গত দু’দিন আগে  প্রাতঃভ্রমণে বার হচ্ছেন বলে মায়ের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান তিনি। এরপরই সকলে জানতে পারেন ফের একবার বীরভূমের মিল্কি ডাঙ্গাপাড়া এলাকার বাসিন্দা নিজের পুরনো প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে গিয়েছেন তিনি। বর্তমানে তাঁরা বীরভূমের একটি গ্রামে একসঙ্গে থাকছেন।
 
মৃত ওই যুবকের এক প্রতিবেশী জানান, স্ত্রীকে খুশি করার জন্য সম্প্রতি একটি বেসরকারি ব্যাঙ্ক থেকে প্রায় ৩০ হাজার টাকা দেনা করেছিলেন সুখেন। সেই টাকা দিয়ে স্ত্রীকে গয়না এবং অন্যান্য কিছু জিনিসও কিনে দিয়েছিলেন। কিন্তু তারপরও বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পরে প্রেমিকের সঙ্গে স্ত্রী পালিয়ে যাওয়ায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন সুখেন।
 
মঙ্গলবার রাতে পরিবারের সকলে ঘুমিয়ে পড়লে ঘরের দরজা বন্ধ করে দেন সুখেন। বুধবার সকালে তিনি ঘরের দরজা না খোলায় বাড়ির লোকেরা ধাক্কাধাক্কি করার পর কোনও সাড়াশব্দ না পেয়ে ঘরের দরজা ভেঙে তাঁর প্রাণহীন ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করেন।