আজকাল ওয়েবডেস্ক: শিশুর জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই তার শেখার শুরু। তবে সেই শেখার প্রথম পাঠশালার প্রথম পাঠ কোনও বর্ণমালা নয়, কোনও ছবি বই নয়, বাবা-মায়ের অভিব্যক্তি। নবজাতক যখন মায়ের চোখের দিকে তাকায়, তখনই তার জীবনের প্রথম শিক্ষার সূচনা। মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, শব্দ শেখার আগেই শিশুরা মুখের রেখা, ভ্রুর ভাঁজ, চোখের দৃষ্টি কিংবা ঠোঁটের হাসি থেকে আবেগ পড়তে শেখে। তাই বাবা-মায়ের প্রতিটি অভিব্যক্তিই শিশুর কাছে হয়ে ওঠে এক একটি শিক্ষণীয় বিষয়।
অভিব্যক্তির অভিধান
 
 শিশুরা প্রথমে যে “ভাষা” আয়ত্ত করে, সেটি হল অভিব্যক্তির ভাষা। মায়ের হাসি মানে নিশ্চিন্ত, ভ্রুর কপাট মানে অস্বস্তি, চোখ বড়ো করে তাকানো মানে বিস্ময় এসব সংকেতই শিশুর আবেগ বোঝার প্রাথমিক অভিধান। এই অভিধানই পরবর্তী জীবনে তার সামাজিক যোগাযোগ, আবেগ এবং প্রতিক্রিয়ার ভিত তৈরি করে।
এক মত বিজ্ঞানও
 
 এই প্রসঙ্গে ২০২২ সালে ডেভলপমেন্ট অ্যান্ড সাইকোপ্যাথলজি সাময়িকীতে প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়, যেসব শিশু বাবা-মায়ের কাছ থেকে ইতিবাচক আবেগপূর্ণ পরিবেশ পায়, তারা দ্রুত মুখাবয়ব থেকে আবেগ শনাক্ত করতে শেখে। বিপরীতে, যেসব শিশুর বেড়ে ওঠা নেতিবাচক বা রাগ-ভরা পরিবেশে, তাদের আবেগ বোঝার ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে দুর্বল। বিশেষত, ভয় বা বিষণ্ণতার মতো জটিল আবেগ তারা সহজে চিনতে পারে না।
অন্যদিকে, ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার মনোবিজ্ঞানী ক্যারোলিন সার্নির দীর্ঘমেয়াদি গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুর আবেগগত দক্ষতা গড়ে ওঠে বাবা-মার সঙ্গে তার প্রতিদিনের মুখোমুখি যোগাযোগ থেকে। হাসি বা সহানুভূতিপূর্ণ দৃষ্টি শিশুর মনে যত নিরাপত্তা দেয়, কোনও পাঠ্যবই সেটি দিতে পারে না।
 
 আরও পড়ুন: মধুচক্র চালানোয় অভিযুক্ত অভিনেত্রী অনুষ্কা দাস! সেক্স র্যাকেট থেকে উদ্ধার বাংলা সিরিয়ালের আরও ২ নায়িকা! তুলকালাম মহারাষ্ট্রে
মিররিং বা প্রতিফলনের শিক্ষা
 
 অনেকেই জানেন না, মানব শিশু কেবল মাত্র দু’টি বিষয়ে জন্মগত ভাবে ভয় পায়। উচ্চতা এবং অত্যধিক শব্দ। বাকি সবই তারা আয়ত্ত করে সামনের মানুষটিকে দেখে। মনোবিজ্ঞানে এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় মিররিং। যখন শিশু হাসে আর মা-বাবাও তাকে দেখে হাসেন, তখন শিশুর মনে বার্তা যায়- “আমার অনুভূতি গুরুত্ব পাচ্ছে।” কান্নার প্রতিক্রিয়ায় স্নেহময় মুখের অভিব্যক্তি শিশুকে শেখায়, তার আবেগ বৈধ। এর ফলে শিশুর আত্মবিশ্বাস বাড়ে, গড়ে ওঠে সহানুভূতি এবং সম্পর্ক গড়ার ক্ষমতা।
ভাষার আগেই অভিব্যক্তি
 
 কথা বলার আগেই শিশু শেখে টোন, ছন্দ আর মুখের ভাষা। মায়ের কণ্ঠস্বরের ভরসা, বাবার হাসির উষ্ণতা, কিংবা অবহেলার ঠান্ডা দৃষ্টি- এসবই তার মনে অমোচনীয় ছাপ ফেলে। গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব শিশুর সঙ্গে বাবা-মা নিয়মিত চোখে চোখ রেখে কথা বলেন, তাদের ভাষা শেখার গতি ও আবেগ বোঝার দক্ষতা অন্যদের তুলনায় দ্রুত বিকশিত হয়।
 
 আরও পড়ুন: মধুচক্র চালানোয় অভিযুক্ত অভিনেত্রী অনুষ্কা দাস! সেক্স র্যাকেট থেকে উদ্ধার বাংলা সিরিয়ালের আরও ২ নায়িকা! তুলকালাম মহারাষ্ট্রে
নেতিবাচক সংকেতের প্রভাব
 
 তবে অভিব্যক্তির শিক্ষা সব সময় ইতিবাচক হয় না। যদি শিশু প্রতিদিন রাগান্বিত, ক্লান্ত বা নির্লিপ্ত মুখ দেখে, তবে তার মনে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। মনোবিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন, দীর্ঘ সময় ধরে এ ধরনের অভিজ্ঞতা শিশুর আত্মবিশ্বাস ও সামাজিক বিকাশকে ব্যাহত করতে পারে। পরবর্তী জীবনে সম্পর্ক গড়তে কিংবা আবেগ প্রকাশে তারা সমস্যায় পড়তে পারে।
বাস্তব উদাহরণ
 
 একটি ছোট্ট শিশুর কান্না হঠাৎ থেমে যায় কেবল মায়ের মিষ্টি হাসিতে। আবার বাবার রাগী মুখ দেখে একই শিশু চুপসে যায়। এসব ছোট্ট মুহূর্তই প্রমাণ করে, মুখের অভিব্যক্তি শিশুর জন্য কতটা শক্তিশালী যোগাযোগের মাধ্যম।
আরও পড়ুন: মধুচক্র চালানোয় অভিযুক্ত অভিনেত্রী অনুষ্কা দাস! সেক্স র্যাকেট থেকে উদ্ধার বাংলা সিরিয়ালের আরও ২ নায়িকা! তুলকালাম মহারাষ্ট্রে
 
 সব মিলিয়ে, একথা বলাই যায় যে, শিশুর প্রথম পাঠ্যবই বাবা-মায়ের মুখ। বই পরে আসবে, স্কুল পরে আসবে কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় পরিবারের আবেগপূর্ণ পরিবেশ থেকেই। তাই অভিভাবকের উচিত সন্তানকে যথাসম্ভব ইতিবাচক পরিবেশে রাখা। কারণ এই অভিব্যক্তিগুলোই শিশুর মানসিক বিকাশ, আত্মবিশ্বাস এবং ভবিষ্যতের সম্পর্কের ভিত্তি রচনা করে।
